মক্কা ক্লক রয়্যাল টাওয়ার : পৃথিবীর বৃহত্তম ঘড়ি
আইয়ুব আহমেদ দুলাল: পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম ঘড়ি এখন পুণ্যভূমি সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অবস্থিত। হেরেম শরিফ তথা মক্কা মসজিদের পাশেই, ৫০ মিটার দূরে ‘আবরাজ আল-বাইত হোটেল’এর ওপর দণ্ডায়মান সুদৃশ্য টাওয়ারে ঘড়িটি স্থাপিত। একে ‘মক্কা ক্লক রয়্যাল টাওয়ার’ (সংক্ষেপে ‘মক্কা-টাওয়ার’) বলা হয়। শহরের বেশির ভাগ মানুষই সময় দেখার প্রয়োজন হলে সেই ঘড়ি দেখে সময় মিলিয়ে নেয়, হাতঘড়ি কিংবা মোবাইল স্ক্রিন দেখার প্রয়োজন পড়ে না। প্রতি বছর মক্কা শরিফে লাখ লাখ মুসলমানের যাতায়াত হয়। অনেকেই জানে না যে, সেই সুবিশাল ঘড়িটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘড়ি। ওটা শুধু বড়ই নয়, নতুনত্বের দিক দিয়েও শ্রেষ্ঠ। এর নির্মাণকাজ ২০০২ সালে শুরু হয়ে ২০১০ সালে সম্পন্ন হয়েছে। তার পর দুই বছর লাগিয়ে ঘড়ির বিভিন্ন ফাংশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২০১২ সালে ফাইনালি উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি চতুর্মুখী ঘড়ি, শহরের চারপাশ থেকেই দেখা যায়। রাতে ১৭ কিলোমিটার এবং দিনে ১২ কিলোমিটার দূর থেকে স্পষ্টভাবে ঘড়িতে সময় দেখা যায়।
পৃথিবীর বৃহত্তম এই ঘড়িতে ৯০ মিলিয়ন রঙিন কাচের টুকরো এবং দুই মিলিয়ন লিড-লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। চার পাশে বড় মোজাইকের শিলালিপির ওপর শৈল্পিক কারুকার্যে অলঙ্করণ করে ‘আল্লাহু’ নামটি লেখা হয়েছে, যা শহরের চার পাশ থেকে একই রকম দেখা যায়। ঘড়িতে সাদা ও সবুজ রঙের মিলিয়ে প্রায় ২১,০০০ বাতি ব্যবহার করা হয়েছে। মুসলমানদের বাধ্যতামূলক ইবাদত নামাজ। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ফাশলাইটের মাধ্যমে আলো জ্বালিয়ে নামাজের ইঙ্গিত দেয়া হয়। মুসলমানদের বিশেষ বিশেষ উৎসবে আকাশের দিকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ১৬ ধরনের রঙিন আলোর বিচ্ছুরণ ঘটানো হয়। পৃথিবীর বৃহত্তম এই ঘড়িটি আরব-সময়সূচি অনুযায়ী চলে, যা গ্রিনিচ সময় থেকে তিন ঘণ্টা এগিয়ে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার। ডিজাইন করেছে সুইস ও জার্মানির প্রকৌশলীরা। এর উচ্চতা ৬০১ মিটার, ব্যাস ৪৩ মিটার (১৩০ ফুট)। এত দিন বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম ঘড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল ইস্তাম্বুলের সিবাহির মলের ঘড়ি, যার ব্যাস ৩৬ মিটার। তাকে টপকে ২০১২ সালে সরকারিভাবে উদ্বোধনের মাধ্যমে মক্কা টাওয়ারের ঘড়ি প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে। এটি লন্ডনের বিখ্যাত বিগবেনের চেয়ে প্রায় ছয় গুণ বড়। পৃথিবীর সবচেয়ে সুউচ্চ দালান হলো দুবাইয়ের বুর্জ্য-খালিফা, আবরাজ আল-বাইত হোটেলটি পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় সুউচ্চ দালান হিসেবে ধরা হয়, যার ওপর ঘড়িটি স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন হজযাত্রী ছাড়াও প্রায় দুই মিলিয়ন দর্শনার্থী বা ওমরা হজযাত্রী মক্কায় আসেন, কেউ কেউ টাওয়ারের ওপর উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়ে পুরো মক্কা-শহর ও তার আশপাশের অঞ্চলগুলো ক্ষুদ্র জীবনের বিশেষ মুহূর্তের স্মৃতিস্বরূপ দেখে নেন।