অস্কারে মনোনীত সেরা ৮টি চলচ্চিত্র
আর অল্প কিছুক্ষন পরেই শুরু হচ্ছে এবারের অস্কার আসর। দিন ঘন্টা গননার সময় শেষ। রবিবার আজকে রাতেই যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে বসতে যাচ্ছে অস্কার নামে পরিচিত একাডেমী এ্যাওয়ার্ডসের ৮৭তম এই আসর। প্রিয় তারকা, প্রিয় চলচ্চিত্র বা পরিচালক—কার কার হাতে উঠবে আঙ্কেল অস্কারের মতো দেখতে ট্রফিটি? তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।
এবারের অস্কারে ‘সেরা চলচ্চিত্র’ দৌড়ে আছে ৮টি চলচ্চিত্র। পুরস্কার ঘোষণার আগে আগেই সে সব চলচ্চিত্রের কথা আরেকবার জেনে নেওয়া যাক—
বয়হুড : ৫-১৮ বছর পর্যন্ত একটা ছেলের জীবনে যা ঘটে, তা অতি দারুণভাবে উঠে এসেছে এ চলচ্চিত্রে। পরিচালক রিচার্ড লিঙ্কলাটার ১২ বছর ধরে সিনেমাটির শুটিং করেছেন। মানুষের ডেডিকেশন কোন পর্যায়ের হতে পারে, সেটা বয়হুড দেখলে বুঝা যায়। ভাল সিনেমা, তবে দুর্বলতা মনে হয় একটাই— দ্বিতীয়বার দেখতে ইচ্ছা করবে না।
দ্য গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল : দারুণ একটা ডার্ক কমেডি। এ্যাডওয়ার্ড নরটনকে অনেক দিন পর এ সিনেমাতে দেখে যে কারোই ভাল লাগবে। রঙ নিয়ে ভাল খেলা আছে এ চলচ্চিত্রে। মেকিংও দারুণ, সংলাপগুলো বেশ মজাদার। ডার্ক কমেডি যাদের পছন্দ তাদের জন্য মাস্ট সি। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন ওয়েস এ্যান্ডারসন।
দ্য ইমিটেশন গেম : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিদের ‘এনিগমা’ নামক কোড ভেঙ্গে হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিলেন গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী এলান টুরিং। ওই ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে দ্য ইমিটেশন গেম। বলা যায় ওয়ান ম্যান শো— সে মানুষটি হলেন বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ! দারুণ অভিনয় করছেন তিনি! সিনেমাও ভাল, কিন্তু কাম্বারব্যাচ হলেন সেরা। সিনেমা শেষ হওয়ার পরে কিছু লেখা দেখানো হয়, সেগুলো ইমোশোনাল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মরটিন টিলডাম।
সেলমা : মার্টিন লুথার কিংয়ের জীবনের একটি বিশেষ ঘটনা নিয়ে এই সিনেমা। এটি দেখার পর অস্কার কমিটির ওপরে বিরক্ত হওয়াই স্বাভাবিক। দারুণ একটা সিনেমা, অথচ শুধু সেরা চলচ্চিত্র মনোনয়ন পেয়েছে! শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও পরিচালক বিভাগেও মনোনয়ন পেতে পারত। যে কারো ভাল লাগবে এভা ডুভার্নি পরিচালিত চলচ্চিত্রটি।
দ্য থিওরি অব এভরিথিং : জেমস মার্শের পরিচালনায় বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা নিয়ে এটি নির্মিত। সিনেমা হিসেবে যতটা ভাল, তার চেয়ে বেশি ভাল মূল চরিত্রে অভিনয়কারী এডি রেডমাইনের অবিস্মরণীয় ও দুর্দান্ত অভিনয়! একটা সময় মনে হচ্ছিল আসলেই স্টিফেন হকিংকে দেখছি! স্টিফেন হকিংয়ের মতো অভিনয় করতে চার মাস রিহার্সাল করেছেন তিনি। স্ত্রী চরিত্রেও পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন ফেলিসিটি জোনস।
হুইপল্যাস : আরেকটা অসাধারণ অভিনয়ের সিনেমা! জে কে সিমনসকে স্পাইডারম্যান সিরিজে শুধু চিৎকার করতে দেখে যারা অভ্যস্ত তারা এই সিনেমা দেখলে বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খাবেন! শেষের ২০ মিনিট সবচেয়ে দুর্দান্ত। সেরা সম্পাদনা বিভাগে পুরস্কার পাওয়ার ভাল যোগ্যতা আছে, আর অভিনয়ের দিক থেকে তো আছেই। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন ডেমিয়েন চাজেলে।
বার্ডম্যান : ‘পিস অব আর্ট’ জিনিসটা অনেক দিন ধরে হলিউডের কাছে পাওয়া যাচ্ছিল না। শুধু কমিকস আর সিজিআইয়ের কারসাজি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হওয়ার অবস্থা! অবশেষে ক্লান্তি দূর করল ‘বার্ডম্যান’, পুরোটাই পিস অব আর্ট! সিনেমার সেরা দিক হল মেকিং; ১১৯ মিনিটের সিনেমা প্রায় পুরাটাই আনকাট! দেখে মনে হবে জাস্ট চার বা পাঁচ জায়গায় কাট করা হয়েছে, অথচ কাট ছিল ১৬টি। অভিনেতা দৌড়াচ্ছেন, ক্যামেরাও তার পিছে দৌড়াচ্ছে— কাট বলার নামগন্ধ নাই।
সেরা চিত্রগ্রহণে পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা আছে এই সিনেমার। ড্রাম দিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বেশ ভাল লেগেছে। সঙ্গে তো ছিলই মাইকেল কেটনের দারুণ অভিনয়। একে মাইকেলের আত্মজীবনীও বলা যায়। এই মানুষটা এক সময় ব্যাটম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, অথচ ব্যাটম্যান বললে আমরা সবাই এখন ক্রিশ্চিয়ান বেলকে বুঝি। হারানো খ্যাতি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা ও নিজের যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টায় একজন মানুষ কী করতে পারে— সেই চরিত্রে মাইকেল দারুণ অভিনয় করেছেন। সিনেমার সমালোচকদের সমালোচনা করেও একটা লাইন আছে। মাস্ট সি মুভি! তবে সবার ভাল লাগবে না, অনেকের দুর্বোধ্য লাগবে, বিশেষ করে সিনেমার এন্ডিং। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন আলেজান্দ্রো গনজালেস ইনারিতু।
আমেরিকান স্নাইপার : বেশ ভাল রকমের প্রোপাগান্ডামূলক সিনেমা। না দেখলেও তেমন ক্ষতি নাই। ব্রাডলি কুপারের অভিনয় ভাল ছিল, তবে এমন আহামরি কিছু না যে ছয়টি বিভাগে অস্কারের মনোনয়ন দিতে হবে! গার্ডিয়ানসহ আরও বেশকিছু মিডিয়া সিনেমাটির অনেক সমালোচনা করেছে। আইএমডিবিতে অনেকে যাচ্ছেতাইভাবে গালাগালি করছে। ক্লিন্ট ইস্টউড যদি এ ধরনের প্রোপাগান্ডার সিনেমা বানান, তাহলে ভক্তদের ভালবাসা আর শ্রদ্ধা দুটোই বাতাসে মিলিয়ে যেতে খুব একটা সময় লাগবে না। দেখা যাবে দিন শেষে এই সিনেমাই বেশিরভাগ পুরস্কার নিয়ে গেছে। এর আগেও একই ধরনের হার্ট লকার টাইপ সিনেমা অস্কার নিয়ে গেছে।