মিসরে থমথমে পরিস্থিতি : নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে
মিসরে গণহত্যার পর দেশজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী পরিচালিত গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী এই গণহত্যার নিন্দার ঝড় বইছে। মুসলিম ব্রাদারহুড শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। অন্যদিকে সামরিক-সমর্থিত সরকারের মধ্যে বিভাজন প্রকট হয়ে ওঠছে। বৃহস্পতিবার ভোরে কারফিউ প্রত্যাহার করা হলেও প্রধান প্রধান রাস্তায় যানবাহনের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। পুরো দেশে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। রাজধানী কায়রো শান্ত থাকলেও চাপা উত্তেজনার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। বিবিসির সংবাদদাতা খালেদ ইজ্জলারাব কায়রোর ইমান মসজিদ থেকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে শত শত লোক সেখানে সমবেত হয়। তাদের বেশির ভাগই ছিলেন বুধবার নিহতের স্বজন। মসজিদে তখনো সাদা কাপড়ে মোড়া অনেক লাশ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি আমি ৭০টি পর্যন্ত গুণেছি। তারপর গণনা বন্ধ করে দিয়েছি। আমার মনে হয়েছে, আমি অর্ধেক লাশও গুণিনি।’ তিনি বলেন, স্বজনরা কোথায় তাদের প্রিয়জনদের সমাহিত করবেন, তা নিয়ে সমস্যায় ছিলেন। তিনি বলেন, ‘নিহতদের স্বজনেরা আমাকে বলেছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সংবলিত ডেথ সার্টিফিকেট তাদের দেয়নি।’ কায়রো থেকে বিবিসির সংবাদদাতারা জানান, এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুর্ভাবনা নিয়ে মিসরের জনগণ তাদের দিন শুরু করেছে। মুসলিম ব্রাদারহুড কায়রোর দুটি সমাবেশস্থল থেকে সরে গেলেও তারা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলেও তাদের সমাবেশ করার কথা ছিল। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন বলেছেন, মুসলিম ব্রাদারহুড সম্ভবত প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবে। মিসরে তাদের ক্ষমতায় আসতে ৮০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর এখন তারা মনে করছে, তাদেরকে অন্যায়ভাবে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কায়রোয় মুসলিম ব্রাদারহুডের দুটি অবস্থানে বুধবারের সেনাবাহিনী পরিচালিত গণহত্যায় অন্তত এক হাজার নিহত ও ১০ হাজার আহত হয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুড দাবি করেছে, নিহতের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। তবে মিসরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্তত ৫২৫ জন নিহত ও প্রায় তিন হাজার ৭১৭ জনের আহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তিন সাংবাদিকও নিহত হয়েছে। সরকার বলছে, সারা দিনের সহিংসতায় পুলিশের ৪৩ জন সদস্যও নিহত হয়েছে। এক মাস সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে বলে নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে। এক মাস জরুরি অবস্থাও জারি থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে পুনর্বহালের দাবিতে জনতা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিল। সেনাবাহিনী তাদের সরিয়ে দিতে সেখানে হামলা চালায়।