ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাসউদ খানকে গণসংবর্ধনা

Masud Khanবিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাসউদ খানকে সিলেট বাসীর পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা প্রদান করাহয়েছে। শনিবার নগরীর শহীদ সুলেমান হলে বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। সতীর্থদের ফুলেল শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান। বরেণ্য এ ব্যক্তিত্বকে ভালোবাসা জানাতে সবমত ও পথের সুধীজনরা এসে ভিড় জমিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সুলেমান হলে। সুদূর ঢাকা থেকেও ছুটে এসেছিলেন অধ্যক্ষ মাসউদ খানের বন্ধু মহল। সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ ব্যক্তিত্বকে হৃদয়ের উষ্ণ ভালোবাসা জানাতে ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল সাহিত্য সংসদ প্রাঙ্গন।
অধ্যক্ষ মাসউদ খান সংবর্ধনা পরিষদের আহবায়ক এডভোকেট সৈয়দ আশরাফ হোসেনের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা.এ মালিক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী, প্রফেসর ড. মনজুর আহমদ, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল কাদের সালেহ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. এ মালিক বলেন, যিনি নিজেকে চেনা ও জানার পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তাকে জানেন তিনি হলেন প্রকৃত আলোকিত মানুষ। এ ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ মাসউদ খান হলেন একজন পরিপূর্ণ আলোকিত মানুষ। শিক্ষা রাজনীতি ও সমাজসেবার পাশাপাশি তিনি স্রষ্টাকেও জানার চেষ্টা করে যাচেছন।
তিনি বলেন, মানুষ তার জন্মের জন্য দায়ী নয়, কর্মের জন্য দায়ী। ভাল মন্দ বুঝে শুনে চলার জন্য আল্লাহ মানুষকে বিবেক ও বুদ্ধি দিয়েছেন। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। নতুন প্রজন্মকে নৈতিকতা, সৃজনশীলতা ও ধর্ম শিক্ষা দিলে তারা পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। ধর্ম মঙ্গলের জন্য হানাহানি আর বিভেদ সৃষ্টির জন্য নয়। ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বাঁচতে হলে নিজেকে ধর্ম জানতে হবে।
তিনি বলেন, সম্মানিত ব্যক্তিকে সম্মান জানানো ভাল লক্ষণ। অধ্যক্ষ মাসউদ খানের জীবনে অনেক অর্জন ও অভিজ্ঞতা আছে। তাকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জানবে ও শিখবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী বলেন, আজকের সংবর্ধিত ব্যক্তি মাসউদ খান আমার কলেজ জীবনের বন্ধু। কিন্তু আদর্শ ও মতের দিক থেকে আমাদের মধ্যে অনেক মত বিরোধ রয়েছে। এত মত বিরোধ থাকা সত্তেও আমাদের মধ্যে শ্রদ্ধা ও সম্মান একটুও কমেনি। মাসউদ খানের বড় গুণ হল তিনি পরমত সহিষ্ণু একজন মানুষ। যা সবার মধ্যে থাকেনা। সেই ছাত্র রাজনীতি থেকে তিনি ও আমার মধ্যে মতের অনেক অমিল। কিন্তু সুখে দুখে আমরা একে অপরের পাশে আছি।
তিনি বলেন, ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। এক সময়ের তুখোড় ছাত্র নেতা মাসউদ খান সিলেট তথা সারা দেশে যার পরিচিতি আছে। এরকম মানুষকে সম্মান জানাতে পেরে আজ আমরা নিজেই সম্মানিত হয়েছি।
প্রফসর ড. মনজুর আহমদ বলেন, ছাত্র জীবন থেকে সমাজতান্ত্রিক চিন্তা চেতনা ধারণ করে আছি। আমার চিন্তা ও চেতনার বিপরীত মেরুর লোক মাসউদ খান। কিন্তু এমসি কলেজে ছাত্র হিসেবে মাসউদ খানের সাথে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল মত পার্থক্য আমাদের বন্ধুত্বের মধ্যে কোন দেয়াল তৈরী করতে পারেনি। মাসুদ খানের মত পরমত সহিষ্ণু ব্যক্তির সমাজে খুবই প্রযোজন। এই গুণ সবার মধ্যে থাকলে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র অনেক এগিয়ে যেত।
তিনি বলেন, বহুমাত্রিক পরিচয়ে মানুষ। এই বহু মাত্রিক পরিচয়কে সবাই সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে জানেনা। এই গুণ মাসুদ খানের মত মুষ্টিমেয় মানুষের আছে।
অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল কাদের সালেহ বলেন, আমাদের সমাজে একটি প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ যা নয় তা থেকে বেশী নিজেকে তুলে ধরে। এর মাধ্যমে সমাজের প্রকৃত নায়কেরা পর্দার অন্তরালে থেকে যান। সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে এই প্রকৃত নায়কদের পর্দার অন্তরাল থেকে আমাদের বের করে আনতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের তুলে ধরতে হবে। মাসউদ খানকে এই সম্মাননা জানানোর মাধ্যমে সিলেটে একটি ভাল কাজের শূভ সূচনা হল। আশা করি এটার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ মাসউদ খান সংবর্ধনা পরিষদের সদস্য সচিব লে. কর্ণেল (অব.) এম আতাউর রহমান পীর, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাবেক সভাপিত হারুনুজ্জামান চৌধুরী, অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ, দৈনিক সিলেটের ডাক এর নির্বাহী সম্পাদক আবদুল হামিদ মানিক, ব্রিগেডিয়ার (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকী, অধ্যক্ষ মাসউদ খানের সহধর্মীনি সৈয়দা সুরাইয়া মাসউদ প্রমুখ।
সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে অনূভূতি ব্যক্ত করতে অধ্যক্ষ মাসউদ খান বলেন, আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে এই অশান্তি হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিকতা ও পরমত সহিষ্ণুতার অভাবের কারণে। মানুষের মধ্যে মতের অমিল হবে। কিন্তু এর জন্য তার মত ও অধিকারকে হরণ করা যাবেনা। ভিন্ন মতের মানুষের বলার অধিকার হরণ করার মধ্যে রাষ্ট্র ও সমাজ নি:শেষ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ন্যায়ের পক্ষে সত্য কথা বলতে হবে। কেউ শুনুক আর না শুনুক, মানুষের সত্য উচ্চারণ কখনও ব্যর্থ হয়না। এক সময় তার মূল্যায়ন হয়। তাই দেশ ও সমাজের কল্যাণে সত্য ও ন্যায়ের পথে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
গল্পকার সেলিম আউয়াল, এডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি ও কে এম আব্দুল্লাহ আল মামুনের যৌথ পরিচালনায় জামিয়া মাছুমিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হাফিজ মাওলানা আব্দুল হামিদের পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সভায় সদ্য প্রয়াত গবেষক হারূন আকবর রচিত মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম। সংগীত পরিবেশন করেন মুক্তিযোদ্ধা এম এ মালেক খান।
অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান সংবর্ধনা স্মারক, শিক্ষাবিদ রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাসউদ খান গ্রন্থ, সৈয়দা সুরাইয়া মাসউদ রচিত গ্রন্থ ও মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম রচিত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। একই সাথে স্বপ্নঘুড়ি’র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয় এবং স্বপ্নঘুড়ি সাংস্কৃতিক ফোরামের উদ্যোগে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, এডভোকেট সুপ্রিয় চক্রবর্তী, সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী, সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন, দৈনিক সিলেট সংলাপ সম্পাদক মুহম্মদ ফয়জুর রহমান, প্রবীণ আইনজীবী আজিজুল মালিক চৌধুরী, দৈনিক সিলেটের ডাক এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক দেওয়ান তৌফিক মজিদ লায়েক, রাজনীতিবীদ মুনতাসির আলী। অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান সংবর্ধনা স্মারকের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষে অধ্যক্ষ মাসউদ খানকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠান,সংস্থার পক্ষ থেকে যারা ফুলের তোড়া ও ক্রেষ্ট প্রদানকরেন,তাদের মধ্যে রয়েছেন, অপুর্ব সিলেটের সম্পাদক তাওহিদুল ইসলাম, দৈনিক আমারদেশ পাঠক মেলার সাধারণ সম্পাদক এমজে এইচ জামিল,সুলায়মান আলমাহমুদ,সিলেটরিপোর্ট সম্পাদক মুহাম্মদ রুহুল আমীন নগরী প্রমুখ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button