ব্রিটেনে বাংলাদেশী পলির সমকামিতার বলি নিজ কন্যা

Poliসমকামিতার জন্য বৃটেনজুড়ে এখন আলোচিত নাম বাংলাদেশী পলি চৌধুরী (৩৫)। কিকি মুদ্দার (৪৩) নামের আরেক নারীর সঙ্গে তিনি সমকামিতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। শুধু তাই নয়, এ সম্পর্ককে আরও গাঢ় করতে পলি হত্যা করেছেন নিজের ৮ বছর
বয়সী মেয়ে আয়েশা আলিকে। এ নিয়ে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় দোষী প্রমাণিত হয়েছেন পলি চৌধুরী ও কিকি মুদ্দার। শুক্রবা বৃটেনের ওল্ড বেইলি আদালত তাদের দুজনকে যথাক্রমে ১৩ ও ১৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। নিজের মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করতে পলিকে কিকি যেভাবে প্ররোচিত করেছে তা গল্প, উপন্যাসকেও হার মানায়। বিকৃত যৌনাচার, অবাস্তব নাটকীয়তা আর অলীক বিশ্বাসের এক উপাখ্যানে বলি হতে হয়েছে ৮ বছরের প্রাণোচ্ছল নিষ্পাপ শিশু আয়েশা আলিকে। পলির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে অকল্পনীয় এক পদ্ধতিতে তার ওপর নিয়ন্ত্রণ আর আধিপত্য স্থাপন করে কিকি। পলিকে ফাঁদে ফেলতে ১৫টি কল্পচরিত্র সৃষ্টি করে কিকি। ফেসবুক আর ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে এসব কাল্পনিক চরিত্রগুলো বাস্তব হয়ে ওঠে পলির কাছে। আর বানানো এসব চরিত্রের মধ্যে শুধু মানুষই না আত্মা আর ফেরেশতাও বানায় কিকি। আশ্চর্যজনক হলেও অবাস্তব কল্পচরিত্রের পেছনে থেকে পলিকে দিয়ে তার মেয়েকে খুন করাতে সক্ষম হয় সে। তাকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে তার মেয়ের মধ্যে দুষ্ট আত্মার প্রভাব রয়েছে। পলিকে দিয়ে তার স্বামীকেও ঘর থেকে বের করে দিতে সক্ষম হয়। আর এসবের পেছনে কারণ ছিল পলির সঙ্গে বিকৃত যৌনাচার। বানানো চরিত্রগুলোর মধ্যে একটি অতিপাকৃত চরিত্র জিমির প্রেমে পড়েন পলি। আত্মিক চরিত্রগুলোর কথায় পলি মেনে নেয় যে, কিকির সঙ্গে যৌনাচারের মধ্য দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক হচ্ছে জিমির সঙ্গে। আয়েশা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা স্বাভাবিকভাবেই বিস্ময়ে বিমূঢ়। তারা এখনও বুঝতে চেষ্টা করছেন কিভাবে সাধারণ এক মা নিজ সন্তানের ওপর এমন নৃশংসভাবে চড়াও হতে পারে। মৃত আয়েশার শরীরে ৫৬টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৩ সালের ২৯শে আগস্ট তার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এক সূত্র মন্তব্য করে, তারা যা করেছে তা চূড়ান্ত অমানবিক। ওই বাড়িতে যা ঘটেছে তা সব বিশ্বাসকে অগ্রাহ্য করে। বিষয়টা অনেকটা এমন যেন সে জাদুর বশে ছিল। ২০০৭ সালে রোমফোর্ডে পলিদের পাশের বাড়িতে এসে ওঠে কিকি। কামুকতা চরিতার্থ করতে মিথ্যার জগৎ সৃষ্টি করে সে। প্রতিবেশী পলিকে ঘায়েল করতে ৪০ হাজারেরও বেশি বার্তা আদান প্রদান করেছে সে। এছাড়াও কিকির উন্মাদনা ছিল ভ্যাম্পায়ার নিয়ে। সে উন্মাদনায় পলিকে রীতিমতো ভ্যাম্পায়ারই বানিয়ে দেয় সে। মেয়ের শরীরে কামড় বসাতে পলিকে রাজি করায়। পলির মাথায় এটা ঢুকে যায় যে দুষ্ট আত্মার প্রভাব থেকে বাঁচাতে তার মেয়েকে কষ্ট দিতে হবে। মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টা আগে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয় আয়েশা। তাকে শীতল পানির প্রবাহের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়। মারধর করা হয়। পশুর মতো কামড়ানো হয়। