স্বায়ত্তশাসন সংগ্রামে অংশগ্রহণে উন্মুখ কাশ্মীরী নারীরা

Kasmirস্বায়ত্তশাসনের আইন সংগত অধিকার লাভের জন্য কাশ্মীরারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বহুযুগ ধরে। ভারত বিভাগ পরবর্তীতে শুরু হয় এই লড়াই। আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য কাশ্মীরীদের সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কাশ্মীরী নারী সম্প্রদায়। সংগ্রাম আজো চলমান।
কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী রেহানা তাবাসসুম বলেন, লক্ষ্য অর্জনের জন্য পুরুষদের সংগ্রামে সহযোগী ভূমিকা নেয়ার বিষয়টিকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মনে করেন কাশ্মীরী নারীরা। তাবাসসুম উল্লেখ করেন সংগ্রামে শরিক বহু কাশ্মীরী নারী তাদের স্বামী হারিয়ে বিধবা হয়েছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাবাসসুম বলেন, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে কাশ্মীরী সমাজ-মানসে জাগরণ সৃষ্টি করেছেন নারীরা এবং কাশ্মীরীদের সংগ্রামকে গুরুত্বপূর্ণ বৈপ্লবিক স্তরে উন্নীত করেছেন তারা। দু’ভাগে ভাগ হয়ে রয়েছে কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানে। ১৯৪৭ পরবর্তীতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিনটির মধ্যে দু’টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে কাশ্মীরকে ঘিরে। কাশ্মীরী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার সমর্থন করে যাচ্ছে পাকিস্তান ও জাতিসংঘ। কিন্তু বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে নয়াদিল্লী। ১৯৮৯ সালে রাজ্যে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরীদের সশস্ত্র সংগ্রাম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি কাশ্মীরী মুসলিম প্রাণ হারিয়েছেন। পেছনের দু’দশকের বেশি সময় ধরে রাজ্যের সংগ্রাম সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ঘটনায় প্রভাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কাশ্মীরী নারীরা। কিন্তু সব পরিস্থিতির তারা মোকাবিলা করেছেন সাহসে বুক বেঁধে।
রাজ্যের নারী জীবনের দুঃখ যন্ত্রণার উল্লেখ করতে গিয়ে তাবাসসুম বলেন, তার এক বান্ধবী বসবাস করেন কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চলে সীমান্ত সংলগ্ন উরি গ্রামে। পরিবারের অর্ধেক সদস্য ঐ বান্ধবী হারিয়েছেন দেশভাগের সময়ে। বান্ধবীর পরিবারের বহু সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে চলে গেছেন ওপার অঞ্চলে। আজো তারা ঐ অঞ্চলের বাসিন্দা। বিশ্লেষকরা আফসোফ করে বলেন, কাশ্মীরীদের আন্দোলন দমনে অবতীর্ণ ভারতীয়রা তাদের পীড়ন কর্মকান্ডের লক্ষ্যে পরিণত করেন কাশ্মীরী নারীদের বিশেষভাবে।
উত্তর কাশ্মীরের বাঁদিপুরা জেলায় সরকারি সমাজকল্যাণ বিভাগে কর্মরত সফি আরিফা তৌসিক বলেন, কাশ্মীরী নারীদের দুঃখ-যন্ত্রণা অশ্রুত থেকে যাচ্ছে। ভারতীয়দের হাতে আসিয়া ও নিলুফারের ধর্ষিত ও নিহত হওয়ার ঘটনা যথোচিত প্রচারের অভাবে নিভৃতে থেকে গেছে। এছাড়া ভারতীয়দের হাতে পিতা, ভাই, সন্তান ও স্বামীরূপী বিপুল সংখ্যক পুরুষ নিহত হওয়ার কারণে ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কাশ্মীরী নারীরা।তৌসিফ উল্লেখ করেন কাশ্মীরীদের ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে সমাজ নির্মাণে কাশ্মীরী নারীরা তাদের বিপুল সামর্থ্যনিয়োগে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও নিজেদের নিরাপত্তাহীন ও অসহায় অবস্থার ঊর্ধ্বে উঠে শিল্পোদ্যোগী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও সামাজিক আন্দোলন কর্মী হিসেবে কাশ্মীরী নারীরা রাজ্য গঠনে অবদান রেখে চলেছেন। উল্লেখ করেন তৌসিফি।
শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে বিপর্যস্ত বহু কাশ্মীরীকে পরামর্শ সেবাদানের মাধ্যমে জীবন সংগ্রামে নতুন শক্তিতে অবতীর্ণ হওয়ার লক্ষ্যে উজ্জীবিত করছেন কাশ্মীরী নারীরা। সংঘর্ষ কবলিত পরিবেশে জন্ম নিয়ে ও লালিত-পালিত হয়েও সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনের আকাক্সক্ষায় জার্নালিজমে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভে অধ্যবসায়ী তৌসিফ বলতে লাগলেন, পেশার খাতিরে সচল থাকতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু তার চেষ্টায় বারবার তাকে নিবৃত্ত হতে হয়েছে রাজ্যের সংঘর্ষ কবলিত নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির কারণে। রাজ্যে বিকেল চারটার পর বাইরে বেরোনো অসম্ভব দেখতে পান তিনি।
কিন্তু আরবি বিভাগের ছাত্রী দক্ষিণ কাশ্মীরের ইশরাত নবী বলেন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কাশ্মীরী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের কণ্ঠ অবরুদ্ধ করা হচ্ছে। সহিংসতার জঘন্য শিকার কাশ্মীরী মুসলিম নারীদের আখ্যায়িত করে চললেই তাদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে না। নারীদের অবস্থান সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে কাশ্মীর সংক্রান্ত প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক সংলাপে কাশ্মীরী নারীদের সম্পৃক্ত করতে হবে- দাবি করেন অন্য কলেজ ছাত্রী নুসরাত ফাতিমা।
অন লাইন ডটনেটকে নুসরাত বলেন, রাজনৈতিক কর্মকান্ডে কাশ্মীরী নারীদের অংশগ্রহণ যতোদিন নিশ্চিত না হয় এবং কাশ্মীরী আন্দোলনে শক্তিশালী ভূমিকা নারীরা যতোদিন গ্রহণ না করে ততোদিন কাশ্মীরীদের রাজনৈতিক সংগ্রাম সর্বত্র সম্প্রসারিত হবে না। যার পরিণামে নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে মুক্তিলাভ কাশ্মীরী নারীদের ভাগ্যে ঘটবে না এবং নৈতিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তির ক্ষেত্রে অবদমিত থাকা তাদের ভাগ্যলিপি স্বরূপ অব্যাহত থাকবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button