বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বৃটিশ এমপি ইমা লিওয়েলের উদ্বেগ
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বৃটিশ এমপি ইমা লিওয়েল বেক বলেছেন, বর্তমান সংকট নিরসনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি জাতীয় নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প হতে পারে। তিনি বলেছেন, গত নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়া ও অর্ধেকের চেয়ে বেশী আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার ১৭ ফেব্রুয়ারি নিউক্যাসলে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ড. সাইফুল আলম চৌধুরীর উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন নিউক্যাসল সাউথশিল্ড আসনের লেবার দলীয় এই এমপি। এই দিন ড. সাইফুল আলম চৌধুরী পৃথক পৃথকভাবে লেবারপার্টি, কনজারভেটিভ পার্টি ও হিউম্যান রাইটস নেতৃবৃন্দের কাছে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন, গুম,হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
বৃটিশ এমপি ইমা লিওয়েল বেক বলেন, উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে বৃটেন বালাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে চায়। তাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে, বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী, ফরেন অফিসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে চিঠি লিখবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন বৃটেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, তাই বাংলাদেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতন্ত্রের স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সংলাপ জরুরী।
লেবার পার্টির সাথে মতবিনিময় সভায় বৃটিশ এমপি ইমা লিওয়েল বেক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হিউম্যান রাইটস কর্মকর্তা জন ব্রাউন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রাখা, খাবার সরবরাহে বাধা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতন ও বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জন ব্রাউন বলেন, এসব কর্মকান্ড রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে অন্তরায়।
কনজারভেটিভ পার্টির সাথে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কনজারভেটিভ সাউথশিল্ড এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এ্যাওয়ার্ড রাসেল, সাধারণ সম্পাদক পেট ব্রাউন, কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ নর্থ ইষ্ট ইউকের চেয়ারম্যান আলী হায়দার, সাউথশিল্ড আসনের এমপি পদপ্রার্থী রবার্ট অলিভার, কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস এর সদস্য মার্লিন হোয়ার্ট, শিলা লেওসন, বব লেওসন প্রমুখ।
কনজারভেটিভ নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে এখন যা চলছে তাকে গণতন্ত্র বলা যায় না। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা, খাবার সরবরাহে বাধা, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও নির্যাতন- এসব গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। র্যাব, পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সাধারণ জনগণ ও বিরোধী নেতাকর্মীদের উপর অন্যায়ভাবে নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় এটা কাম্য হতে পারে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তত্ত্ববধায়ক সরকার ইস্যুতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসা জরুরী বলে মত প্রকাশ করেন নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের চলমান সংকট নিরসনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিয়কালে যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ড. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, দেশ আজ এক গভীর সংকটে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখন্ডতার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা দখল করে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালাচ্ছেন। বিএনপি‘র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও সিনিয়র নেতাদেরসহ সারাদেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারান্তরীণ করে বর্তমান অবৈধ সরকার গায়ের জোরে দেশকে দখলে রেখে ভয়াবহ দুঃশাসন চালিয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে নাশকতা সৃষ্টি করে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোকে কড়াকড়িভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। ড. সাইফুল আলম বলেন, আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রের খোলসে আসলে বাকশালকেই কায়েম করছে। অবৈধ শেখ হাসিনা সরকার বেগম জিয়াকে বন্দী করার নানা ফন্দি করে বাকস্বাধীনতার আইনগত অধিকারকে শূলে চড়িয়ে গণমাধ্যমকে শুধুমাত্র সরকারের সকল বার্তা প্রচারের নির্দেশ দিয়েছে। তিনি অবিলম্বে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত তা চালিয়ে যাবার আহ্বান জানান।
কমিউনিটি নেতা আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন মাহবুবুল আলম চৌধুরী নজরুল, সৈয়দ মুসাদ্দেক আহমেদ, শাহান চৌধুরী, আব্দুল মান্নান, জহুর আলী, মইনুর হোসেন, আতাউর রহমান মুমিন, লুৎফুল রহমান, মাহি চৌধুরী প্রমূখ।