আরব নিউজের বিশ্লেষণ
মধ্যপ্রাচ্যে প্রত্যাশিত ভূমিকায় তুরস্কের পুনরাগমন সময়ের দাবি
তুরস্ক ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কে ভালোবাসা, সমাদর ও ক্রোধ- সবই দেখতে পাওয়া গেছে পেছনের দশ বছরে। আঙ্কারার মর্যাদা মধ্যপ্রাচ্যে সবসময় স্বীকৃত হয়েছে। সৌদি আরবও আঙ্কারার সঙ্গে সম্পর্ককে সবসময় মূল্যবান জেনেছে। বিরোধ সত্ত্বেও সক্রিয় রাজনৈতিক ভূমিকা আঙ্কারা এযাবত পালন করে এসেছে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন প্রশ্নে তুরস্কের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভূমিকা সম্বন্ধে আমাদের অনেকেরই সীমিত জ্ঞান রয়েছে।
লিবিয়ায় গাদ্দাফির উৎখাতের বিরুদ্ধে ছিল তুরস্ক; কিন্তু আসাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে আঙ্কারার অবস্থান থেকেছে অনমনীয়। ন্যাটোর সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ইরানের সহযোগীর ভূমিকায় আঙ্কারা কাজ করেছে পুরো একটি দশক ধরে। ইরানে আন্তর্জাতিক অবরোধ চলছে জেনেও মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিয়েছে তুরস্ক। ব্রাদারহুডের সদর দফতর তুরস্কে কায়েম করতে দিয়েছে আঙ্কারা। প্রচার-প্রচারণা ব্রাদারহুডকে চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে নিজেদের মাটি থেকে।
তুরস্ক ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কে বড় কোনো বিসম্বাদ নেই। রাষ্ট্রীয় বা আঞ্চলিক স্বার্থসংক্রান্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিরোধ এ পর্যন্ত উভয় পক্ষের সম্পর্কে মাথা তোলেনি। আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তুরস্ক হস্তক্ষেপ করে- উপসাগরীয় পক্ষ থেকে এই একটি মাত্র অভিযোগ উঠতে শোনা যায়। লক্ষণীয় ব্রাদারহুডকে আঙ্কারার সমর্থন কোনো কাজে লাগেনি। অনেকে বলেন, ব্রাদারহুডকে আঙ্কারা সমর্থন দেয়ার কারণেই সংগঠনটির বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ মিসর প্রশাসন কঠোর করেছে।
তুরস্ক সম্পর্কে পর্যবেক্ষকদের মূল্যায়ন ও প্রত্যাশা বেশ উঁচু। তাদের মতে, এ অঞ্চলে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব তুরস্ক বিস্তার করতে পারত; যদি মামুলি কিছু গোষ্ঠীর সঙ্গে মৈত্রী গড়ার চেষ্টা আঙ্কারা বাদ দিত এবং আরবদের ঘরোয়া ব্যাপারে নাক গলানো বন্ধ করে দিত। তাদের মতে, রণকৌশলগত সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস ঘটিয়ে এবং অরাজকতা ও যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়ে এ অঞ্চলে সুসামঞ্জস্য সম্পর্ক প্রবর্তনের সামর্থ্য তুরস্কের ছিল। কিন্তু সেই সামর্থ্যরে সদ্ব্যবহার তুরস্ক করছে না বলে দুঃখ করেছে তারা।
পশ্চিমের সঙ্গে তেহরানের পারমাণবিক সমঝোতা হয়ে গেলে ইরানের আঞ্চলিক সম্প্রসারণ প্রবণতা রোধে পশ্চিমা ব্লকের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার তুরস্কের সুযোগ রয়েছে। এমন নয় যে, ইরানী সম্প্রসারণবাদী প্রবণতা থেকে তুরস্ক নিজে মুক্ত রয়েছে। আঙ্কারার চোখের সামনে ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান তার প্রভাব খাটিয়ে চলেছে।
তুরস্কের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জড়িত রয়েছে ঐ দুটো দেশের ঘটনাবলীর সঙ্গে। দীর্ঘ একশ’ বছর তুরস্কের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তৃত ছিল মিসরীয় রাজনীতিতে। মিসর সম্পর্কে বৈরী অবস্থান নিয়ে তুরস্ক লাভবান হতে যাচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন, কায়রো-আঙ্কারার সম্পর্ক দুশমনের সম্পর্কে পরিণত হয়নি- নগণ্য কিছু প্রশ্নে সম্পর্কে একটু চিড় ধরেছে মাত্র। ইরানের সঙ্গে এবং ইরানের ইরাকী ও লেবানীজ মিত্রদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর সম্পর্ক পুনর্নির্ণয়ে তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ এখন পর্যন্ত অপেক্ষিত রয়েছে।
সিরিয়ায় পরিস্থিতি পাল্টাতে প্রত্যাশার অনেক বেশি ভূমিকা এখনো পালন করতে পারে তুরস্ক। আঞ্চলিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে তুরস্ক তার মূল্যায়ন বদলাত- এটিই ছিল অনেকের কাম্য। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বহু বিষয়ে আঙ্কারার সঙ্গে সম্পর্কের সংশোধন ও উন্নয়ন চায় মিসর এবং জর্দান। উপসাগরীয় ৯টি দেশের সঙ্গে তুরস্ক সহযোগিতার সম্পর্ক নির্মাণে এগিয়ে আসবে বলে তাদের বিশ্বাস। ইরানী বিস্তারবাদ খর্ব করতে তারা পারঙ্গম হবে। শুধু তাই নয়, ফিলিস্তিনী সমস্যার স্থায়ী মীমাংসায় তৎপর হওয়ার জন্য পশ্চিমের ওপর তারা কার্যকর প্রভাবও ফেলতে পারবে। ইরাক ও সিরিয়ায় নৈরাজ্য বিশৃঙ্খলার সমাপ্তি দেখতে পাওয়াও সম্ভব হবে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বলকান ও ককেশাসের দক্ষিণাঞ্চলেও আঙ্কারার করণীয় আজও অসমাপ্ত রয়েছে।