মধ্যপ্রাচ্যে টালমাটাল পরিস্থিতির অবসান ঘটবে কবে ?
মধ্যপ্রাচ্য নীতি-পরিষদের আলোচনা অনুষ্ঠান ছিল ওয়াশিংটনে। মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ, সমাপ্তি ও যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া ছিল আলোচনার বিষয়। দু’ঘণ্টা চলে অনুষ্ঠানটি। শুরু হয় ২০ জানুয়ারী। মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দা মাত্রেরই আলোচনায় আকৃষ্ট হওয়ার কথা। সবাই জানেন টালমাটাল পরিস্থিতি চলছে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে। বলতে গেলে সারা মধ্যপ্রাচ্য আগুনে জ্বলছে। ক্ষয়ক্ষতির অন্ত নেই জান ও মালের। দেদার সম্পদ রয়েছে অঞ্চলে। অথচ দুনিয়ার বহু এলাকার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য একাধিক মানদন্ডে। জটিল যুদ্ধে জর্জরিত আজকের মধ্যপ্রাচ্য। কে কোন পক্ষে লড়ছে- বুঝতে পারাও মুশকিল। কোন লক্ষ্যে যুদ্ধ চলছে তাও অনেকে জানে না। যুদ্ধের কুশিলবদের আসল চেহারাও অনেকের জানা নেই।
মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ এতো ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে- অনেকে তা ভাবতেও পারেনি। ইরাক ও আফগানিস্তান বহু আগে থেকে আক্রান্ত। এই দেশ দুটো আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত। যুদ্ধে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেন। আইএসের রক্তক্ষয়ী অভ্যূদয়ে ছারখার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য। রক্তক্ষয়ী সংগঠন আরও রয়েছে। তারাও রক্ত ঝরাচ্ছে। স্বস্তি-শান্তির প্রার্থনায় দুনিয়ার দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য। কিন্তু ফলোদয় ঘটছে না।
যুদ্ধ বিমান হামলা মধ্যপ্রাচ্যে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু রক্তক্ষয় বিরাম মানছে না। যুদ্ধ বন্ধে স্থলবাহিনীর আগমন ও অংশগ্রহণ চাচ্ছেন অনেকে। স্থল আক্রমণের নেতৃত্ব কে নেবে এবং হামলায় আদৌ কাজ হবে কিনা- এসব প্রশ্নে এক এক মহলে এক এক চিন্তা থাকলেও আপাতত সবাই চাচ্ছেন, মধ্যপ্রাচ্যে রক্তক্ষয় বন্ধে স্থলসৈন্য পরিচালনায় ওয়াশিংটন এগিয়ে আসুক।
অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে, ইরাকে ও আফগানিস্তানে ব্যর্থ ওয়াশিংটন নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে পা বাড়াবে কি? দেখা যাক, ওয়াশিংটনে মধ্যপ্রাচ্য নীতি-পরিষদের আলোচনা থেকে কোন নোশখা বেরিয়ে আসে।
যুদ্ধ চলছে মধ্যপ্রাচ্যে। যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজতে সচেষ্ট হয়েছে ওয়াশিংটন। মধ্যপ্রাচ্য বা আরবের কোনো যুদ্ধ বিশেষজ্ঞের মতামত ঐ আলোচনায় আমন্ত্রিত নয়।
বিরোধ কবলিত এলাকার মানুষ না চাইলেও শান্তির জন্য আকুল মানুষের কাছে এমন মানুষ বা পক্ষের মতও মূল্যবান গণ্য হয়ে থাকে। ওয়াশিংটন বৈঠকও সে হিসেবে মূল্য পেতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যুদ্ধের সরেজমিন যন্ত্রণায় ভুগছে ইয়েমেন লিবিয়া, ইরাক ও সিরিয়ার যে জনগণ, তাদের অন্তর্যন্ত্রণার অনুভূতি-উপলব্ধি বাইরের লোকজন বুঝবে কীভাবে? হোন না তারা বিদ্যায়-প্রজ্ঞায় বহু বেশি প্রাগ্রসর। বাইরের ঐ সমস্ত তাতিত্ত্বকদের আলোচনায় যুদ্ধের আশু সমাপ্তি প্রায়শই দেখতে পাওয়া যায়।
যুদ্ধে-কলহে মধ্যপ্রাচ্য ধুকে ধুকে মরছে আরব বসন্ত শুরুর পর থেকেই। আগাগোড়াই তাত্ত্বিকেরা উপস্থিত ছিলেন। যুদ্ধ বন্ধ হয়নি। যুদ্ধ বন্ধের কোনো চিহ্নও দেখা যাচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্য তাদের অঢেল সম্পদ অকাতরে অপচয় করে যাচ্ছে। নিজেদের দুর্ভাগ্যের দোষ তারা এযাবৎ চাপিয়ে এসেছে অন্যান্যের ওপর। হাজারও লোক মরে যাচ্ছে প্রতিদিন। উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছে লাখে লাখে। একেবারে ধ্বংস্তুপের ওপরে বসে পড়েছে বহু দেশ। সব সর্বনাশ ঘটিয়ে যাচ্ছে দেশগুলোর নেতা-কর্তা-বিধাতারা। কবে এদের বোধোদয় হবে কেউ জানে না। -আরব নিউজ।