সহিংসতার দীর্ঘমেয়াদি চক্রে বাংলাদেশ

Hortalরাজনৈতিক অস্থিরতা আর সহিংসতার দীর্ঘমেয়াদি চক্রে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। জানুয়ারিতে শুরু হওয়া অবরোধ মার্চেও অব্যাহত। এদিকে সহিংসতার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংক্রান্ত জটিলতা।
জানুয়ারির ৬ তারিখ থেকে শুরু হওয়া টানা অবরোধ আর হরতালে এ পর্যন্ত ১১৪ জন নিহত হয়েছে বাংলাদেশে। তাদের মধ্যে পেট্রলবোমায় ঝলসে গেছে ৬১ জনের জীবন। গণপিটুনি আর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৩০ জন। প্রায় দেড় হাজার যানবাহন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অথবা ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া রেলে নাশকতা করা হয়েছে ১৫ বার।
সপ্তাহখানেক আগে সহিংসতা কিছুটা কমে এলেও তা স্থায়ী হয়নি। আর এখন আবারো তা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কিশোরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে অন্তত ২০ জন বাসে ছোড়া পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়েছেন। কমপক্ষে ৪৩টি বাসে ভাঙচুর এবং আগুন দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার খালেদা জিয়াকে মামলার চাপে ফেলতে চাইছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অর্ফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ঐ দিন খালেদা বা তাঁর কোনো আইনজীবী আদালতে যাননি। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ৪ মার্চ মামলার পরবর্তী তারিখে খালেদার আইনজীবীরা আদালতে গেলেও খালেদা জিয়া যথারীতি অনুপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়া ঐ দু’টি মামলায় সর্বশেষ আদালতে যান গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর। এরপর এ নিয়ে মোট চারবার তিনি গরহাজির আছেন। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে মামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ৬৩টি তারিখের মধ্যে খালেদা আদালতে যান সর্বসাকুল্যে মাত্র সাতবার।
খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি পরোয়ানাও জারি করেছে আরেকটি আদালত। গত রোববার গুলশান থানা পুলিশের আবেদনে এই তল্লাশি পরোয়ানা জারি করা হয়। আগে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা গুলশান থানায় না গেলেও, এরমধ্যে তল্লাশি পরোয়ানা থানায় পৌঁছেছে। অবশ্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আরো একমাস, অর্থাৎ‍ ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বহাল রেখেছে আদালত।
ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদাতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়ে খালেদার আইনজীবীরা দুর্নীতির মামলা দু’টির আদালত পরিবর্তনের আবেদন জানান ২৮ জানুয়ারি। সেই আবেদনের শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার, হাইকোর্টে। বৃহস্পতিবার বুধবার আবেদনের শুনানি ১২ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। একই সঙ্গে খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিতের আবেদন জানানো হলে আদালত তার শুনানিও একই সময় পর্যন্ত মুলতবি করে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি আদালতে যেতে চান। কিন্তু যে আদালতের প্রতি তিনি অনাস্থা দিয়েছেন, সেই আদালতের মামলা দু’টি বিচারের নৈতিক অবস্থান নেই। তাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন না। তবুও খালেদা জিয়ার নিরপত্তা নিশ্চিত করা হলে তিনি আদালতে যেতেন।’
তবে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক-এর আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘খালেদা জিয়া আদালতকে অবজ্ঞা করছেন। তিনি আদালতে হজির হচ্ছেন না। আদালতের আদেশ বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতি সম্মান দেখানো সবার আইনি দায়িত্ব। আর আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে তিনি বার বার গড়হাজি থাকার পর। তাঁকে আইনজীবীর মাধ্যমে বার বার আদালতে হাজির হতে নোটিস দেয়া হয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাঁকে পরবর্তী তারিখে আদালতে হাজির করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি।’
ওদিকে সরকার মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে খালেদা জিয়াকে চাপে রাখতে চাইছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করে নতুন কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। সে কারণেই গুলশান থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পৌঁছাচ্ছে না।
সারাদেশে হরতাল-অবরোধে নিহতের ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে এরই মধ্যে পাঁচটি মামলা হয়েছে। জানা গেছে, সেসব মামলার তদন্তও দ্রুত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকারী এ বি সিদ্দিকী জানান, ‘আগামী ১৬ এবং ১৮ এপ্রিল গুলশান ও শাহবাগ থানার দু’টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।’
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতির মামলাও সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন খালেদা জিয়া। এর শুনানি শুরু না হওয়া পর্যন্ত খালেদা ঐ মামলায় জামিনে আছেন। দুদক মামলাটির শুনানির জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেছে ইতিমধ্যেই। -ডয়চে ভেলে

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button