বিবিসিসির সঙ্গে আপোষ করলেন ইকবাল আহমেদ ওবিই
বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে আপোষ করলেন কমিউনিটির শীর্ষ ব্যবসায়ী ও সি মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ওবিই। আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিবিসিসির সঙ্গে ইকবাল আহমেদর ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। সোমবার (৯ ফেব্রুয়ারী) কোর্টে শোনানী শুরু হবার আগেই দুই পক্ষের আইনজীবির মাধ্যমে কোর্টের বাইরে বিষয়টি মিমাংসা হয়। এরপর বিবিসিসির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে করে পুরো বিষয়টি মিডিয়াকে অবহিত করেন বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে চেম্বার নেতৃবৃন্দ জানান, ২০১০ সালে চেম্বার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইকবাল আহমেদ ওবিই বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের বার্ষিক গালা ডিনারে স্পন্সর ও বিজ্ঞাপনখাতে ব্যয় করেন প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড। আর স্পন্সর কোম্পানী ছিলো ইকবাল আহমেদের মালিকানাধীন সিমার্ক ও ইবকো। সিমার্ক গ্রুপ এ অর্থ দাবী করলে বিবিসিসি তা পরিশোধে অপরাগতা প্রকাশ করে। মূলত এ থেকেই বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এবং ইকবাল আহমদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। প্রাথমিকভাবে এ দ্বন্দ্ব আপোষে শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হলেও আস্তে আস্তে বের হতে থাকে তলের বেড়াল। এরিমধ্যে ইকবার আহমেদ ওবিই টোরি পার্টিকে দান করেন ১২ হাজার পাউন্ড। জগন্নাথপুর এডুকেশন ট্রাস্টকে দান করেন আরো প্রায় ১০ হাজার পাউন্ড। এছাড়া টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুুৎফুর রহমানের নির্বাচনী ব্যয় বাদদও ব্যয় করেন আরো প্রায় আড়াই হাজার পাউন্ড। তার দানকৃত এসব অর্থ বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কর্মাসকে পরিশোধ করার জন্য বলেন ইকবাল আহমেদ।
শুধু তাই নয়, তিনি চেম্বারের প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় চেম্বারের কাজে লন্ডনে এসে হোটেলে থাকা খাওয়া এবং চা নাস্তার অর্থও চেম্বারকে পরিশোধ করতে বলেন তিনি। চেম্বারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অপরাগতা জানালে পাল্টা সলিসিটর নোটিশ প্রেরণ করেন ইকবাল আহমদ ওবিই। এ বিষয়গুলো নিয়েই সোমবার কোর্টে শোনানী হওয়ার কথা ছিলো।
কোর্টের বাইরে আপোষের পর বিবিসিসির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহতাব চৌধুরী।
তিনি বলেন, এ অর্থ পরিশোধের জন্য তাদের সঙ্গে অনেক দেনদরবার হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবে তিনি চেম্বারকে পাত্তা দিতে রাজি হননি। তাই বাধ্য হয়েই কোর্টে যাওয়া হয়েছিল। শোনানী শুরু হবার আগে দুই ব্যারিস্টারের মাধ্যমে আপোষে প্রায় ৬০ হাজার পাউন্ড বিবিসিসিকে পরিশোধ করতে ইকবাল আহমেদ রাজি হয়েছেন বলে জানালেন চেম্বার সভাপতি। এছাড়া ৩৮ হাজার পাউন্ড পরিশোধের জন্য বিবিসিসিকে তাগিদ দিয়েছিলেন তা বাতিল করেছেন ইকবাল আহমেদ ওবিই।