বিবিসি করল এমন ভয়াবহ প্রতারণা !
বর্তমান সময় মার্কেট-মিডিয়া এবং মিলিটারির। এই তিন করপোরেশন মিলে নিয়ন্ত্রন করছে পৃথিবী নামক এই গ্রহের প্রায় সাতশ কোটি মানুষের জীবন যাপন। মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে কি করবে এবং আগামীদিন সেই মানুষটিই কি ভাববে তাও নিয়ন্ত্রন করে এই করপোরেশনগুলো। মার্কেট(বাজার-অর্থনীতি=মুক্তবাজার অর্থনীতি) তার নিজের স্বার্থে জিইয়ে রাখে মিডিয়ার নানামুখী প্রতারণাকে। একই ভাবে মিডিয়াও মার্কেটের স্বার্থে সেনাকর্তৃত্বের সঙ্গে লিয়াজো বজায় রেখেই হাতে হাত ধরে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাতায়াত করে। তাই, স্বার্থগত কারণেই অনেক প্রতারণার আশ্রয় নিতে হয় এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
মার্কেট-মিডিয়া এবং মিলিটারির জন্য এখন সবচেয়ে বড় মুনাফাজনক ব্যবসা হলো ‘যুদ্ধ’। যুদ্ধে হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে, তাতে কিছু আসে যায় না করপোরেশনগুলোর। কারণ যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদী হলেই বাড়বে অস্ত্র বিক্রি, অস্ত্র বিক্রি বাড়লেই বাড়বে মৃতের সংখ্যা, এবং মৃতের সংখ্যা বাড়লে মিডিয়া সংবাদ প্রচার করতে পারবে এবং হুহু করে বাড়বে টিআরপি। যে মিডিয়ার টিআরপি(টার্গেট রেটিং পয়েন্ট) যত বেশি সেই মিডিয়ার গ্রহনযোগ্যতাও তত বেশি। ঠিক এমনিভাবে একটি বা গুটিকতক মিডিয়া যখন সাধারণের কাছে মুখোশ পরিহিত দূতের ন্যায় বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে নেয়, তখনই শুরু হয় আসল খেলা।
বর্তমান সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে এমনই ঘৃণ্য খেলা চালিয়ে যাচ্ছে অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সম্প্রতি ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থকে মাথায় রেখেই অপর এক ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘বিবিসি’র এরকমই এক প্রতারণার ঘটনা উন্মোচন করছে। (উল্লেখ্য, সম্প্রতি ব্রিটিশ সাংসদরা বিবিসি’র প্রচার কার্যক্রম বন্ধে একমত হয়েছেন)। ইরাক যুদ্ধের সময় ২০০৩ সালে মাক্রো ডি লাওরো নামের এক আলোকচিত্রী বাগদাদের ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণের ছোটো শহর আল মুসায়িব থেকে একটি গণহত্যার ছবি তোলেন। ইরাকের তৎকালীন শাসক সাদ্দাম হুসেইনের বাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার হয়েছিল দেশটির শিয়া মতাবলম্বীদের একাংশ। সেই ছবিতে দেখা যায়, নিজের স্বজনের লাশ খুঁজতে একটি ছোটো শিশু দৌড়ে লাশের সাড়ি পাড়ি দিচ্ছে। খুবই মর্মান্তিক এবং মানবিক একটি আলোকচিত্র। অথচ বিবিসি ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার যুদ্ধের সংবাদ পরিবেশনের সময় ইচ্ছাকৃতভাবেই এই ছবিটিকে ব্যবহার করেছে সিরিয়ার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে। বিবিসি এই ছবিটি প্রকাশের পর জাতিসংঘ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সিরিয়ার উপর আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল এবং সেই আহ্বানের অংশ হিসেবে কোয়ালিশন জোট সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালিয়ে অগুনতি নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল। একটি মিথ্যা সংবাদ-চিত্রের উপর ভিত্তি করে যে এতগুলো নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হলো, এর দায়ভার কার?
আলোকচিত্রী মার্কোর ভাষ্য মতে, ‘বিবিসিতে আমার তোলা ছবি দেখে চেয়ার থেকে পরে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল আমার। এটা কিভাবে সম্ভব যে, বিবিসির মতো একটি প্রতিষ্ঠান এভাবে এক যুদ্ধের ছবিকে আরেক যুদ্ধের প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে। প্রায় তিনটা নাগাদ বাসায় ফিরে আমি কম্পিউটার খুলে বসেছিলাম সিরিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখার জন্য। আর সেটা দেখতে গিয়েই টের পাই আমার তোলা ২০০৩ সালের ছবি দিয়ে বিবিসি কি জঘন্য কাজটিই করেছে। ২০০৩ সালের তোলা ছবি দেখিয়ে তারা বলছে যে এই ঘটনা গতকালই সিরিয়াতে ঘটেছে। শুধু তাই নয়, বিবিসি জোর গলায় বলেছে যে এই ছবিটি তাদের সিরিয়া থেকে একজন রাজনৈতিক কর্মী পাঠিয়েছে। আসলে, এটা একটা বৃহৎ প্রোপাগান্ডার অংশ, যার অংশীদার বিবিসি।’