কোম্পানির বোর্ডে নারী উপস্থিতি বাড়াতে আইন পাস করলো জার্মানি

নিজেদের বিভিন্ন কোম্পানির বোর্ডে নারীর উপস্থিতি জোরদারে আইন পাস করেছে জার্মানি। এ নতুন আইন অনুসারে আগামী বছর থেকে ইউরোপের বৃহত্তম কিছু কোম্পানি তাদের তদারককারী বোর্ডের ৩০ শতাংশ আসন নারীর জন্য বরাদ্দ রাখতে বাধ্য হবে।
বর্তমানে এ দেশটিতে ভক্সওয়াগন, বিএমডব্লিউ, ডেইমলার, সিমেন্স, ডয়েচে ব্যাংক ও বিএএসএফের মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কিছু কোম্পানির ভিত্তি অবস্থিত। এসব কোম্পানির পরিচালনা বা তদারককারী বোর্ডে নারীদের অংশগ্রহণের হার ২০ শতাংশেরও কম। তাই এ আইনের পক্ষের ব্যক্তিরা বলছেন, এর মাধ্যমে দেশের করপোরেট সংস্কৃতি ও প্রশাসনে যেমন পরিবর্তন আসবে, তেমনি এ পরিবর্তনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়বে জার্মানির বাইরেও।
জার্মানির আগে ইউরোপের বেশকিছু দেশ আইন পাসের মাধ্যমে বোর্ডরুমে নারীদের উপস্থিতি জোরদারের জন্য একটি কোটা আরোপ করেছে। তবে দেশটিতে অনুমোদিত হওয়ার আগে আইনটিকে বিপুল তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু নানা আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েই আইনটি অনুমোদিত হয়। আইনটি বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন আইনমন্ত্রী হিকো মাস ও পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী ম্যানুয়েলা শেজিগ। কয়েক মাস ধরেই তারা এ নিয়ে নানা আইনি ও রাজনৈতিক বাধা সামলিয়ে অবশেষে আইনটিকে অনুমোদনের পথে আনতে পেরেছেন। তাই আইনমন্ত্রী এ আইনকে ১৯১৮ সালে জার্মানিতে নারীদের ভোটাধিকার প্রদানের পর লিঙ্গ সমতার পথে সবচেয়ে বড় অর্জন বলে উল্লেখ করলেন।
বোর্ডরুমে নারীদের অংশগ্রহণের জন্য কোটা (৪০ শতাংশ) আরোপকারী ইউরোপের প্রথম দেশ নরওয়ে। পরবর্তীতে স্পেন, ফ্রান্স ও আইসল্যান্ড এ তালিকায় যুক্ত হয়। ইতালিতে বর্তমানে ৩৩ শতাংশ এবং বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসে ৩০ শতাংশ কোটা বলবত্ রয়েছে। আইনের মাধ্যমে ব্রিটেন এখনো বোর্ডরুমে নারীদের অবস্থান বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়নি। তবে ঐচ্ছিক একটি বিধান রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশটির কোম্পানিগুলোর বোর্ডরুমে নারীদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশগ্রহণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের আইন না থাকলেও ঐচ্ছিক বিধানের আওতায় মার্কিন কোম্পানিগুলোর বোর্ডরুমের ২৩ শতাংশ সদস্য এখন নারী।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও নরওয়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, আইনের মাধ্যমে ইউরোপের অনেক দেশের করপোরেট বোর্ডে নারীর উপস্থিতি বাড়লেও লিঙ্গভিত্তিক বেতনবৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বোর্ডে উপস্থিতি জোরদারের চেয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হবে করপোরেট সংস্কৃতিতে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য কমানো।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button