ধৈর্যশীলা বিধবা রমণীর মর্যাদা
উম্মে আইরিন: স্বামী স্ত্রী মিলে গড়ে ওঠে সুখের সংসার। তাই কেউ এক জন জগৎ থেকে বিদায় নিলে সংসারে বিষাদের কালো ছায়া নেমে আসে, আসে নানা ধরনের ঝামেলা। যদি সন্তান রেখে বাবা মৃত্যুবরণ করে তখন মা তার আঁচলের ছায়ায় রেখে সন্তানদেরকে বড় করে। মায়ের আদরে সন্তানেরা ভুলে যায় বাবার অনুপস্থিতির বেদনা। যদি মা সন্তানদের মুখ চেয়ে নিজের জীবন যৌবনের দাবি উপেক্ষা করে সন্তানের স্বার্থে মৃত স্বামীর সংসারে থেকে যায় তা হলে সে নারীর মর্যাদা অনেক বেড়ে যায়, সে অধিকারিনী হয় প্রচুর সওয়াবের; জান্নাতে নির্ধারিত হয় তার স্থান। এ সম্পর্কে একটি হাদিস-
হযরত আউফ ইবনে মালিক ( রাঃ) বলেন যে নবী করীম (সঃ) ফরমায়েছেন, আমি ও পান্ডুর চেহারার সেই রমণী যার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে অথচ সে তার সন্তানের মুখ চেয়ে ধৈর্য ধারণ করল (দ্বিতীয়বার বিবাহ করল না) জান্নাতে এই দুই (অঙ্গুলি)-এর মত পাশাপাশি অবস্থান করব। (আল-আদবুল মুফরদ- অধ্যায় ৭৮, ১৪১ঃ২)
এ সব বিধবা মহিলাদের শানে রসুলের আর এক খানা হাদিস- হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) – বর্ণিত হাদিসে আছে যে, হুযুর (সঃ) ফরমানঃ জান্নাতের দরজা সর্ব প্রথম আমিই খুলব। তখন দেখতে পাব যে, এক জন মহিলা আমার আগেই জান্নাতে প্রবেশ করতে উদ্যত। আমি জিজ্ঞেস করব; তুমি কে হে! আর জান্নাতে প্রবেশে তোমার এ তাড়াহুড়া কিসের ভিত্তিতে? সে জবাব দিবেঃ আমি সেই বিধবা নারী – এতিম সন্তানের প্রতি পালনের জন্য যে দ্বিতীয় বার বিবাহ না করে জীবনপাত করেছে।
হাদিসের রাবী হযরত আউফ ইবনে মালিক ( রাঃ) ৭৩ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তাঁর রেওয়ায়েতকৃত হাদিস সংখ্যা ৬৭।
হাদিস খানা স্বব্যাখ্যাত। এসব বিধবাদের মর্যাদা কেমন হবে তা রসুল (সঃ) জানিয়ে দিয়েছেন মেরাজ সম্পর্কিত এক হাদিসে। রসুলুল্লাহ (সঃ) মেরাজের রাতে বেহেশতে প্রবেশ করে এমন একজন মহিলার শব্দ শুনতে পান যে মহিলা যৌবনে বিধবা হয়ে সন্তানের লালন পালনের স্বার্থে তাদের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে সন্তান যুবক না হওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ আমি বেহেশতে প্রবেশ করলাম তখন একটি শব্দ শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম এ কিসের শব্দ? বলা হল এ হলো মিলহানের কন্যা রুমাইসার আওয়াজ।
কে এই মর্যাদার অধিকারিনী রুমাইসা? রুমাইসা উম্মে সুলাইম নামে পরিচিত ছিলেন। তার প্রিয় সন্তান আনাস শিশু থাকা অবস্থায় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন কিন্তু স্বামী ইসলাম গ্রহণ করলো না। সে বরং গোস্বাভরে বিদেশ চলে গেল এবং সেখানে এক আততায়ীর হাতে মারা গেল। ফলে যৌবন কালেই উম্মে সুলাইম বিধবা হয়ে গেলেন। অতঃপর তাঁর কাছে বিয়ের প্রস্তাব আসতে লাগল। কিন্তু তিনি এ কথা বলে সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন : আমি ততক্ষণ পর্যন্ত বিয়ে করব না যতদিন পর্যন্ত না আমার শিশু পুত্র মজলিসে উঠা বসা এবং কথা বার্তা বলার যোগ্যতা অর্জন না করে। এমনকি যখন আনাসই আমার বিয়ের ব্যাপারে রাজি হবে তখন বিয়ে করব।” অতঃপর হজরত আনাস যুবক হলে আবু তালহার সাথে রুমাইসার বিবাহ হয়। হযরত আনাস এমন বিরাট চিত্তের অধিকারিনী মায়ের জন্য দোয়া করতেন : আল্লাহ! আমার আম্মাজানকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। তিনি আমার লালন পালনও অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিধবাদের পক্ষে দ্বিতীয় বিবাহ না করে দৃঢ় থাকা খুব কঠিন ও সাহসিকতা পূর্ণ কাজ। আত্মীয় স্বজন সহ সমাজের উচিত তাদেরকে তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকার সাহস যোগানো। বিধবাদের সর্বাত্মক সাহায্য করা বিরাট পূণ্যের কাজ। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) নবী করীম (সঃ) -এর প্রমূখাৎ বর্ণনা করেন ঃবিধবা ও নিঃস্বদের প্রতিপালনে যত্নবান ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদে লিপ্ত ব্যক্তির সমতুল্য এবং সেই ব্যক্তির সমতুল্য – যে দিনে রোজা রাখে এবং রাতের বেলা নফল নামাযে লিপ্ত থাকে। (আল-আদবুল মুফরদ- অধ্যায় ৭৩)
আমাদের কালের সহ সমস্ত কালে যাদের মায়েরা তাঁদের জীবন যৌবনের সুখ শান্তি অসহায় সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের স্বার্থে এমন ভাবে কোরবানী করেছেন তাদের সবাইকে আল্লাহ জান্নাত দান করুন।