ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার প্রতীক কিশোরী মালাক

Malakভারি অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত এক ইসরায়েলী সেনাকে পাথর ছুঁড়ে মারা ও ছুরি দিয়ে আঘাত করতে যাওয়ার ‘অভিযোগে’ ফিলিস্তিনের ১৪ বছর বয়সী স্কুলপড়ুয়া কিশোরী মালাক আল-খতিবকে দুই মাসের কারাদণ্ডসহ দেড় হাজার ডলার জরিমানা করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিরা কীভাবে শোষণ-নিপীড়ন চালাচ্ছে—এ ঘটনার মধ্য দিয়েই তা প্রকাশ পাচ্ছে। তারা বলছে, দণ্ড পেয়ে কারাবন্দী থাকা এই কিশোরী ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। শাস্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে। এর বিরোধিতা করে ইতিমধ্যে জাতিসংঘের কাছে চিঠি লিখেছে ফিলিস্তিন।
ওই চিঠিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইসরায়েল রাতের আঁধারে শিশুদের ধরে নিয়ে যাওয়ার যে অভ্যাস গড়ে তুলেছে, তা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
রামাল্লার কাছে বেইতিন শহরে কিশোরী মালাকের পরিবারের বাস। মালাকের ৫০ বছর বয়সী মা খাওলা আল-খতিব বলেন, ‘এই শীতের মধ্যে গরম কাপড় ছাড়া ডাণ্ডাবেরি পরিয়ে আমার মেয়েটিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ অবস্থা দেখে মা হিসেবে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। আমি তার জন্য বাড়ি থেকে শীতের কাপড় নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু বিচারকের বাধার কারণে আমি পোশাকটি আমার মেয়েকে দিতে পারিনি।
মানবাধিকার সংগঠন ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল প্যালেস্টাইনের (ডিসিআই প্যালেস্টাইন) হিসাব মতে, পাথর নিক্ষেপের অভিযোগে দখলকৃত পশ্চিম তীর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিবছর গড়ে হাজার খানেক শিশুকে আটক করে। তবে মালাক মেয়ে হওয়ায় বিষয়টি গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মনকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়।
রামাল্লাভিত্তিক প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনার্স ক্লাব নামের একটি সংগঠনের হিসাবে, ইসরায়েলের কারাগারে ২০০ ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোর বন্দী আছে। এর মধ্যে মাত্র চারটি মেয়ে আছে। এদের মধ্যে মালাকের বয়সই সবচেয়ে কম। সংগঠনটির মুখপাত্র আমানি সারাহনা বলেন, ইসরায়েলের কারাগারগুলোতে সাড়ে ছয় হাজারের মতো ফিলিস্তিনি আছে।
পুরো ঘটনায় ক্ষুব্ধ মালাকের বাবা আলী আল-খতিব বলেন, অস্ত্রশস্ত্রে সমৃদ্ধ ইসরায়েলের মতো একটি ক্ষমতাশীল রাষ্ট্র কেন তার ১৪ বছরের মেয়েকে ধরে নিয়ে গেল, তিনি তা বুঝতে পারছেন না। ইসরায়েলের সেনারা বলছে, আমার মেয়ে এক সেনাসদস্যকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করেছে। ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একটি বাহিনীর সেনার বিরুদ্ধে কোনো কিশোরীর পক্ষে কি এমন করা সম্ভব? তাঁর দাবি, গত ৩১ ডিসেম্বর বেতিনে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর মেয়েকে ইসরায়েলি বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে।
তবে সামরিক আদালতে মালাকের বিরুদ্ধে পাঁচজন সেনা কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন, মালাক ইসরায়েলের সেনা বহরের গাড়িতে নিক্ষেপের জন্য পাথর তুলেছিল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আঘাত করার জন্য ছুরি নিয়ে যাচ্ছিল।
ইসরায়েলে ১২ বছরের কম বয়সীদের শিশু বলা হয়। এতে বিচার করার সময় মালাক শিশু হিসেবে বিবেচিত হয়নি। যদিও ইউনিসেফের হিসাবে, ১৮ বছর পর্যন্ত ছেলে বা মেয়ে শিশুর মর্যাদা পায়। ইসরায়েল এর তোয়াক্কা না করেই ফিলিস্তিনের শিশুদের আটক, গ্রেপ্তার ও শাস্তি দিয়ে থাকে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনের শিশুদের প্রতি অমানবিক আচরণের জন্য ইসরায়েলের সমালোচনা করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব শিশুকে মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয় এবং শারীরিক নিপীড়ন, নির্জন কারাবাস ও যৌননিপীড়ন করা হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button