ইসলামে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব
মানুষের মনের ভাব প্রকাশের জন্য স্রষ্টা তাদের যে ভাষা দান করেছেন তা অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। ভাষাকে আল্লাহ তায়ালা তার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করেছেন। আল কোরানে বলা হয়েছে, ‘তার এক নিদর্শন হলো, তোমাদের রং, ধরন এবং ভাষার বিভিন্নতা।’ ভাষা ছাড়া মানব সভ্যতা অচল। বাকহীন নিথর কোনো ভূখণ্ডে বেঁচে থাকা কতটা যে দুর্বিষহ তা বোঝানো মুশকিল। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এবং মানব সভ্যতাকে ছন্দময় করে তোলার জন্যই আল্লাহ তায়ালা আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে দান করেছেন ভাষার নেয়ামত।
সব প্রাণীরই স্ব স্ব ভাষা আছে, নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের মাধ্যম জানা আছে। কিন্তু মানুষের ভাষার মতো এত স্বচ্ছন্দ, সহজাত ও সমৃদ্ধ ভাষা অন্য কোনো প্রাণীর নেই। প্রথম মানুষ হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করার পর সর্বপ্রথম তাকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। মানব সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত হয়েছে ভাষা। আর মানুষের ভিন্নতার কারণে ভাষায়ও এসেছে ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য। সময়, স্থান ও মানুষের এই বিচিত্রতার কারণেই পৃথিবীতে অস্তিত্ব লাভ করেছে কয়েক হাজার ভাষা। মর্যাদার বিচারে সব ভাষাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রত্যেকের কাছে তার মায়ের ভাষা সেরা। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ত্যাগে মায়ের ভাষার সমকক্ষ আর কোনো ভাষা নেই।
মহান স্রষ্টা নিজেও মাতৃভাষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। যুগে যুগে মানুষের হেদায়েতের জন্য স্রষ্টা যত নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে মাতৃভাষায় যোগ্য ও দক্ষ করে পাঠিয়েছেন। যখন যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তা নবীদের মাতৃভাষায় করেছেন। প্রত্যেক নবীই ছিলেন মাতৃভাষার পণ্ডিত। তাদের ওপর অবতীর্ণ কিতাবগুলোও ছিল স্বজাতীয় ভাষায়। প্রত্যেক নবী-রাসুলের ভাষাকেই আল্লাহ তায়ালা সুমিষ্ট ও সাবলীল করেছিলেন, যাতে মানুষ সহজেই বুঝতে পারে। আর দাওয়াতে দীনের কৌশলও হলো সুমিষ্ট ও বোধগম্য ভাষায় দাওয়াত উপস্থাপন করা। একজন দা’য়ীর বড় গুণ হলো তার মাতৃভাষায় যথার্থ যোগ্যতা অর্জন করা।
মুসলিম সমাজে প্রচলিত ভাষাই মুসলমানদের ভাষা। সে ভাষা মায়ের মতোই আপন, গভীর মমতায় নিবিষ্ট। নিষ্ঠতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সে ভাষা চর্চা করলে তা ইবাদত হিসেবেই গণ্য হবে। কোনো নবী বা আসমানি কিতাব যদি এ জনপদে অবতীর্ণ হতো, তাহলে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় তা বাংলাতেই হতো। তাই প্রত্যেক ভাষাভাষীর দায়িত্ব হলো, নিজ নিজ মাতৃভাষাকে চর্চার মাধ্যমে সমুজ্জ্বল করে তোলা।