প্রতিকার নেই মাদকের বিষে নীল সমাজদেহ

মাদকাসক্তি এমন একটি বিষয় যার খবর গণমাধ্যমে কিংবা পাঠক মহলে তেমন গুরুত্ব পেতে দেখা যায় না। কিন্তু একটি জাতিকে পঙ্গু এমনকি জাতির জীবনীশক্তি ধবংস করে দিতে পারে এই ভয়াবহ নেশা। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশে প্রতিদিন নেশার পেছনে ব্যয় হচ্ছে ৭০ কোটি টাকা। এ হিসেবে বছরে ব্যয় ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশী। এদেশের ৬০ লাখেরও বেশী লোক মাদকাসক্ত। বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন হাসপাতালের শতকরা ১০ ভাগ রোগী হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিলে আসক্ত।
১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মাঝে মাদকাসক্তি সবচেয়ে বেশী। মাদকাসক্তের গড় বয়স ২২। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকের ব্যাপারে কৌতূহল ও এক ধরণের রোমাঞ্চকর অনুভূতি, হতাশা, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে অনেকে মাদকাসক্ত হয়। তরুণ বয়সীদের অনেকে ধূমপান থেকে ধীরে ধীরে অধিক মাদকতাপূর্ণ সামগ্রীর খোঁজে মাদক দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে অসৎ সঙ্গ বিশেষভাবে মাদকাসক্ত বন্ধুবান্ধবদের সাহচর্য তরুণ তরুণীদের এই ধবংসাত্মক পথে নামতে প্ররোচিত করে। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব মাদকদ্রব্য সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে হেরোইন, ফেন্সিডিল, গাঁজা, ঘুমের ওষুধ ইত্যাদি উলে¬খযোগ্য।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত ২/৩ বছরে অতীতের চেয়ে বেশী সংখ্যক টিনেজার গ্রেফতার হয়েছে মাদকদ্রব্য গ্রহণের অভিযোগে। এতে প্রমাণিত হয়, তরুণরা ক্রমবর্ধমান হারে মাদকাসক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারত অংশে বহু অবৈধ ফেন্সিডিল কারখানা গড়ে ওঠেছে। এসব কারখানায় উৎপাদিত ফেন্সিডিলের পুরোটাই পাচার হচ্ছে বাংলাদেশে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় এ ধরণের অবৈধ ও ক্ষতিকর মাদক কারখানা গড়ে উঠলেও তারা এ ব্যাপারে বিস্ময়করভাবে নিরব।
বাংলাদেশের মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ ও সরকারের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব ফেন্সিডিল কারখানার দু’একটি বন্ধ করে দিলেও এখনো এ ধরণের অগণিত কারখানায় ফেন্সিডিল তৈরী হচ্ছে। নানা কৌশলে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশে। বলা বাহুল্য, মাদকাসক্তি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। তরুণ যুবাদের মাঝে মহামারীর মতো ছড়াচ্ছে এই মাদকাসক্তির মহাব্যাধি। কিন্তু সেই তুলনায় সরকারী পর্যায়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল ও অপ্রতুল। ফলে প্রতি বছর লাখ লাখ তরুণ যুবা এই মারণ নেশায় আসক্ত হচ্ছে।
অনেকের মতে, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা বর্তমানে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দমনে যে শক্তি ব্যবহার করছে, এর সিকি ভাগ মাদকাসক্তি ও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন মারাত্মক অপরাধ নির্মূল বা দূরীকরণে ব্যবহার করলে, বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থেই সোনার বাংলাদেশ তথা ১৬ কোটির মানুষের একটি শান্তিপূর্ণ আবাসভূমিতে পরিণত হতো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দলীয় ও সংকীর্ণ স্বার্থে অন্ধ বর্তমান সরকার এবং রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা কি এমন হিতৈষী, মানবিক ও মহতী পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হবেন ?

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button