ইউক্রেন সঙ্কট দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ

Obama Merkelএঞ্জেলা মার্কেল বড় হয়ে ওঠেন পূর্ব জার্মানিতে কমিউনিস্ট শাসনামলে। অনর্গল রুশভাষা বলতে পারেন। পেছনের ১০ বছর ছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর। বিভিন্ন বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার আলাপ চলতে থাকে পুরো সময় ধরে। গত বছর আলাপে যুক্ত হয় ইউক্রেন। একে-অপরকে পছন্দ না করলেও পরস্পরকে দু’জন জানেন ভালোভাবেই। ইউক্রেনকে সরাসরি মার্কিন সামরিক সাহায্য পাঠানোর প্রশ্নে মার্কিন কংগ্রেসে এবং হোয়াইট হাউসের বিতর্ক শুরু হলে মার্কেল মন্তব্য করেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর হাতে উন্নত অস্ত্রশস্ত্র তুলে দিলে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষে পরাস্ত হওয়ার ভয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন গুটিয়ে যাবেন তিনি মনে করেন না। তার এই মনোভাব মার্কেল খোলাখুলি প্রকাশ করেন।
ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্র এন্টি ট্যাংক রাডার ও এই ধরনের আরো অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে পাঠালে পুতিন তার অবস্থান থেকে ভয়ে সরে পড়বেন- এমন মনে করেন না সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো একজন মানুষও। ইউক্রেনে ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান সরবরাহের ব্যাপারে খোদ মার্কিনীদের মধ্যে কোনো আলাপ-আলোচনা নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি কিছু অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্রশস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানোর কথা বলছেন বটে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- তাদের ভান্ডারে যে অস্ত্রশস্ত্র মজুত রয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সেগুলোও এ পর্যন্ত ভালোমতো ব্যবহার করে দেখেনি।
ইউক্রেনকে ন্যাটোয় শামিল করার পশ্চিমা ষড়যন্ত্র নিয়ে পুতিন যে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন- বিশ্লেষকরা সেটিকেও যুক্তিযুক্ত মনে করছেন না। ফ্রান্স ও জার্মানির মতো পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনকে ন্যাটোয় শামিল করতে যাচ্ছে পুতিন এমনটি শুনে থাকলে ভুল শুনেছেন। কারণ, বিশ্লেষকদের ভাষায় ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার অর্থ হবে ন্যাটো চুক্তির শর্তানুযায়ী ফ্রান্স ও জার্মানিসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর ইউক্রেনের পক্ষাবলম্বী হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা উইক্রেনের সামরিক শক্তির গুরুত্ব সম্বন্ধে রুশ সেনাবাহিনী যে অবাস্তব আতিশয্যমূলক কথাবার্তা প্রেসিডেন্ট পুতিনের কানে তুলেছে- বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুতিন তাতে রীতিমতো বিভ্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এটি ১৯৪৫ সাল নয়। এখন হচ্ছে ২০১৫ সাল- বিস্তর পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী বর্তমান রাশিয়া। ন্যাটোর ট্যাংক বহর রুশ সীমান্তের কাছাকাছি হোক বা দূরে থাকÑ তাতে রাশিয়ার কিছু যাবে আসবে না। মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকদের মতে অতীতের স্মৃতি কাতরতায় ভুগছেন পুতিন। কিয়েভে তার অনুগামী মানুষটিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। পুতিন তাড়িত রয়েছেন এই মনোকষ্টে। রাশিয়ার অঙ্গ স্বরূপ রয়েছে ইউক্রেন ৩শ’ বছর। সেই ইউক্রেন এখন পশ্চিমের সঙ্গী হয়ে যাচ্ছে- পুতিন সইতে অপারগ। ষড়যন্ত্রী পশ্চিমকে অন্য সমস্ত রুশ নাগরিকের মতো ঘৃণা করেন পুতিনও। ইউক্রেনকে ঘিরে রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ দূরের কথা, কোনো ভয়াবহ খ-যুদ্ধের এবং তার সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হওয়ার কোনো আশঙ্কা দেখছেন না বিশ্লেষকরা। অর্থ, অস্ত্রশস্ত্র এমনকি মার্কিন সশস্ত্র সৈন্য দলসহ যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে যুদ্ধে নেমে এলে সেই অবস্থায় পুতিনকে হয়তো পিছু হটতে হবে এবং তা হবে রাশিয়ার জন্য ভয়াবহ একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু উপরে বর্ণিত অবস্থাটি এখনো পর্যন্ত কল্পনাতেই আশ্রিত রয়েছে।
আত্মতুষ্টির খাতিরে কিছু প্রতীকী প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্রশস্ত্র ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র পাঠাতে পারে। এমন হলে মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া রাশিয়ার পক্ষ থেকে দেখানো হবে না- ধরে নিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু এর সঙ্গে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধ শুরুর সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা জানিয়ে তারা বলছেন ঐ পরিস্থিতি কোনো পক্ষের জন্যই লাভদায়ক হবে না। ইউক্রেন পরিস্থিতিকে ঘিরে রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যকার সম্পর্কে তথা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ওলট-পালটের বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে মার্কেল ও ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ গত শুক্রবার মস্কোয় উড়ে যান। তাদের লক্ষ্য ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যে কোনো ধরনের একটি যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করার মাধ্যমে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী কেরিকে তার উদ্যোগে নিরস্ত্র রাখা। মিনস্কে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পোরোসেংকোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তারা সাব্যস্ত করতে চাইবেন- ইউক্রেন সঙ্কট নিরসনের জন্য তারাই যথেষ্ট।
ইউরোপীয় এই উদ্যোগের পরিণামে আরো দু’টো প্রদেশে ইউক্রেনিয়ান সার্বভৌমত্বের অবসান ঘটবে এবং রাশিয়ার সঙ্গে সুপ্ত অবস্থায় প্রায় স্থায়ী এক ধরনের বিরোধ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তজুড়ে বিরাজমান থেকে যাবে। কিন্তু বাস্তব বিবেচনায় ইউক্রেন সঙ্কটের এর চেয়ে উত্তম কোনো সমাধান আর হতে পারবে না। যে সুপ্ত বিরোধের কথা বলা হলো- পুতিন খুব সম্ভব সেই বিরোধ বহাল দেখতে চাইবেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অবাধ্য সদস্য ইউক্রেনকে শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে। মালদোভা ও জর্জিয়ায় কাজটি করে দেখিয়েছেন পুতিন।
কিন্তু সোভিয়েত থেকে বেরিয়ে গিয়ে এবং মস্কোর চাপ উপেক্ষা করেও উন্নয়নের পথে জর্জিয়াকে এগিয়ে যেতে দেখা গেছে। ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সমর্থনের জোরে জর্জিয়ার চেয়েও বড় উন্নয়ন সাফল্য ইউক্রেন দেখাতে পারবে- মনে করেন বিশ্লেষকরা। ইউক্রেন সঙ্কটের সন্তোষজনক সামরিক সমাধান খোঁজা বৃথা। জড়িত সব পক্ষকে স্থিতাবস্থা মেনে নিয়েই সামনে এগুতে হবেÑ হচ্ছে বিশ্লেষকদের অভিমত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button