ডিসিসি নির্বাচন আয়োজনে আবারো প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

DCCঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজনে আবারো নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি তার উদ্দেশ্যে বলেন, ডিসিসি নির্বাচন দিন, আর কত আটকে রাখবেন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছেন। একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হকের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রার্থী ঠিক করাই আছে আনিসুল হক। ঢাকা দণি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী আমি দিচ্ছি। অন্য এক সূত্র জানায়, উত্তর সিটি করপোরেশনে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না নির্বাচন করলে সেখানে ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হককে মনোনয়ন দেয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রিসভার সূত্র জানায়, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর দেরি করার দরকার নেই। নির্বাচন দিয়ে দেন। এ সময় মন্ত্রিসভার একজন সিনিয়র মন্ত্রী নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিসিসি নির্বাচন হয়ে যাক। যে জিতবে জিতুক। এটা নিয়ে কোনো টেনশন করি না। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিতে প্রয়োজনীয় পদপে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, উত্তর ও দক্ষিণ। এর আগে অভিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০০২ সালের এপ্রিলে। এরপর টানা প্রায় ১০ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। এরপর দুই সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়।
পরে প্রশাসক থাকা অবস্থায় ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এতে ২৪ মে নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়। তবে ভোটার তালিকা ও সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত জটিলতা থাকায় নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। এরপর ২০১৩ সালের ১৩ মে আদালত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। আবার ওই বছরের অক্টোবর- নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দেয় কমিশন। এ সময় ঢাকার সুলতানগঞ্জ ইউনিয়ন ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আবারো দেখা দেয় জটিলতা। এরপর নির্বাচন কমিশনের প থেকে বলা হয়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ডিসিসি নির্বাচন দেয়া হবে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো উদ্যোগ নেই।
ও দিকে গত বছর এপ্রিলের দিকে নগরবাসীর দুর্ভোগ ও জনসমস্যা নিরসনের জন্য নির্বাচন এড়িয়ে বিভক্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে আমলা প্রশাসকের বদলে রাজনৈতিক প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল সরকার। তখন সরকারের প থেকে বলা হয়েছিল, সরকার নগরবাসীর সেবার বিষয়টি মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত হাতে নিতে চাইছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে ব্যাপক আলাপ আলোচনাও হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতার সাথে দেশের সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরাও তীব্র বিরোধিতা করেন। একই সাথে আইনি জটিলতায় সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় সরকার।
বৈঠক সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা দুই নেত্রী দুই নেত্রী করেন তারা দুইজনকে কেন এক পাল্লায় মাপেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুশীলসমাজের অনেকে সরকারের দায় বলে। আমার দায় কিভাবে এল। দেশ তো স্বাভাবিকই চলছিল। যারা সমস্যা তৈরি করেছে তাদের বিষয়ে কথা বলছে না। সুশীলসমাজ কমিটি করে এগুলো খতিয়ে দেখুক, যে সহিংসতা হচ্ছে তা কারা করছে। জনগণ কাদের দোষী ভাবে। তারা (সুশীলসমাজ) কিন্তু সেটা করবেন না। শুধু বলবেন, সংলাপের কথা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও গণপরিবহন নিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরলে মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাকে সমর্থন করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button