নাশকতায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানি ও অন্যান্যভাবে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন বিএনপি-জামায়াত জোট এই নাশকতা করছে? তারা জানে গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ৫ বছর কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন এই নাশকতা? কেউ কেউ এই কার্যক্রমকে রাজনৈতিক কার্যক্রম বলতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের বন্ধের আবারো আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নাশকতা ও হত্যা বন্ধ না হলে সরকার সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বুধবার সংসদে তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য মো. মনিরুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৫২ দিন ধরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট হরতাল-অবরোধের নামে দেশে এক চরম নৈরাজ্যের সৃষ্টি করছে। ক্ষমতার লিপ্সায় অন্ধ হয়ে তারা দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ, দেশের নিরপরাধ সাধারণ নারী-পুরুষ এমনকি নিষ্পাপ শিশুদেরকেও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে।”
তিনি বলেন, “পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম হত্যা প্রক্রিয়া হলো আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা। আর সেই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা আরোহণের চেষ্টা কোন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ হতে পারে না। পেটের তাগিদে কাজ করতে বেরিয়ে গত ৫২ দিনে ১০১ জন নিরীহ মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে যাদের অধিকাংশ আগুনে পুড়ে মারা গেছে। পেট্রলবোমাসহ নানা ধরনের নাশকতায় সহস্রাধিক ব্যক্তি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। ১ হাজার ১৭৩টি যানবাহন আগুনে পুড়ে গেছে ও ভাঙচুর করা হয়েছে। ৬টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, ২৫ দফায় ট্রেনে নাশকতা হয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি-জামায়াত পরস্পরের দোসর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যুদ-, ২ জনকে আমৃত্যু কারাবাস, এক জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি সম্পূর্ণ অনুসরণ করে এই বিচার সম্পন্ন হয়েছে। মৃত্যুদ- প্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র ১ জনের রায় কার্যকর করা হয়েছে। বাদবাকিদের রায় আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কার্যকর করা হবে। এই রায়গুলো বাস্তবায়ন বন্ধ করা তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।”
তিনি বলেন, “বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার পুত্রের দুর্নীতি সংক্রান্ত নয়টি মামলা আদালতে বিচারাধীন। শুধুমাত্র জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের বিচার চলছে। এই মামলা বিলম্বিত করার জন্য নানা রকম কারণ দেখিয়ে মামলায় বার বার সময় নেয়া হয়েছে। এই মামলার সাজা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট নাশকতা করছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এছাড়াও বিভিন্ন দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের আরো অনেক মামলা বিএনপি জোটের নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। এই মামলাগুলো থেকে বাঁচার জন্য তারা পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ মারছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি নেত্রী সমপ্রতি আন্দোলনে ৭ দফা দাবি দিয়েছে। এর মধ্যে জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য কোনো দাবি নেই। সব দাবি ব্যক্তি স্বাথের্র দাবি। আর এ কারণেই জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। গত ২২ ও ২৩ ফেব্র“য়ারিতে তারা দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু কোনো বিক্ষোভ হয়নি। বিএনপি ৫২ দিন ধরে অবরোধ দিয়েছে। প্রায় সকল কার্যদিবসে হরতাল দিয়েছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে দেশব্যাপী যানবাহন চলছে, ঢাকা শহরে হরতাল-অবরোধেও যানজট হচ্ছে, শুধুমাত্র দূরপাল্লার যানবাহন কম চলছে। জনসম্পৃক্ততা বিহীন এই কার্যক্রমে তাই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জামায়াত-শিবিরের কর্মী, বিএনপির বিপথগামী কিছু লোক এবং সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই নাশকতা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, “এ সকল কার্যক্রম দেশের প্রচলিত আইনে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার উপযোগী অপরাধ। আমি বিএনপি’র নেত্রীকে বলতে চাই এ দেশের মানুষ অত্যন্ত বুদ্ধিমান তারা আপনার ব্যক্তি স্বাথের্র আন্দোলনে নেই। আপনার নেতা-কর্মীরা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের বিকাশমান অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এ আন্দোলন কার স্বার্থে করা হচ্ছে- এটি আজ সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসা। দেশের প্রায় ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভাগ্য নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। নিজের নাতি-নাতনি সন্তানের শিক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সাধারণ নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার এ প্রক্রিয়া চলতে দেয়া যায় না। এ জন্য জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি বজায় রাখার লক্ষ্যে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনী পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী, অর্থায়নকারী বা পরিকল্পনাকারীদের কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে। প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সব ধরনের জঙ্গি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ওয়ারেন্টভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামীসহ নিয়মিত মামলার আসামী গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং মাদকদ্রব্যসহ সব ধরনের অবৈধ মামলামাল উদ্ধারকল্পে পুলিশের নিয়মিত অভিযান ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।”
তিনি বলেন, “জাতীয় মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, নগর ও মহানগরগুলোতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, এপিবিএন, স্থানীয় র্যাব বিজিবি ও স্থানীয় জেলা প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করছে। ”
শেখ হাসিনা বলেন, “রেলপথ ও রেলযাত্রী সাধারণের সার্বিক নিরাপত্তায় রেলওয়ে পুলিশ, আনসার ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী সমন্বয়ে কাজ করছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নৌপথের নিরাপত্তা অধিকতর জোরদার করার লক্ষ্যে নৌ পুলিশ সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। শিল্প এলাকায় সার্বিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শিল্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করছে। পর্যটন এলাকার আইন-শৃংখলা রক্ষার লক্ষ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।”
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগসহ সব ধরনের নাশকতা রোধকল্পে নিরাপত্তা জোরদার ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “সকল প্রকার নাশকতা, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সহিংসতা প্রতিরোধ করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে সারাদেশে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নাশকতা সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতারে সহায়তা বা তথ্য প্রদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে এবং পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে।”