কাঠের বাক্সে পাড়ি ব্রিটেন থেকে অস্ট্রেলিয়া !
পকেটে বিমান ভাড়া দেয়ার রেস্ত নেই। কিন্তু কাঁহাতক আর প্রবাসে পড়ে থাকা যায়? শেষে অভিনব কৌশল ফেঁদে বাড়ি ফিরেছিলেন অস্ট্রেলীয় ক্রীড়াবিদ রেগ স্পায়ার্স। অভাবনীয় সেই দুঃসাহসিক অভিযানে মূলধন ছিল বরফ-ঠান্ডা মগজ। লক্ষ্য ছিল ১৯৬৪ সালের অলিম্পিক্স। কিন্তু আচমকা চোট পেয়ে সেই সুযোগ প্রায় হাতছাড়া হওয়ার জোগাড়। জখম সারাতে অস্ত্রোপচারের জন্য এরপর ইংল্যান্ডে পৌঁছেছিলেন জ্যাবেলিন থ্রোয়ার স্পায়ার্স। কিন্তু চোট সারলেও অলিম্পিক্স অধরাই থেকে যায়। বাধ্য হয়ে এর পর বিমানবন্দরেই চাকরি জুটিয়ে নিয়ে বাডড় ফেরার ভাড়া সঞ্চয় করতে থাকেন তিনি। মুশকিল হয় একদিন পকেটমারি হওয়ায়। দেশে পৌঁছানোর শেষ আশাও নিভে যায়।
বিমান সফরের পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় আজব বুদ্ধি ঠাউরান স্পায়ার্স। এক বন্ধুর সাহায্যে কাঠের বাক্সে নিজেকেই ডাকযোগে বাড়ির ঠিকানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এই অ্যাথলিট। বড়সড় পার্সেলটি দেখে কারও সন্দেহ হয়নি যে ভিতরে জলজ্যান্ত এক মানুষ রয়েছে। দীর্ঘ আকাশপথে টিকে থাকতে বাক্সের ভিতর কম্বল, পোশাক, টিনজাত খাবার এবং দুটি বোতল সঙ্গে নিয়েছিলেন স্পায়ার্স। একটিতে ছিল পানি, অন্যটি প্রস্রাবের জন্য। তবে শুরুতেই বিপদ। এয়ার ইন্ডিয়ার য়ে বিমানে স্পায়ার্স সমেত ৫ ফিট বাই ৩ ফিট বাই আড়াই ফিটের বাক্সটি তোলা হয়েছিল, কুয়াশার কারণে তা ২৪ ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ে। মুম্বাই (তৎকালীন বম্বে) পৌঁছেও বিপত্তি। ঝাড়া কয়েক ঘণ্টা কড়া রোদে বাক্সটি ফেলে রাখা হয়। সে সময় গরমের দাপটে বাক্সের ভিতর উলঙ্গ হয়েছিলেন তিনি। আরও বেশ কয়েক ঘণ্টা পর অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার মাটি ছোঁয় স্পায়ার্সের বিমান। ডাকে আসা অন্য মালপত্তরের সঙ্গে কাঠের বাক্সের ঠাঁই হয় বিমানবন্দরের গুদামে। সুযোগ বুঝে বাক্স থেকে বেরিয়ে গুদামের দরজা গলে বাইরে বের হন স্পায়ার্স। তারপর ট্যাক্সি ডেকে সটান বাড়িতে পৌঁছান। স্বামীকে দেখে অবাক হন তার স্ত্রী। ছুটে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে একরত্তি মেয়েও। তবে সব কিছু শুনেও বিশ্বাস করেননি গৃহকর্ত্রী। সম্প্রতি রেগ স্পায়ার্সের চিত্তাকর্ষক জীবনকাহিনী অবলম্বনে বই লিখেছেন মার্কাস ম্যাকসর্লি। জানা গিয়েছে, বিমানে দুঃসাহসিক অভিযানের বহু পরে ১৯৮১ সালে প্রাক্তন ক্রীড়াবিদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ মাদক পাচারের অভিযোগ ওঠে। একই অভিযোগে ১৯৮৪ সালে শ্রীলঙ্কায় তিনি গ্রেফতার হন। সে দেশের আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু তা এড়িয়ে দেশে ফিরে পাঁচ বছর জেলে কাটান তিনি। তবে সে সব গল্প জানতে হলে পড়তে হবে ম্যাকসর্লির লেখা বইটি।