ফের নিষিদ্ধ হতে পারে মুসলিম ব্রাদারহুড
এর আগে ১৯৫৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৫৭ বছর নিষিদ্ধ ছিল মুসলিম ব্রাদারহুড দেশে বিরাজমান সঙ্কট ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে রোববার বৈঠকে বসছে অন্তবর্তী মন্ত্রিপরিষদ। শনিবার প্রধানমন্ত্রী হাজেম আল-বেবলাবি মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখপাত্র শেরিফ শায়োকি বলেন, ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
“যাদের হাত অনবরত রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে আর যারা রাষ্ট্র ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অস্ত্র তাক করে আছে তাদের সঙ্গে কোনো সহাবস্থান নয়,” বলেছেন প্রধানমন্ত্রী বেবলাবি।
এর আগে ১৯৫৪ সালে মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করে মিশরের সামরিক সরকার। এরপর গণবিক্ষোভের মুখে ২০১১ সালে দেশটির তিন দশকেরও বেশি সময়ের শাসক হোসনি মোবারকের পতন হলে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আবারও ফিরে আসে ব্রাদারাহুড।
একটি বেসরকারি সংস্থা হিসেবে আবার নিবন্ধিত হয় ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মৌলবাদী গোষ্ঠীটি। এ সময় গোষ্ঠির রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি গঠন করে রাজনৈতিক দল হিসেবে তার নিবন্ধন নেয়।
এরপর মিশরের ইতিহাসে প্রথম অবাধ গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠণ করে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির প্রার্থী ব্রাদারহুড নেতা মুরসি। কিন্তু এক বছর না যেতেই তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
তার সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পরিচালনায় অদক্ষতা ও দলীয় কর্মসূচিকে প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগ এনে কায়রোর তাহরির স্কয়ারে কয়েকদিন টানা বিক্ষোভ করে লাখো মানুষ।
এরই এক পর্যায়ে গত ৩ জুলাই মুরসিকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকে এর প্রতিবাদে লাগাতার বিক্ষোভ করে আসছে মুসলিম ব্রাদারহুড।
তারা কায়রোর রাব্বা আল আদাবিয়া মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে মুরসিকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভ দমনে ২৭ জুলাই সেখানে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী, যাতে ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।
ওই ঘটনার পরেও অবস্থান ছাড়েনি মুরসি সমর্থকরা। এরপর তারা আদাবিয়া মসজিদ প্রাঙ্গণের পাশাপাশি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আরেকটি স্থানে অবস্থান নিয়ে লাগাতার বিক্ষোভ করতে থাকে।
এ দুই জায়গা থেকে তাদের সরিয়ে দিতে গত বুধবার অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। ওই অভিযানে অন্তত ছয়শ’ ৩৮ জন নিহত হয়।
এর প্রতিবাদে শুক্রবারকে ‘ক্ষোভ দিবস’ ঘোষণা করে বিক্ষোভের ডাক দেয় মুসলিম ব্রাদারহুড। ওই দিন জুমার নামাজের পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে কায়রো ও আশপাশের এলাকায় সান্ধ্য আইন জারি করে মিশরের অন্তর্বর্তী সরকার।
কিন্তু জরুরি অবস্থা উপেক্ষা করে জুমার নামাজের পর ব্রাদারহুডের কয়েক হাজার নেতাকর্মী রাজপথে নামলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়, যাতে নিহত হয় একশ’ ৭৩ জন। নিহতদের মধ্যে ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ বদির ছেলে আম্মার বদিও রয়েছেন। এদিন গ্রেপ্তার করা হয় এক হাজার চারজনকে।
এর প্রতিবাদে সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন বিক্ষোভ-সমাবেশের ডাক দিয়েছে ব্রাদারহুড। কিন্তু এসব রক্তপাতের জন্য ব্রাদারহুডকে দায়ী করে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে চান প্রধানমন্ত্রী বেবলাবি। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের রাজতান্ত্রিক দেশগুলোও ব্রাদারহুডের প্রভাব বৃদ্ধির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে বাধ্য করতে চান বেবলাবি। এরপর দেশব্যাপী এর সদস্যদের গণগ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ব্রাদারহুডের কার্যক্রম স্তিমিত করার প্রস্তাব করেছেন তিনি। এই সম্ভবনা বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মিশর সরকার।