বাংলাদেশে মিথ্যা মামলার শিকার কিক বক্সার আলী জ্যাকো
বাংলাদেশ থেকে বক্সার আনতে গিয়ে মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন পাঁচবারের বিশ্ব কিক বক্সিং চ্যাম্পিয়ান এ আলী জ্যাকো। গত ৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ সময় তিনি তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার নথিপত্র দেখিয়ে বলেন, কোনো ধরনের যাচাই বাছাই ছাড়া এ ধরনের সাজানো মামলায় সমন জারি করা দুঃখজনক। বাংলাদেশে মিথ্যা মামলার হয়রানি বন্ধ করতে বাংলাদেশ ল’ রিফর্ম সোসাইটি (বিএলআর) নামে একটি প্রেশার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক এই সাবেক বক্সার।
আলী জ্যাকো দাবি করেন, বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সেক্রেটারি এবং তাঁর এলাকা ছাতকের আব্দুল দয়াস নামে এক ব্যক্তি যড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করছেন। আব্দুল দয়াসের সাথে ছাতকের একটি দোকানের মালিকানা নিয়ে তাঁর পরিবারের বিরোধ আছে। অন্যদিকে বক্সার বাছাই করতে গিয়ে ফেডারেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কুদ্দুসের সাথে তাঁর দুরত্ব সৃস্টি হয়। এর সুযোগ নিয়ে আব্দুল দয়াস সেক্রেটারি কুদ্দুসের সাথে হাত মিলিয়েছে বলে দাবি জ্যাকোর।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত দুই বছর যাবত আলী জ্যাকো বাংলাদেশ থেকে বক্সার এনে ব্রিটেনে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। দেশের প্রতি ভালবাসা থেকে সম্পূর্ণ নিজের খরচে তিনি এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি বক্সার বাছাই এবং তাদের ব্রিটেনে আনার আনুসঙ্গিক কাজ সারতে তিনি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে যান। বক্সার বাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সহায়তায় একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। আলী জ্যাকো ছয়জন বক্সারকে বাছাই করেন। কিন্তু ফেডারেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কুদ্দুস বক্সার দেয়ার বিনিময়ে আলী জ্যাকোর কাছে টাকা দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আলী জ্যাকো সাব বাংলাদেশে টাকা ছাড়া কিছু নড়ে না’। এক পর্যায়ে বক্সারদের পরিবার থেকে টাকা আদায়ের প্রস্তাব দেন কুদ্দুস খান। এসব প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আলী জ্যাকোর সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
আলী জ্যাকো বলেন, ঐ ঘটনার পর বাংলাদেশে তাঁর নামে দুটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ৭ ডিসেম্বর দায়ের করা একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে আদম পাচারের ফাঁদ পেতে অর্থ আত্মসাত এবং পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ আনা হয়। জনৈক আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি এই মামলাটি করেন। গত ২৫ ডিসেম্বর ওই মামলায় জামিন নিয়ে তিনি ৭ জানুয়ারি লন্ডনে ফিরে আসেন। কিন্তু গত ৯ জানুয়ারি তার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে জনৈক আব্দুল সুমন আরেকটি মামলা দায়ের করেন। আলী জ্যাকো বলেন, এসব মামলার বাদি এবং তাদের অভিযোগের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।
মামলার বাদি তার অভিযোগের স্বপক্ষে সেসব প্রমাণাধী জমা দিয়েছেন সেসবের অনুলিপি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহ করেন আলী জ্যাকো। এতে দেখা যায়, আলী জ্যাকোর নামে নোটারি পাবলিকে দেয়া সাক্ষরের সাথে তার পাসপোর্টের সাক্ষরের কোনো মিল নেই। এছাড়া মেডিকেল সার্টিফিকেট এবং ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে যে ঘটনার তারিখ ঘষামাজা করা হয়েছে তা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা ভাইয়ের নাম এবং নোটারি পাবলিকে উল্লেখ করা ভাইয়ের নামে কোনো মিল নেই। শুধু মামলার সাথে জমা দেয়া কাগজ পত্র যে ভুয়া তা নয়; তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছেন যে, মামলায় বাদির যে ঠিকানা দেয়া হয়েছে সেই ঠিকানায় বাদির নামে কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই।
আলী জ্যাকো বলেন, মানুষে মানুষে বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু আইন এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট মামলা দিয়ে যদি অন্যকে হয়রানি করার সুযোগ দেয়া কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। তিনি বলেন, সাধারণের চোখে দৃশ্যমান এত অসংগতিপূর্ণ একটি মামলায় সমন জারির আগে ঘটনার নূনতম সত্যতা যাচাইয়েরও প্রয়োজনবোধ করা হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যারা এসব মামলা গ্রহণ করেন কিংবা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন তারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
এত ঝামেলা করে বক্সার আনার প্রয়োজন কীস এমন প্রশ্নের উত্তরে আলী জ্যাকো বলেন, সমাজের কিছু দুষ্ট লোকের কারণে কোনো ভাল উদ্যোগ থেকে পিছু হটতে তিনি রাজি নন। তিনি চাইলে ব্যক্তিগতভাবে বক্সার বাছাই করে নিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু ফেডারেশনের মাধ্যমে আনার কারণ হল, ব্রিটেনে ভাল করতে না পারলেও যাতে ওইসব বক্সার ফেডারেশনে ফিরে গিয়ে তাদের পেশা চালিয়ে যেতে পারে।
আলী জ্যাকো বলেন, তিনি কোনো কিছু পাওয়ার জন্য নয়, তাঁর যেহেতু সুযোগ আছে সেজন্য সেই সুযোগটি বাংলাদেশের বক্সারদের জন্য কাজে লাগাতে চেয়েছেন। দেশের প্রতি ভালবাসা থেকে তার এই প্রচেষ্টা। ফেডারেশনের সেক্রেটারি কুদ্দুস খানের সাথে গত দুই বছরের ইমেইল চালাচালির অনুলিপি দেখিয়ে এই ক্রীড়াবিদ বলেন, তিনি কখনো কোনো অর্থের কথা বলেননি। সবসময় বলেছেন, বক্সার আনার বিমানভাড়াসহ ব্রিটেনে অবস্থান এবং আনুসঙ্গিক সকল খরচ তিনি নিজে বহন করবেন। আলী জ্যাকো বলেন, বক্সার আনার নামে যদি তিনি আদম ব্যবসা করতেন, তাহলে তিনি বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন এবং ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করতেন না। তিনি নিজ এলাকা সিলেট থেকে লোক নিয়ে আসতে পারতেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সেও ডিজি মুহিব চৌধুরী, ভয়েস ফর জাস্টিসের কে এম আবু তাহের চৌধুরী, গ্রেটার সিলেট ডেভেলাপমেন্টের প্রেডিডেন্ট প্রমুখ। তারা আলী জ্যাকোর বিরুদ্বে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।