নিউইয়র্কে ২০ বছরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
‘ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক’ আবহাওয়ার কবলে পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তুষার ঝড় আর অসহ্য ঠাণ্ডার পর আবারও ‘হিংস্র’ আবহাওয়ার সতর্কবার্তা এসেছে আমেরিকানদের সামনে। সপ্তাহান্তে এই ঠাণ্ডা মাইনাস ২০ ডিগ্রি ফারেনহাট পর্যন্ত নেমে যেতে পারে এবং একইসঙ্গে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ মাইল ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। গত দুই দশকের মধ্যে নিউইয়র্কের তাপমাত্রা নেমে যাবার এই রেকর্ড জনজীবনে স্বাভাবিক চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটার আশংঙ্কা রয়েছে।
গত মাসের শেষ সপ্তাহে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো স্টেটের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ভয়াবহ তুষার ঝড়। যার ভযাবহতা এখনো বিরাজ করছে ম্যাসাচুসেটস, ইলিনয় ও মিশিগানসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে। নিউইয়র্কে যে ধরনের তুষার ঝড়ের আগাম বার্তা দেয়া হয়েছিল সেটা অবশ্য তখন প্রতিফলিত হয়নি। কিন্তু অনেকগুলো স্টেট এখনো ১০ থেকে ২০ ইঞ্চি বরফের নিচে রয়ে গেছে। সেই ধকল না কাটতেই আবার দেয়া হয়েছে তীব্র ঠাণ্ডার সতর্কবার্তা। নতুন এই সতর্কবার্তার আওতায় যেসব স্টেট রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম নিউইয়র্ক, ম্যাসাচুস্টেস, মেনোপলিস, ইলিনয়, ডেট্রয়েট এবং পেনসিলভিয়া অন্যতম। অ্যাকুওয়েদার ভবিষ্যদ্বানী করেছে, তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও নিচে নেমে যেতে পারে।
ওয়েদারবাগের আবহাওয়াবিদ এন্ড্রু রোজেনথাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শীতের এই তীব্রতা যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীষ্মকালীন রাজ্য ফ্লোরিডা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অ্যাকুওয়েদার আবহাওয়াবিদ ব্রায়ান লাডা বলেছেন, এই ঠাণ্ডার তীব্রতা এত বেশি হতে পারে যে তা ঠিকমতো কাপড় না জড়ালে মৃত্যুও কারণ হতে পারে। বিশেষ করে ঘরের বাইরে যেতে হলে যথেষ্ট পোষাকে আচ্ছাদিত হয়ে যাবার জন্যও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য তা আরও বেশি যত্নশীল হবারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আবহাওয়াবিদদের বার্তামতে, এই ঠাণ্ডা রবিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে।
ওয়েদার চ্যানেলের আবহাওয়াবিদ নিক উইল্টজেন জানিয়েছেন, এই ঠাণ্ডায় নিউইয়র্কের সব রেকর্ড ভেঙে যাবে। অর্থাৎ গত ২০ বছরের মধ্যে এটাই হবে সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডার রেকর্ড।
আবহাওয়াবিদরা এ ধরনের তাপমাত্রাকে ‘ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক’ এবং বাতাসের গতিবেগকে ‘হিংস্র’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আবহাওয়াবিদরা আরো জানিয়েছেন, ফ্লোরিডার একাধিক এলাকায় ঠাণ্ডা এত বেশি হবে যে নরম ফল এবং সব্জি জমে যাবে। এখানে উল্লেখ্য, ফ্লোরিডা রাজ্যের তাপমাত্রা পুরো বছরজুড়ে গ্রীষ্মকালের মত থাকে। এই রাজ্যে প্রচুর সব্জি ও ফলমূলের চাষাবাদ হয়, যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশ এলাকার মানুষের চাহিদা মেটানো হয়।
শিশুদের বাইরে যাবার ব্যাপারে সব অভিবাবকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে তারা যেনো যথাযথ কাপড় না পড়ে বাইরে না যায়। এই তাপমাত্রায় ১০ মিনিটের মধ্যেই শরীরের চামড়া শক্ত হয়ে যাবার আশংকা আছে। ফেব্রুয়ারির এই সপ্তাহটি ঠাণ্ডার তীব্রতা থাকলেও রৌদ্রকরোজ্জল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শনিবার রাতে নিউইয়র্কের কোনো কোনো এলাকায় ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি তুষার পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে তীব্র ঠাণ্ডায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার রাতে ব্যস্ততম ম্যানহাটন একপ্রকার জনমানবহীন হয়ে পড়ে। জ্যাকসন হাইটসে কথা হয় ইয়েলো ক্যাবের চালক প্রবাসী বাংলাদেশি রকিব হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, যাত্রীর না থাকায় তিনি সিটি থেকে ফেরত এসেছেন। এখন বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। গাড়ির জমা টাকাও তুলতে পারেননি।
প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস এলাকায় সন্ধ্যার পর বাংলাদেশিদের আনাগোনা কমে যায়। বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলোও ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। ৭৩ স্ট্রিটের একজন রেস্টুরেন্ট মালিক জানান, অন্যদিনের চেয়ে ক্রেতা কম। সন্ধ্যার পর তা আরো কমে যায়।