মিশরীয় ২১ খ্রিস্টান হত্যার ভিডিওর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের

21 Juisমেহেদী হাসান: ইসলামিক স্টেট (আইএস) কর্তৃক ২১ মিশরীয় খ্রিস্টান নাগরিক হত্যার ভিডিওর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি ভিডিওর কিছু দৃশ্য জাল। ক্যামেরা এবং প্রযুক্তির সহায়তায় জাল ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। এ দাবি যারা করছেন তাদের মধ্যে হলিউডের একজন চলচ্চিত্র পরিচালকও রয়েছেন।
ভিডিও বিশেষজ্ঞদের দাবি ভিডিওর কিছু অংশ স্টুডিওতে ‘গ্রিণ স্ক্রীনে’ ধারন করা হয়েছে যে কৌশল সাধারণত হলিউডের ব্লকবাস্টার সিনেমায় প্রয়োগ করা হয়। স্টুডিওতে দৃশ্য ধারণ করে তার সাথে সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য সংযোগ করা হয়েছে। তাছাড়া সমুদ্রের পানি লাল হয়ে যাওয়ার দৃশ্যকেও অবশ্যই ‘স্পেশাল ইফেক্টস’ বলে দাবি করেছেন হলিউড চলচ্চিত্র পরিচালক মেরি ল্যাম্বার্ট।
বিশেষজ্ঞারা ভিডিওটির অনেকগুলো টেকনিক্যাল ত্রুটি চিহ্নিত করে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এটি বানানো ভিডিও বলে মন্তব্য করছেন।
হত্যাকারী আইএস জঙ্গিদের উচ্চতা সাতফুট করে দেখা যাচ্ছে এবং আইএসে সাতফুট উচ্চতার এ জাতীয় জল্লাদ আছে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তাছাড়া জিহাদ জোসেফ নামে যে ব্যক্তি ভিডিওতে আরবিতে বক্তব্য রাখছে তার উচ্চারনের ধরনকে আমেরিকান বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ডেইলিমেইল অনলাইনে সোমবার ২২ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে জর্ডানের পাইলটকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা বিষয়েও জেমস হেনরি ফেটযার নামে মার্কিন একজন প্রফেসর প্রশ্ন তুলেছেন। তার মতে পুড়িয়ে হত্যার যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে তা কেবলমাত্র পশ্চিমা ব্লকবাস্টার সিনেমাতেই দেখা যায়। অতি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা এবং কাগিরি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এ ভিডিওতে যা সাধারণত পশ্চিমা সিনেমায় দেখা যায়।
লিবিয়ায় ২১ মিশরীয় খ্রিস্টান নাগরিককে আইএস সদস্য কর্তৃক মাথা কেটে হত্যার ভিডিও দৃশ্য গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রোববার প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় এবং এইএস বিরোধী তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি হয় । ভ্যাটিকানের পোপ ২১ মিশরীয় খ্রিস্টান নাগিরকের রক্তে সাগরের পানি লোহিত হওয়ার দৃশ্যকে যিশুখিস্ট্রের রক্তের সাথে তুলনা করে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন।
২১ মিশরীয় খ্রিস্টান নাগরিকের শিরোশ্চেদ করার ভিডিওতে দেখা যায় উত্তর লিবিয়ার নির্জন একটি সমুদ্র সৈকতে বন্দী খ্রিস্টান নাগরিকদের কমলা রংয়ের জাম্পিং সুট পরিয়ে হেটে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের মুখ খোলা। প্রত্যেক বন্দীর হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে একজন করে আইএস জঙ্গী। তারা সকলে কালো পোশাক পরিহিত এবং মুখোসধারী। জঙ্গীদের সবার উচ্চতা বন্দীদের তুলনায় ২ ফিট করে বেশি।
ভিডিও পর্যবেক্ষন করে জঙ্গিদের উচ্চতা সাতফুট হিসেবে নির্ণয় করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এরপর ভিভিডওতে দেখা যায় বন্দীদের নতজানু করে বসানো হয়েছে এবং একসাথে তাদের সবার মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।
