মানবতাবিরোধী অপরাধ : সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের রায় ‘মারাত্মকভাবে’ ক্রটিপূর্ণ হয়েছে এবং এ রায় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদ- পূরণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
এইচআরডব্লিউ জানায়, ২০১০ সালের মার্চ মাসে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগের আওতায় মোট ৬১টি ঘটনার উল্লেখ করে মামলা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। এসব অভিযোগগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা , উস্কানি এবং সংশ্লিষ্টতার। চলতি বছরের ১৫ জুলাই গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ৯০ বছরের কারাদ- দেয় ট্রাইবুন্যাল। গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- প্রাপ্ত হলেও বয়সের বিবেচনায় তাকে ৯০ বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে বলে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের পক্ষ থেকে বলা হয়। গোলাম আযমের মৃত্যুদ- চেয়ে এই রায়ের বিপক্ষে চলতি বছরের ১২ আগস্ট আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
গোলাম আযমের রায় নিয়ে নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ’র এশিয়ার পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস জানান, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দীর্ঘদিন ধরেই ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের বিচারের পক্ষে রয়েছে। তবে, যুদ্ধপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় ঘাটতি রয়েছে বলে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সতর্ক করেছি। কিন্তু এ সতর্ক বার্তা বাংলাদেশ সরকার উপেক্ষা করে আসছে।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করতে চেয়েছিল। তবে, সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
গোলাম আজমের রায়ে বিচারকরা সঠিকভাবে তদন্ত চালাননি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে এইচআরডব্লিউ।
বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে পক্ষপাত ও আঁতাত ছিল বলে মনে করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। গোলাম আযমের পক্ষের সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিয়ে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে বলেও মনে করে মানবাধিকার সংস্থাটি। গোলাম আজমকে দোষী সাব্যস্ত করতে উপযুক্ত প্রমাণের অভাব ছিল বলেও মন্তব্য তাদের।
এ ব্যাপারে অ্যাডামস জানান, গোলাম আযমের বিচারকার্যে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। এসবের মধ্যে প্রধান সমস্যা হলো বিচার প্রক্রিয়ায় বিচার বিভাগের পক্ষপাত এবং অধিকারের লঙ্ঘন।
তিনি আরো বলেন, যুদ্ধাপরাধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও তাদের পরিবার সত্যিই কী হয়েছিল তা জানার দাবি রাখে। একমাত্র ন্যায় ও স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে বলে মনে করেন অ্যাডামস।