অক্সফোর্ডের ৭ ভয়ঙ্কর যৌন সন্ত্রাসী
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ: উন্নত বিশ্বের সকল আইন কানুন, গণতন্ত্রের সূতিকাগার থাকা সত্যেও, ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর একদল গ্যাং ভয় ভীতি, কৌশল, আর বদমায়েশীর মাধ্যমে অল্প বয়সী মেয়েদের ফুসলিয়ে নিয়ে এসে যৌন সন্ত্রাসের মাধ্যমে ছোট ছোট মেয়েদের হয়রানি শুধু নয়, তাদেরকে অত্যাচার, নির্যাতন করেছে দিনের পর দিন। অথচ আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যারা সেই পুলিশ প্রশাসন এই সব যৌন সন্ত্রাসীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিইয়ে আসার জন্য বিগত কয়েক বছর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন- এ নিয়ে বিবিসি, গার্ডিয়ান আর টেলিগ্রাফে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর সারা ব্রিটেনে তুলকালাম কান্ড ঘটে গেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়েদের সেক্স্যুয়ালি এসল্ট আর যৌন মিলনে করার অপরাধে অক্সফোর্ডশায়ারের সাতজন গ্যাং সদস্যের জেল হয়েছে ২০১৩ সালে। এ বিষয়ে যে রিভিউ নিয়ে গার্ডিয়ান এবং টেলিগ্রাফ রিপোর্ট করেছে, ৩০০ ভিক্টিম এই গ্যাং এর দ্বারা টার্গেট করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৯৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রোথারহামে ১,৪০০ অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের এসল্ট করেছে। রিভিউ রিপোর্ট ৩০০ এর অধিক ভিক্টিম অক্সফোর্ড শায়ারের ১৫ বছরের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের রেপ, টর্চার, এসল্ট করেছে, যা সোশ্যাল সার্ভিস বা পুলিশ এই অপ্রাপ্ত বয়স্কদের প্রটেক্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে- যা গার্ডিয়ান তাদের ইনভেস্টিগেশন এমন তথ্যাদি বেরিয়ে এসেছে।
একজন সিনিয়র ইনভেস্টিগেশন অফিসার গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, আপনি যদি মনে করেন আপনার সিটিতে কোন সমস্যা নাই, তারমানে আপনাকে কিছুই খুঁজতে হচ্ছেনা। ডিটেক্টিভ চীফ ইন্সপেক্টর সাইমন মর্টন বলেন, ভিক্টিম মেয়েরা একেবারেই শেষ হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ মেয়েরা অক্সফোর্ড শায়ারের ও আশেপাশের- যাদের গল্প বিবিসিতে গত ২০১৩ সালে প্রচারিত হয়েছে। সেই সব করুণ কাহিনী মানুষের মনুষ্যত্ব ব্যাপক নাড়া দিয়েছে আর ধিক দিয়েছে আমাদের সোশ্যাল সার্ভিস আর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের ব্যর্থতায়। যে সাতজনকে আদালত জেল দিয়েছেন, তাদের বেশীর ভাগ পাকিস্তানি অরিজিন। আখতার এবং আঞ্জুম দোরগা ব্রাদার, বাসাম এবং মোহাম্মদ কারার, কমর জামিল, জিশান আহমেদ, আসাদ হোসেন- এরা সবাই অক্সফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা, আদালত এদেরকে কমপক্ষে সাত থেকে বিশ বছরের জেল দিয়েছেন। ওল্ড বেইলি জাজ অবগত হয়েছেন, সাত সেক্স অফেন্ডার ছয় মেয়েকে- যাদের বয়স ১১ থেকে ১৫ বছর, তাদেরকে ড্রাগ, এলকোহল পানিয় পান করিয়ে জোরপূর্বক সেক্স কার্যক্রম করেছে, তাদেরকে শারীরিক নির্যাতন করেছে, সিগারেটের ছাঁকা ও আগুনে শরীর পুড়িয়েছে, নির্যাতন করেছে। এর মধ্যে ১২ বছরের একজন ভিক্টিম পুলিশের কাছে বলেছেন, কিভাবে ঐ কক্ষের পাশের কক্ষে এবরশন করেছেন- জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েছিলেন, বাধ্য হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, এই মেয়েদের এই গ্যাংরা তাদের অন্যান্য সাথীদের বা গ্যাংদের পয়সার বিনিময়ে দিতো, সেক্স করতে বাধ্য করতো, ক্রীতদাসের মতো, তাদেরকে তারা বিক্রি করে দিতো পয়সার বিনিময়ে।
থেমসভ্যালীর পুলিশ জুলাই ২০১৩ সাল থেকে আগস্ট ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৩ মাসের মধ্যে ২০০ থেকে ২,০০০ চাইল্ড এবিউসের রেকর্ড অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। নভেম্বরের ২০১২ সাল থেকে নভেম্বর ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০০ শিশুদের সন্দেহ তালিকায়- যাদের মধ্যে বার্কশায়ারে ২৫০, বাকিংহামশায়ারে ২৩৭, অক্সফোর্ডশায়ারে ২০৬ জন ভিক্টিম রয়েছেন। বিবিসি ও মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশের পর পরই ঐ সময়ের কাউন্সিলের চীফ এক্সিকিউটিভ জোয়ানা সিমন তার ২৫০,০০০ পাউন্ডের চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন লজ্জা ও মেয়েদের রক্ষায় ব্যর্থতার দায়ে অপমান মাথায় নিয়ে।
উল্লেখ্য থেমস ভ্যালী পুলিশের চীফ পুলিশ কনস্টেবল সারা থর্ণটন তার পদ থেকে সরে আগামী এপ্রিল থেকে ন্যাশনাল পুলিশ চীফ কাউন্সিলের চেয়ার হচ্ছেন। ২০১১ সালে তার নেতৃত্বাধীন ফোর্স ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলো এই মেয়েদের সেক্সুয়ালি এসল্টের জন্য জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন না করার জন্য, যদিও ভিক্টিমদের পরিবারের মধ্যে সুনির্দিষ্ট একজন ২০০৬ সালেই কমপ্লেইন করেছিলেন । এ ব্যাপারের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আজকে প্রকাশিত হবে। (বিবিসি, গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ, নিউজনাইট অবলম্বনে সংকলিত)