রবিবার থেকে সারাদেশে ৭২ ঘণ্টা হরতাল

রবিবার থেকে সারাদেশে ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি রবিবার সকাল ৬টা থেকে আগামী বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এই হরতালের ডাক দেয়া হয়।
শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এই হরতালের ঘোষণা দেন।
বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আইনি শাসনের শূন্যতা, বিচারিক নৈরাজ্য, পুলিশি তা-ব ও রাষ্ট্রের সকল অঙ্গের অবশায়নের মধ্য দিয়ে অবৈধ ক্ষমতা চিরস্থায়ীকরণের উন্মাদনায় লিপ্ত আওয়ামী লীগ; ফলশ্রুতিতে জাতীয় জীবন অবরুদ্ধ, গণতন্ত্র বন্দী বাকশালী খাঁচায়। ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভখ্যাত গণমাধ্যমের চোখে পট্টি লাগিয়ে দিয়ে প্রকারান্তরে সরকার নিজেই অন্ধত্ববরণ করেছে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার নিঃস্ফল প্রয়াস ব্যর্থ হতে বাধ্য।
তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠীর অন্ধপ্রতিহিংসা ও ক্ষমতালিপ্সার খেলায় দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র বিপন্নপ্রায়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সকল পথ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমান সংবিধান মানবিক ও নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের তিরোধানের সাম্রাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন ধূলিস্যাৎপ্রায়।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্রসফায়ারের মাধ্যমে দেশব্যাপী অব্যাহত গণহত্যা, গণগ্রেফতার, মামলা-হামলা ও চূড়ান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে সরকার সারাবিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, ৩ বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে অঘোষিত গৃহবন্দিত্ব অবস্থায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে অভুক্ত রেখে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে সরকার।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিহিংসার মাত্রাজ্ঞানহীন এমন নিষ্ঠুরতা ও বাড়াবাড়ি দেশের জনগণকে স্বভাবতই চরমভাবে বিক্ষুব্ধ করেছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক মহল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আমরা জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনকে এ ব্যাপারে যথাযথ এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষমূলক অপরাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে গণদাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের শতকরা ৯০ ভাগ জনগণ নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায়। প্রকৃত জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাই রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে। সমগ্র জাতি আজ সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে লিপ্ত। জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত প্রায়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জনগণের প্রত্যাশা ছিল ইতোমধ্যে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং জনদাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ঘোষণা দেবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো লক্ষ্মণ পরিলক্ষিত না হওয়ায় আমরা আবারো একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে, দেশব্যাপী ক্রসফায়ারের মাধ্যমে অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা ও গুলি করে পঙ্গু ও আহত এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীসহ নিরীহ জনগণকে গণগ্রেফতার বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ও কুক্ষিগতকরণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অভুক্ত রেখে হত্যার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র, সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদে এবং অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি আগামীকাল রবিবার সকাল ৬ টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালিত হবে।
বিবৃতিতে তিনি চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি ঘোষিত ৭২ ঘণ্টার হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে উদ্বাত্ত আহ্বান জানান।