রাণী এলিজাবেথের মৃত্যুর পর কী হবে
ব্রিটিশ রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ১৯৫২ সালে সিংহাসনে বসার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা বদল করতে দেখেছেন। একইসময়ের মধ্যে বদল হয়েছেন ১২ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টও। ব্রিটিশ রাণীর বয়স এখন ৮৮ বছর। জীবন-মৃত্যুর স্বাভাবিক প্রাকৃতিকতায় একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেন তিনিও। তাঁর মৃত্যুর পর কি হতে পারে যুক্তরাজ্যে? তা নিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার।
মৃত্যুর পর প্রথমে যা ঘটবে
এলিজাবেথের মৃত্যুর পর আনুষ্ঠানিকতা কিভাবে সম্পন্ন করা হবে তা নির্ভর করছে তাঁর মৃত্যুর ধরনের উপর। যদি দীর্ঘদিনের অসুস্থতার কারণে এলিজাবেথের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়, তবে তাঁর মৃত্যুর ঘোষণাসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে বাকিংহাম প্যালেস থেকে। ঘোষণা পাওয়ার পরপরই বন্ধ হয়ে যাবে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ। একইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও।
অন্তেষ্ট্যিক্রিয়ার আগে কী হবে
রাণীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগে রাজতন্ত্র অনুযায়ী বৈঠকে রাজশাসনের ব্যাপারে বৈঠকে বসবে প্রিভি কাউন্সিল। রাজতন্ত্র অনুযায়ী রাণীর মৃত্যুর পর প্রিন্স চার্লসই যে পরবর্তীতে ব্রিটিশ সিংহাসনে বসছেন সে ব্যাপারে সন্দেহ থাকছে না। তবে চার্লসের পরে উত্তরাধিকারসূত্রে তার ছেলে উইলিয়ামের মুকুট পাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হবে বৈঠকে। কাউন্সিলে নতুন ব্রিটিশ রাজা পার্লামেন্টের আনুগত্য স্বীকার করে শপথ নেবেন। একইসঙ্গে চার্চের সুপ্রীম গভর্নর হয়ে যাবেন তিনি। এরইমধ্যে বৈঠক হবে পার্লামেন্টের দুই কক্ষেও। প্রয়োজনে ডাকা হতে পারে জরুরি অধিবেশন। সেসময় বর্তমান রাজার আনুগত্য স্বীকার করবেন পার্লামেন্ট সদস্যরা। দুই কক্ষের সদস্যরাই পার্লামেন্টে শোক বক্তব্য রাখবেন। এরপর রাণীর আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগ পর্যন্ত পার্লামেন্টের দুই কক্ষের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হবে।
কেমন হবে অন্তেষ্ট্যিক্রিয়া
বিজনেস ইনসাইডারের ধারণা মতে, ব্রিটিশ রাণীর মৃত্যুর পর আনুষ্ঠানিকতা কি হতে পারে তা এরইমধ্যে ঠিক করে রেখেছেন অনেকে। এসব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর ওয়েস্ট মিনস্টার হলে রাণীর মৃতদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। সেসময় কেবল এক ঘন্টার জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে হল। ১২ দিন পর্যন্ত রাণীর মৃতদেহে শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ পেতে পারেন ব্রিটিশ জনগণ। এরপর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মূল আনুষ্ঠানিকতার জন্য মৃতদেহ নেয়া হবে ওয়েস্ট মিনস্টার অ্যাবেতে। এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি লোকজন অংশ নেবেন বলে ধারণা। থাই রাজা ভ’মিবলের পরে বিশ্বের দেশগুলোর প্রধানদের মধ্যে বয়সে সবচে বড় রাণী এলিজাবেথ। তাই কমনওয়েলথ প্রধান এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অনেক বিশ্বনেতা হাজির হবেন এমন ধারণা করাই যায়।
কোথায় সমাহিত হবেন রাণী
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর এবার সমাহিত করার পালা। রাণীর সম্ভাব্য সমাধিস্থল স্কটল্যান্ডের সান্দ্রিংহাম কিংবা বালমোরাল। তবে উইন্ডসরের জর্জে’স চ্যাপেলে বাবা ষষ্ঠ জর্জের সমাধির পাশেও সমাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ব্রিটিশ রাণীর।
কী ভূমিকা নেবে সংবাদমাধ্যম
রাণী এলিজাবেথ চলে যাবার পর সব কমেডি শো প্রচার বন্ধ করে দিতে পারে বিবিসি। এর আগে ২০০২ সালে এক উপস্থাপক লাল টাই পরে রাণীর মায়ের মৃত্যু সংবাদ জানানোর কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। আর সে কারণেই এখন আগে থেকেই এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। সবসময়ের জন্য নাকি প্রস্তুত রাখা আছে কালো টাই। খবর উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুতিও নাকি নিয়ে ফেলেছেন উপস্থাপকেরা।
সমাহিত করার পর
তাঁর অন্তেষ্ট্যিক্রিয়া থেকে বেশ কিছুদিন পর্যন্ত নাকি স্থবির হয়ে পড়বে যুক্তরাজ্য। আর বিশাল ধরনের ক্ষতির সন্মুখীন হবে ব্রিটিশ অর্থনীতি। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ব্যাংক আর শেয়ার বাজারের কার্যক্রম। রাণীকে সমাহিত করার পর কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাস পর্যন্ত চোখে পড়বে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন। চালু করা হতে পারে নতুন মুদ্রা। বিভিন্ন জায়গায় বসানো হবে চার্লসের ছবি। পরিবর্তন হতে পারে জাতীয় সঙ্গীতের কথাও। গড সেইভ দ্য কুইন এর জায়গায় বলা হতে পারে গড সেইভ দ্য কিং। পুলিশের ক্যাপ, পাসপোর্টসহ যেসব জায়গায় ব্রিটিশ রাণীর নাম বলা আছে হয়তো মুছে যাবে সেগুলোও। নিজের নাম পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লস। কারণ কিং চার্লস নামেই যে তাকে সিংহাসনে আরোহণ করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা রাজতন্ত্রে নেই।