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, বিবিসিসির সাবেক প্রেসিডেন্ট মুকিম আহমদ ও বিবিসিসির বর্তমান ডিজি মুহিব চৌধুরী। আগামী ২৩শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে বিবিসিসিকে প্রায় ৬০ হাজার পাউন্ড পরিশোধের জন্য ইকবাল আহমেদকে নির্দেশ দিয়েছে রয়েল কোর্ট অব জাস্টিস। এ বিষয়ে মঙ্গলবার এক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ইকবাল আহমেদ ওবিই তার অবস্থান তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য ২০০৬ সালে সানডে টাইমসের শীর্ষ ধনীর তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন ইকবাল আহমদ ওবিই। ইবকো ব্রান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল আহমেদ ওবিইর মালিকানাধীন কোম্পানী সি মার্কের বার্ষিক টার্নওভার হচ্ছে ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড।
এদিকে কমিউনিটির শীর্ষ ব্যবসায়ী ইকবাল আহমেদ ওবিইকে নিয়ে ডেউলি মেইল সম্প্রতি একটি সংবাদ পরিবেশন করে। সংবাদ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে কমিউনিটিতে।
ডেইলি মেইলের নিউজে বলা হয়েছে, সিমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ কনজারভেটিভ পার্টিকে ১২ হাজার পাউন্ড দান করে সে অর্থ বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সকে পরিশোধ করার জন্য ইনভেয়স পাঠিয়েছেন। এ নিয়েই দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়েছে, চেম্বার একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। বিবিসিসি এ অর্থ পরিশোধে অপরাগতা প্রকাশ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য চ্যান্সেলর জর্জ অসবোর্নের কাছে পাল্টা চিঠি লেখা হয়েছে চেম্বারের পক্ষ থেকে। ডেউলি মেইলের নিউজে আরো বলা হয়েছে, ৫৮ বছর বয়সী মিস্টার ইকবাল কমিউনিটিতে মিস্টার কিং প্রাউন বলে পরিচিতি। তিনি সি মার্ক গ্রুপ থেকে প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের মালিক। চ্যান্সেলর জর্জ অসবোর্নের নির্বাচনী আসনের বাসিন্দা হিসাবে তিনি ২০০৬ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত তিনি প্রায় ২৬ হাজার পাউন্ড টোরির তহবিলে দান করেছেন। বিতর্কিত ১২ হাজার ছাড়াও এর আগে আরো ১৪ হাজার পাউন্ড দান করেছেন তিনি। এমনকি চ্যান্সেলর জর্জ অসবোর্ন ইকবাল আহমেদ ওবিইকে ২০০৭ সালে নিউ এন্টারপ্রাইজ কাউন্সিল থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসাবে নিয়োগ দেন। ২০১১ সালে বিবিসিসির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় টোরি পার্টিকে ১২ হাজার পাউন্ড দান করেন মিস্টার ইকবাল। শুধুু তাই নয়, বিবিসিসির চেয়ার হিসাবে লন্ডনে অবস্থানকালে হোটেলে থাকা খাওয়া বাবদ আরো ২৫২ পাউন্ড খরচের বিলও চেম্বারে পাঠান তিনি। চেম্বারের পক্ষ থেকে এ অর্থ পরিশোধে অপরাগতা প্রকাশ করা হলে তিনি সলিসিটর নোটিশ প্রেরণ করেন। শুধু তাই নয়, সিনেমন ক্লাব কারি রেস্টুরেন্টের ৩শ ৩৮ পাউন্ড, লাহোর কাবাবের ৫৫ পাউন্ড এবং নান্দোসের ২৭ দশমিক ৫৫ পাউন্ডের বিলও পরিশোধের জন্য বিবিসিসির কাছে প্রেরণ করেছেন কমিউনটির শীর্ষ ধনী ইকবাল আহমেদ ওবিই। ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এসব তথ্যের বাইরে ইকবাল আহমেদ ওবিইর অর্থদান নিয়ে আরো একটি অভিযোগের কথাও শোনা যাচ্ছে। চেম্বার চেয়ারম্যান থাকাকালে জগন্নাথপুর এডুকেশন ট্রাস্টকে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকা দান করেছিলেন। এ অর্থ পরিশোধের জন্যও তিনি বিবিসিসিকে বলেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এর আগে চেম্বারের চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি ম্যানচেস্টারের বিবিসিসির অর্থ ভাঙ্গিয়ে প্রোগ্রাম করে ইকবাল ব্রাদার্স বা সি মার্কের প্রচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।