আরব নিউজের বিশ্লেষণ
আরববিশ্বে বাস্তব বোধের উদয় হবে কবে ?
আরববিশ্বের সর্বত্র চলছে বিশৃঙ্খলা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আরব দেশগুলোর নেতৃত্বে অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঐকমত্যভিত্তিক কোনো পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না। জাতীয় অস্তিত্বের প্রশ্নে একেকটি আবর দেশ বিপর্যস্ত দেখা দিলেও তাদের রাষ্ট্রীয় ঐক্য বিপন্ন হওয়ার মুখে- পর্যবেক্ষকরা নির্দ্বিধায় এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন। ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের হামলায় ইয়েমেনী রাজধানীর পতন ঘটেছে। দেশটির আইনসম্মত শাসকরা এডেনে পালিয়েছেন। আরব উপসাগরে, ওমান উপসাগরে ও আরব সমুদ্রে ইরানের স্থলবাহিনী ও নৌবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক প্রশমনের আরব দেশগুলোর একটি অংশে চেষ্টা লক্ষ্য করা গেলেও আরব দেশগুলোর অংশ আঙ্কারার সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছে লিবিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আঙ্কারা সমর্থন জোগাচ্ছে অভিযোগ তুলে। সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে ও ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে ইসলামিক স্টেটের যুদ্ধ তান্ডব অব্যাহত দেখা যাচ্ছে। লেবাননে উত্তেজনা বিরাজমান। সেখানে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রশ্নে দশ মাস ধরে তিক্ত অচলাবস্থা। মার্কিন সুনজরে আসার জন্য ইসরাইলী-ইরানী প্রতিযোগিতা উত্তরোত্তর জোর ধরছে। সব মিলিয়ে আবরবিশ্ব এগিয়ে চলেছে বিপর্যয়ের পথে। অবস্থা সামাল দেয়ার কোনো চেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ইসরাইল, ইরান ও তুরস্ক অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করে চলেছে সুনির্দিষ্ট আঞ্চলিক রণকৌশল অনুসরণে।
নেতানিয়াহু ও তার উগ্র ডানপন্থী লিকুদ পার্টি অধিকৃত ফিলিস্তিনী ভূভাগ অঞ্চলে শান্তির খাতিরে ফিলিস্তিনীদের ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়নি কোনোদিনও। সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানে মধ্যপন্থী ফিলিস্তিনীদের সম্মতিকেও নেতানিয়াহু সরকার পাত্তা দিতে প্রস্তুত নয়। দ্বিরাষ্ট্রিক নিষ্পত্তি ফিলিস্তিনীদের চরম ডানপন্থী গোষ্ঠীটিও মানতে প্রস্তুত নয়। তারা সরাসরি সমর্থন পাচ্ছে ইরান থেকে। ইরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বোঝাপড়া যথাবস্থায় বহাল রেখে মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখছে আগ্রহী ওবামা প্রশাসন। ওয়াশিংটনের এই অবস্থানের নেতানিয়াহু ও তার প্রশাসনবিরোধী। ওয়াশিংটনের ওপর নেতানিয়াহুর চাপ অব্যাহত রয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনে সুনজরে থাকার জন্য ইরান ও ইসরাইল প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। ওদিকে ইসরাইলে নির্বাচন ক্রমে ঘনিয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে আরবদের লাভের খাতা শূন্য থেকে যাচ্ছে। ওবামা সামনের নির্বাচনে জিতলে আসল লাভ হবে ইরানের। অন্যদিকে নেতানিয়াহুপন্থী রিপাবলিকানরা মার্কিন কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কট্টর ইসরাইলী ডানপন্থীদের অনমনীয়তা আরো অনঢ় দেখা দেবে। বক্তব্য ও অবস্থানে ইরান আগের তুলনায় অনেক বেশি স্পষ্ট ও বোধগম্য। ইরানী সমর্থনে ও সহযোগিতায় মিলিশিয়ার উল্লেখযোগ্য সরকার সমর্থক বাহিনী গড়ে উঠেছে ইরাক ও সিরিয়ায়। কিন্তু বিশেষভাবে লক্ষণীয় এই মিলিশিয়া দল এবং তেহরান ও ওয়াশিংটনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ইরাকের নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনী আইএসয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে না। আইএসয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলের সুন্নি আরব উপজাতীয় যোদ্ধারা। ইরান এ পর্যন্ত আগাগোড়া সস্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ পাশ্চাত্যের সহযোগী হিসেবে নিজেকে তুলে দেখাতে সচেষ্ট রয়েছে।
বলা হচ্ছে, লেবাননে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইরান হতে দিচ্ছে না হিযবুল্লাহকে নির্বাচনের পথে বাধা হিসেবে খাড়া করে দিয়ে। সিরীয় প্রেসিডেন্ট আসাদের সমর্থনে ইরানের অবস্থান এবং ইরানের অনুসরণে হিযবুল্লার তৎপরতা লেবানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট সমর্থন করবেন না বলে জানা যাচ্ছে। অনেকে হিযবুল্লাহকে লেবাননে দখলদার শক্তি হিসেবে দেখেন। লেবানীজ প্রেসিডেন্ট পদে ইরানের আজ্ঞাবুসারী কোনো ব্যক্তিকে বসানো সম্ভব হলে সেক্ষেত্রে লেবাননে হিযবুল্লার অস্তিত্ব ও তৎপরতার পক্ষে সাংবিধানিক স্বীকৃতি অর্জন সহজ-সম্ভব হয়ে যাবে। অভিন্ন কথা প্রযোজ্য ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের ক্ষেত্রেও। মধ্যপ্রাচ্যের এমন রাজনৈতিক ও রণনৈতিক অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে প্রত্যাশিত ছিল মিসরের সক্রিয় ও সুপারিকল্পিতি কোনো ভূমিকা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যত বেশি আগ্রহী আঞ্চলিক ঘটনাবলীতে দেশটি এতখানি আগ্রহী দেখা দিচ্ছে না। মিসরীয় ভূমিকার এ অনুপস্থিতির কারণে আঞ্চলিক পরিস্থিতির প্রয়োজনে- পর্যবেক্ষকদের ভাষায় আবর দেশগুলোকে আঙ্কারার সঙ্গে কোনো এক ধরনের গভীর বোঝাপড়ায় না এসে। কোনো গত্যন্তর নেই। সিরিয়া ও ইরাকের অস্তিত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার জন্যও এই বোঝাপড়া অত্যন্ত জরুরি।