ভিডিও দৃশ্যের দুর্বলতা থেকে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ এবং প্রশ্ন ২১ খ্রিস্টান নাগরিকের সবাইকে সমুদ্র তীরে হত্যা করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে। তাদের আরো সন্দেহ সবাইকে একসাথে হত্যা করা হয়েছে কি-না সে বিষয় নিয়েও।
তাদের মতে ভিডিওর কিছু ফুটেজ স্টুডিওর মধ্যে ‘গ্রিণ স্ক্রীনে’ ধারন করা হয়ে থাকতে পারে। এরপর তার সাথে সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য জুড়ে দিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করা হয়েছ। হলিউড ব্লকবাস্টার সিনেমায় এ কৌশল প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
ফ্লোরিডাভিত্তিক সন্ত্রাসবাদ গবেষক এবং বিশ্লেষক ভারইয়ান খান ফক্স নিউজকে (টিভি) বলেন, ভিডিওতে বেশ কয়েকটি টেকনিক্যাল ভুল লক্ষ্যনীয় যা থেকে বোঝা যায় এটা ম্যানিপুলেটেড।
ভারইয়ান খানের বিশ্লেষনকে সমর্থন করেছেন হলিউড চলচ্চিত্র পরিচালক মেরি ল্যাম্বার্ট। মেরি ল্যাম্বার্ট বলেন, সাগরের পানি লাল হয়ে যাওয়ার যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তা অবশ্যই ‘স্পেশাল ইফেক্টস’। (চলচ্চিত্রে স্পেশাল ইফেক্টস টার্মের মানে হল ক্যামেরা এবং কম্পিউটার গ্রাফিক্সের সাহায্যে তৈরি করা বিশেষ দৃশ্য যার মাধ্যমে দর্শকদের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রম বা ঘোর তৈরি করা হয়। চলচ্চিত্রে এসব দৃশ্য ব্যবহার করা হয়। )
ভারইয়ান খানের মতে জিহাদ জোসেফ নামে যে লোকটা কথা বলছে তার কয়েকটা দৃশ্যে দেখা যায় তার পেছনের সমুদ্রের দৃশ্যের চেয়ে তার আকৃতি বড়। তার মানে হল কোন ইনডোর স্টুডিওতে বসে তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। আর তার পেছনে উত্তর লিবিয়ার যে সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে তা পরে তার ভিডিওর সাথে যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া তার শরীরের গঠনের তুলনায় মাথার সাইজও বেখাপ্পা। তিনি বলেন, হত্যাকারী জিহীদদের উচ্চতা বন্দীদের তুলনায় ২ ফুট করে বেশি দেখা যাচ্ছে। জিহাদীদের উচ্চতা সাত ফুট করে হবে।
বিশেজ্ঞদের মতে কয়েকজন মাত্র জিহাদী হয়ত অযোগ্য একটি ভিডিও টিম নিয়ে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে থাকতে পারে। এর আগে আইএস অন্য জিহাদী গ্রুপের যেসব উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে তাদের তুলনায় এরা অনেক কমযোগ্যতাসম্পন্ন।
জর্ডানের পাইলট পোড়ানোর ভিডিও নিয়ে মার্কিন বিশেষজ্ঞের প্রশ্ন
জর্ডানের পাইলটকে খাঁচায় বন্দী করে আগুন দিয়ে আইএস জিহাদী কর্তৃক পুড়িয়ে হত্যার ভিডিও নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রফেসর জেমস হেনরি ফেটযার। তার মতে এ ভিডিও পাশ্চাত্যে তৈরি হয়ে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, খাঁচার মধ্যে জীবন্ত পুড়িয়ে মানুষ হত্যার উচ্চ মানসম্পন্ন এ ধরনের ভিডিও এর আগে আমরা শুধু ওয়েস্টার্ন ফিল্মেই দেখেছি।
ইরানের স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেল প্রেস টিভিকে তিনি বলেন, পাইলটকে হত্যা করার হৃদয়বিদারক ভিডিওটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ মিনিট এবং ওয়েস্টার্ন মিডিয়া হাউজগুলো যে ধরনের ফিল্ম বা ভিডিও তৈরি করে তার সঙ্গে তুলনা করা যায়। ভিডিওটি তৈরিতে অনেকগুলো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়েছে এবং বন্দুক হাতে আইএসআইএল সন্ত্রাসীদের সেভাবেই দেখানো হয়েছে ওয়েস্টার্ন ফিল্মে মার্কিন বাহিনীকে যেভাবে দেখানো হয়। অভিজ্ঞ পরিচালকের হাতে প্রচুর অর্থ ব্যায়ে এ ভিডিও নির্মিত হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button