স্টিফেন হকিংয়ের সাথে কিছুক্ষণ

Stephenসোহাগ আওয়াল: কেমব্রিজে আমার পিএইচডির এর শেষ বর্ষ চলছে। লেখালেখি, গবেষণা আর আন্ডারগ্রাজুয়েট এর ছাত্র ছাত্রীদের সপ্তাহে ২ দিন ব্যাবহারিক ক্লাস নিতে হয়। শত ব্যাস্ততার মধ্যে কিছুদিন আগে কলেজ থেকে মেইল করছে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে (20 February, 2015, Churchill College, University of Cambridge) কনফারেন্স এ যোগ দেয়ার জন্য।
কনফারেন্স ডিনার এর অতিথি স্টিফেন হকিং। সারাদিন ক্লাস নিয়ে বিকালে গেলাম কনফারেন্স এ যোগ দিতে। চমৎকার বিষয়, ‘Moving Mountains Making the Impossible Possible with Exercise’ । যারা Chronic Disease এ ভুগছে তাদের কে কিভাবে মেডিসিন এবং ব্যায়াম এর মাধ্যমে সুস্থ রাখা যায় এ বিষয় এর উপর। গবেষকরা খুব চমৎকারভাবে দেখিয়েছে প্রতিদিন মাত্র ২০ মিনিটের ব্যায়াম (হাটা, বাইসাইকেল চালানো) কিভাবে আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে, কিংবা কিভাবে ওষুধের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে।
স্টিফেন হকিং এর সাথে দেখা হবে ভেবে উচ্ছ্বাসিত হয়েছি। কেমব্রিজে আসার পর অনেক বিখ্যাত গবেষকদের সাথে সাক্ষাত এবং কথা বলার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু স্টিফেন হকিং এর সাথে সাক্ষাত করা বাকি ছিল। Churchill College এর স্কলার হওয়ার কারনে সুযোগটা পেয়ে গেলাম। মনে পড়লো অতীতের কথা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এ Undergrad করার সময়কার কথা। সে সময় Stephan Hawking এর বিভিন্ন গবেষণা নিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করতো মাহবুব এ সুবহানী স্যার। তখন স্বপ্নেও ভাবিনি এই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর সাথে আমার দেখা হবে, কথা হবে। ডিনার এর সময় স্টিফেন হকিং এর উৎসাহমূলক বক্তব্য, শুরুতেই Don’t lose your hope, be brave, তারপর, তাঁর পথ চলার গল্প।
অবাক হয়ে দেখলাম, একজন সম্পূর্ণ প্যারালাইসড মানুষ কিভাবে এতো বড় বড় সব থিওরি দিতে পারেন। আসলে মানুষের পক্ষে সবই করা সম্ভব। সুযোগ হয়েছে তাঁর সাথে কথা বলার, আমার দেশকে নিয়ে, গবেষণা নিয়ে, খুব মনোযোগ দিয়ে বাংলাদেশ আর আমার গবেষণার ব্যাপারে শুনল। আমি গবেষণা করি সম্পূর্ণ নতুন একটা বিষয় নিয়ে, প্রতিটি জীব এর দেহের মধ্যে একটা ঘড়ি আছে, যার মাধ্যমে তারা সময়কে অনুধাবন করে বিভিন্ন কার্যক্রম করে। টাইম, স্পেস, আর মেটাবলিক প্রক্রিয়ার মধ্যে যে পরস্পর এর যোগাযোগ আছে এই ব্যাপারটা তাঁকে আকৃষ্ট করেছে বলে মনে হল। এছাড়া কিছুদিন আগে স্টিফেন হকিং এর মেয়ে বাংলাদেশ থেকে ঘুরে গেছেন। স্টিফেন হকিং উচ্ছ্বাসিত ভাবে ফেসবুক এ পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে পাওয়া কিছু উপহার নিয়ে।
সব মিলিয়ে বেশ কিছুক্ষন সময় তাঁর সাথে আলাপচারিতায় কেটেছে। বিশ্ববিখ্যাত গবেষক দের এই মিলন মেলা থেকে নতুন একটা অভিজ্ঞতা, আর জীবন এর নতুন একটা দর্শন নিয়ে বাসায় ফিরলাম, মনে হলে বাংলাদেশ এর এই অবস্থায় সবাই কে বলি আশা হারিও না বন্ধু, সাহসী হও, বাংলাদেশ অবশ্যই এই ক্লান্তিকাল পার করবে, আমাদের আছে গৌরবোজ্জ্বল, সাহসী অতীত, আছে বিপুল সম্ভাবনা, আমরা এগিয়ে যাবো নিশ্চয়ই।
লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button