বিবিসি ট্রাস্ট বিলুপ্তির সুপারিশ ব্রিটিশ এমপিদের

BBCবিশ্বসেরা গণমাধ্যম বিবিসি’র নানান অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে প্রতিষ্ঠানটির ‘বিবিসি ট্রাষ্ট বিলুপ্তির সুপারিশ করেছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট মেম্বাররা। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি) আর্থিক ও সম্পাদকীয় ক্ষেত্রে নানা ‘ভুল’ করেছে বলে অভিমত দিয়েছেন ব্রিটিশ এমপিরা। একটি পার্লামেন্টারি কমিটি এক প্রতিবেদনে এ কথা বলে সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা সংস্থা ‘বিবিসি ট্রাস্ট’ বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। বিবিসির তহবিল ও ভবিষ্যৎ বিষয়ে বড় ধরনের এ প্রতিবেদনটি গতকাল বৃহস্পতিবারই প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। খবর দ্য গার্ডিয়ান-এর।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও ক্রীড়াবিষয়ক কমিটি ১৬৬ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বিবিসির কর্মকাণ্ডের ওপরে আরও কড়াভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাহীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের পদ্ধতি এবং প্রয়াত ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক লর্ড ম্যাকালপাইনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলাসহ নানা বিষয়ে সমালোচনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিবিসি ট্রাস্ট বিলুপ্ত করে একটি একক বোর্ড গঠন করে তার কাছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার ভার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর বাইরে একটি অধিকতর কঠোর পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টিং কমিশন গঠন করতে বলা হয়েছে, যেটি একটি বাহ্যিক পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে।
এমপিরা বাধাহীনভাবে বিবিসির আর্থিক হিসাবপত্র খতিয়ে দেখার সুযোগ দেওয়ারও দাবি করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরেই এর বিরোধিতা করে আসছে।
কমিটির চেয়ারম্যান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি জন হোয়াইটিংডেল বলেন, ‘এই ট্রাস্ট প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই একে বিলুপ্ত করতে হবে। এটা বিবিসির সঙ্গে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ রয়ে গেছে। তারা একটি সরকারি সেবাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবিসির দক্ষতার কার্যকর পর্যবেক্ষক হওয়ার পরিবর্তে জবাবদিহির বিষয়টিকে আরও অস্পষ্ট করে তুলেছে।… এত বড় আকারের ও ব্যয়বহুল একটি সংস্থা হিসেবে বিবিসিকে অবশ্যই সবচেয়ে কঠিন নিরপেক্ষ তদন্তের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’
কমিটির লেবার পার্টির সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী বেন ব্র্যাডশ বলেন, ‘এই ট্রাস্ট একটা ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান। তাই একে বিদায় নিতে হবে। এর নিয়ন্ত্রণ কাঠামো উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না, এখনো নেই।’
প্রতিবেদনটির বিষয়ে বিবিসি ট্রাস্টের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘এই প্রতিবেদন ট্রাস্টের স্বীকৃত বিষয়গুলোকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এগুলো আমরাও মোকাবিলার চেষ্টা করছি। আমরা একমত যে এখানে একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ পরিচালনা ব্যবস্থা থাকবে এবং বিবিসির কর্মকাণ্ডের ওপরে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ হবে।’ প্রতিবেদনটিকে ‘চিন্তাশীল’ এবং এটি বিবেচনার দাবি রাখে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিবিসির নির্বাহী বিভাগও প্রতিবেদনটিকে স্বাগত জানিয়েছে। বিশেষ করে লাইসেন্স ফির ভবিষ্যৎ নিয়ে পর্যবেক্ষণগুলো যৌক্তিক বলেই মন্তব্য করেছে তারা। বিবিসির কৌশল ও ডিজিটাল-সংক্রান্ত পরিচালক ও সাবেক লেবার সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রী জেমস পারনেল বলেন, ‘লাইসেন্স ফি নবায়নের বিষয়টি আধুনিক করার বিষয়ে কমিটি যে মন্তব্য করেছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। আমরাও এর পক্ষে বলেছি।’
প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে গিয়ে কমিটির চেয়ারম্যান হোয়াইটিংডেল বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে বিবিসি নিজের সৃষ্ট নানা সমস্যায় ভুগছে। তবে এর পরও এটি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও বিশ্বাসযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান। দেশে-বিদেশে তারা নানা প্রত্যাশা পূরণ করছে। তবে যেখানে একটি প্রতিষ্ঠান জনগণের অর্থের প্রায় ৪০০ কোটি ইউরোর গ্রহীতা, সেখানে সেই অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হয়, কীভাবে প্রতিষ্ঠানটি চলে এবং কীভাবে তাদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা হয়, এমন বড় বড় প্রশ্ন তুলতেই হবে।’
এমন বক্তব্যের জবাবে বিবিসির কর্মকর্তা পারনেল বলেন, ‘এখানে অনেক ভুল হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা ভিন্নমত করছি না।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button