তুরস্ক আক্রান্ত হলে ন্যাটো কি এগিয়ে আসবে ?

সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে গত চার বছরের গৃহযুদ্ধ ও একাংশে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আধিপত্যে নাজুক অবস্থায় রয়েছে তুরস্ক। ন্যাটো সদস্য হিসেবে আইএসের বিরুদ্ধে পশ্চিমা হামলায় অংশগ্রহণও করেছে আঙ্কারা। একইসঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি নিয়েছিল দামস্কে ক্ষমতার পালাবদলের অপেক্ষা ও বিদ্রোহীদের আন্দোলনে। কিন্তু দেশটির সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে সিরিয়ার অভ্যন্তরে তুরস্কের একটি ৭০০ বছরের প্রাচীন সমাধিকে ঘিরে। প্রতিষ্ঠাতা সুলেমান শাহের এই সমাধিটি ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত অটোম্যান সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এটি তুরস্কের নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৯২১ সালের আঙ্কারা চুক্তির ধারা-৯ অনুসারে, অটোম্যান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান ওসমানের দাদা সুলেমান শাহের সমাধিটি তুরস্কের সম্পত্তি বলে গণ্য হবে। তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সিরিয়ার অভ্যন্তরে আলেপ্পোতে এই সমাধিতে অবস্থিত। দুটো ফুটবল মাঠের সমান এই জায়গার নিরাপত্তার দায়িত্বে তুরস্কের নিজস্ব বাহিনীই মোতায়েন রয়েছে।
সম্প্রতি আইএস এই সমাধিতে হামলার হুমকি দিয়েছে। এই হুমকিতে পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে আঙ্কার নিরাপত্তায় ন্যাটো কি হস্তক্ষেপ করবে? ১৯৪৯ সালের ন্যাটো চুক্তির ধারা ৬ অনুযায়ী, ন্যাটো সদস্যভুক্ত কোনো দেশ আক্রান্ত হলে তাকে রক্ষায় সংস্থাটির সব সদস্যের ঝাপিয়ে পড়ার কথা। তুরস্কের কোনো ভূমি আক্রান্ত হওয়া মানে ন্যাটোভুক্ত তুরস্কের ওপর হামলা। তবে কি ২৮ সদস্যের এই জোট তুরস্ককে নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে আসবে? তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান তেমনটি আশা করলেও বাস্তবতা অতটা সহজ নয়। কারণ ন্যাটো চুক্তির ধারা-৫-এ এই জটিল রাজনীতির অবতারণা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সংস্থাভুক্ত কোনো দেশ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা ২৮ সদস্যের দ্বারা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হতে হবে।
ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যরা তুরস্কের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি বিরাগভাজন। ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে তারা পছন্দ করেন না। তুরস্কের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় এরদোগান রক্ষণশীল ভূমিকা নেয়ায় ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ এখন ইসলামের প্রতি ঝুঁকছে। এতে এরদোগানের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম স্বাধীনতা খর্ব ও বিরোধী দলকে কোণঠাসা করার অভিযোগ করছে পশ্চিমারা। তাতে বোঝাই যায়, ধারা-৫ অনুযায়ী আঙ্কারাকে রক্ষায় ন্যাটোর সদস্যরা একমত হবে না।
এখন সিরিয়ায় ওই তুর্কি সমাধি আক্রান্ত হলে এটি পরিষ্কার হয়ে যাবে ন্যাটোর কতটা বাস্তবসম্মত। পশ্চিমা আদর্শের ন্যাটো ইসলামপন্থীদের জন্য উপকারী নয়, এটা প্রমাণিত হলে তুরস্কের একলা চলার নীতিই গ্রহণ করতে হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button