সরকার সর্বোচ্চ ধৈর্য দেখাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তার ধ্বংসাত্মক রাজনীতি ও নিরীহ মানুষ হত্যার পরিণতি বুঝতে পারেন কিনা, সেটি দেখার জন্য তাঁর সরকার সর্বোচ্চ ধৈর্য্য দেখাচ্ছেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তাঁর দলীয় অফিসে বসে সারাদেশে দলের নেতা-কর্মীদেরকে মানুষ হত্যা ও পেট্রোল বোমা হামলার নির্দেশ দিচ্ছেন। প্রতিটি পেট্রোল বোমা হামলার পেছনে বিএনপি জামাত ও তাদের ছাত্র ও যুব সংগঠনের দুর্বৃত্তরা সরাসরি জড়িত রয়েছে। সুতরাং এ সকল হত্যাকান্ডের জন্য বিএনপি নেত্রীর বিচার এখন সময়ের ব্যাপার। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাগুলোর পাশাপাশি এই মানুষ হত্যার বিচারও করা হবে।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছেন। তিনি মানুষের রক্ত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। এটা কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না। তার কর্মকান্ডের শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অফিসে বসে হুকুম দিয়ে মানুষ হত্যা করছে। যারা খালেদা জিয়ার মানুষ হত্যাকে প্রকেটশন দেওয়ার চেষ্টা করবে, তারাও সমান অপরাধী। তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। কি অপরাধ করেছে এ দেশের মানুষ? কি অন্যায় এ দেশের মানুষের? কেন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। কেন এই ধ্বংসযজ্ঞ? মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা সহ্য করা হবে না।
বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি দুর্নীতি করেছেন। তাই আপনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আত্মবিশ্বাস থাকলে আদালতে গিয়ে মামলা মোকাবিলা করেন। আসলে উনার অবস্থা হলো চোরের মন পুলিশ পুলিশ। আর এ কারণে তিনি আদালতে যান না। বিভিন্ন অজুহাত খোঁজেন। ঘরে বসে আন্দোলন করছেন। আন্দোলনের নামে নিজেই নিজেকে অবরুদ্ধ করে রাখছেন।
জঙ্গীবাদি শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকল শ্রেণী পেশার মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, শান্তিতে বিশ্বাসী, বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী, বাংলাদেশ সমৃদ্ধে বিশ্বাসী তাদের সাবাইকে বলবো জঙ্গীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া জঙ্গীদের নেত্রী। জঙ্গীদের নেত্রীর স্থান বাংলাদেশে হবে না। জঙ্গী নেত্রীর শাস্তি বাংলার মাটিতে হবেই। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। জাতির পিতা এটাই আমাদের শিখিয়েছেন। বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের শান্তি প্রতিষ্ঠা করবোই ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপির আন্দোলনে দেশের মানুষের সাড়া নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি নেত্রী অফিসে বসে আছেন। অফিসে বসেই বিপ্লব করছেন। হরতাল-অবরোধ ডাকছেন। তার এই আন্দোলনে কেউ সাড়া দিচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেত্রীর অনেক আশা ছিল, বিদেশ থেকে কেউ এসে তাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেন। কিন্তু কেউ আসেননি। উল্টো তারা তার মানুষ হত্যা বন্ধ করতে বলেছেন। জঙ্গি কর্মকান্ড বন্ধ করতে বলেছেন। তাহলে খালেদার সঙ্গে আছে কে? আছে কিছু সন্ত্রাসী।’
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর দেশের আপামর জনসাধারণ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিলো। দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তান ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করে।
দেশের মানুষের ওপর আবার ১৯৭১ সালে পরাজিত ইয়াহিয়ার চামচারা হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি এলাকার মানুষের ওপর হামলা হচ্ছে। পরাজিত পাকিস্তানের দোসর, ইয়াহিয়ার চামচারা এই হামলা করছে। এরা কারা তা আপনারা জানেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজুলল করিম সেলিম ও মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রমুখ।
অপরাধ করে কেউ পার পাবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই যে দেশের মানুষের জন্য জাতির পিতা কষ্ট করে গেছেন, লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, যে দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি, গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা, গুলি মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যহত করা, এদেশের মানুষকে হত্যা করা আমরা বরদাস্ত করবো না। এদেশের মানুষের রক্ত নিয়ে যারা খেলছে তাদের শাস্তি বাংলার মাটিতে হবেই হবে। জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের কোন ক্ষমা নেই।
দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসররা আবার বাংলাদেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোলবোমা মেরে সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষকে হত্যা করছে। আজকেই এই সভায় আসার সময়ও আমাদের বিভিন্ন মিছিলের ওপর বোমা হামলা হয়েছে। অনেকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এটা কারা করেছে? বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াই এটা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচনে আসেন নাই। নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দল আসবে কি না, এটা যে কোনো রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত। তার ভুলের মাসুল বাংলার জনগণ কেন দেবে ?
দেশের মানুষের শান্তি বেগম খালেদা জিয়ার মনে অশান্তি লাগে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এক বছর বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে ছিল। বিএনপি নেত্রী আবার মানুষ হত্যা শুরু করেছেন। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকলে বিএনপি নেত্রীর ভালো লাগে না। তার মনে অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে। তিনি হরতাল ডাকেন, অবরোধ ডাকেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বাড়ি ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে বসে আছেন। ওখানে বসে উনি কোন বিপ্লব করছেন তা আমি জানি না। ওখানে বসে থাকার মাজেজাটা কী তাও আমরা জানি না। খালেদা জিয়া নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দেন। আবার পুলিশ পাঠালে বলেন অবরুদ্ধ করে রেখেছে। পুলিশ সরাল বলেন কেন পুলিশ সড়ানো হল। তাহলে আমরা যাব কোথায় ?
বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে ঘটতে থাকা এসব নাশকতা আর সহ্য করা হবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশের মানুষের রক্ত নিয়ে যারা খেলছে তাদের শাস্তি একদিন এদেশের মাটিতে হবে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শুধু দুর্নীতি করে এতিমদের টাকা মেরে দেওয়ার মামলা নয়, খুনের মামলা, খুনের হুকুম দাতার মামলাও হয়েছে। খুনির যা শাস্তি সেই শাস্তি উনাকে একদিন পেতেই হবে।
তিনি বলেন, আমাদে দেশে এক শ্রেণীর মানুষ আছে, বিএনপি যাই করুক, মানুষ মারুক, উনারা চোখে দেখেন না। উনারা শিক্ষিত মানুষ, ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, তারপরও চোখে দেখেন না। আমাদের কিছু শিক্ষিত লোক আছে, এগুলো বোঝেনও না, দেখেনও না। কেউ চোখ থাকতে অন্ধের ভাব ধরলে দেখাবে কে ? এই ভণিতা এখন খালেদা জিয়াও শুরু করেছে। -বাসস