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন তার মৃত্যুর আগের দিন রাতে কিকি আয়েশাকে শাওয়ারহেড দিয়ে নির্মমভাবে প্রহার করে। আয়েশার পিতা আফসার আলি আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। দোষী সাব্যস্ত করার আগে জুরি ৩১ ঘণ্টা ৩১ মিনিট সময় নেন। আয়েশাকে হত্যার এক মাস আগে কিকি তার বন্ধু হেমার সঙ্গে ফোনালাপে তাকে হত্যার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে নতুন একটি শাওয়ারহেড কিনতে দোকানে যায় কিকি। গোয়েন্দাদের ধারণা, আয়েশাকে হত্যা করতে শাওয়ারহেড ব্যবহার করার পর নতুন কেনার প্রয়োজন পড়ে।
কিকি ও হেমার ওই কথোপকথন আদালতে শোনানো হয়। কথোপকথনটি এখানে তুলে দেয়া হলো:
কিকি: পলির মেয়েকে খুন কর। আমি মজা করছি না। আমি তাকে খুন করতে যাচ্ছি। সত্যি! হেমা, তুমি আমাকে আর কখনই দেখতে পাবে না।
হেমা: কি হয়েছে?
কিকি: আমি তাকে খুন করতে যাচ্ছি। আমি ঈশ্বরের কাছে শপথ করে বলছি, আমি তাকে খুন করবো। আমি তাকে পানিতে চুবিয়ে মারবো।
হেমা: কেন তুমি এসব বলছো? আমি কখনও শুনিনি তুমি…
কিকি: আমি ওই ডাইনিকে চুবিয়ে মারবো। সত্যি, আমি তাকে খুন করতে যাচ্ছি হেমা। আমি আজ রাতেই জেলে যাবো।
কিকি: আমি সত্যিই ওই দেহপসারিণীকে খুন করবো!
কিকি: সে কেবল একজন দেহপসারিণী। সে ওটাই! সে হচ্ছে দুনিয়ার বর্জ্য। সে তার মায়ের মৃত্যু চায়।
হেমা: সে মানসিকভাবে পরিণত নয়।
কিকি: হ্যাঁ, সে দোষ খুঁজে বের করতে তৎপর। আমার মুখের ওপর চিৎকার করে বলছিল, আমি তোমাকে ঘৃণা করি! সে চায় না, আমি এখানে বাস করি। আমি তাকে খুন করবো। আমি সত্যিই তাকেই খুন করতে চাচ্ছি।
হেমা: সে হচ্ছে…
কিকি: আমি আমার কাজিন জিমিকে এসএমএস পাঠিয়েছি ও বলেছি, ‘পুলিশকে জানাও। পলির ঘরে পুলিশ পাঠাও। কেননা আমি তাকে এখন খুন করতে যাচ্ছি।
হেমা: সে কি অতটা খারাপ?
কিকি: সে অমনই। আমি তোমাকে বলছি সে আসলে কেমন। তার মধ্যে শয়তানের অস্তিত্ব রয়েছে।… সে প্রতিদিনই অমন, হেমা। আমি আমার জীবনে কখনই কারও মৃত্যু চাইনি। সে ছাড়া আর কারও মৃত্যু চাইনি। কখনই না।
সে মূলত বলছিল, আমি কিছুই করব না। আমি পরিষ্কার করবো না। সে কিছুই করতে চায় না। তার মায়ের মৃত্যু হলেই সে খুশি।
হেমা: কি কারণে সে এমন পাগলামি শুরু করলো?
কিকি: তার কোন সমস্যা আছে। সে টয়লেটেই টয়লেট পেপার রেখে আসে। সে এমনকি পায়খানার পর পরিষ্কার হয় না। সে শোয়ার বেডেই মল ত্যাগ করে।
হেমা: শুনে মনে হচ্ছে, তার দরকার হচ্ছে…
কিকি: তার খুন হওয়া প্রয়োজন। অনেকেই অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে। তুমি কি তা জানো?
হেমা: হ্যাঁ।
কিকি: খুব বেশি চেষ্টা করছে। কিন্তু সে কেবলই এক শয়তান। সে শয়তান। আমার জীবনেও কখনও তার মতো শিশু দেখিনি। তুমি কখন বের হবে?
হেমা: কয়েক মিনিটের মধ্যে?
কিকি: ঠিক আছে। শোনো আমার বোধ হয় ফিরে যাওয়া উচিত। আমি সম্ভবত তাকে খুন করতে যাচ্ছি।
হেমা: ঠিক আছে, এখন আমাকে জানিও তুমি কি কর।
কিকি: ঠিক আছে, আমি জানাবো।
হেমা: ঠিক আছে।
কিকি: বাই।

-মানবজমিন

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button