ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ: ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন সিস্টেম নিয়ে বেশ বড় ধরনের আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে। সব সরকারের সময়ই এই ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা একটা বড় ধরনের নির্বাচনী ইস্যু হিসেবেও রাজনীতির মাঠে উঠে আসে। বর্তমান কনজারভেটিভ-লিবডেমের মিলিত কোয়ালিশন সরকারের শুরুতেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইমিগ্রেশন সংখ্যা ১০০০০ হাজারের মধ্যে রাখার পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছিলেন। ডেভিডের বিগত প্রায় পাঁচ বছর কালীন সময়ে ঘুরে ফিরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে, সংবাদ বিশ্লেষণে এবং হাউস অব কমন্স আর থেরেসা মের নানা বক্তব্য বিবৃতি আর পলিসি মেকিং এ এই নেট ইমিগ্রেশন রাখার প্রত্যয়কে সামনে রেখে নানা ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত আছে। অথচ বাস্তবে ডেভিডের কোয়ালিশন সরকার নেট মাইগ্রেশন টার্গেট রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। কখনো কখনো সেজন্যে বিগত ব্লেয়ার সরকারের ভুল ইমিগ্রেশন নীতিকেও সেজন্যে দায়ী করে কড়া সমালোচনাও করেছেন ডেভিড ক্যামেরন আর থেরেসা মে। এক্সপ্রেসের সাথে ডেভিড ক্যামেরন নির্বাচনী প্রচারের দীর্ঘ আর্টিক্যাল লিখে ইমিগ্রেশন নিয়ে সুনির্দিষ্ট ছয়টি পরিকল্পনার কথাও ব্রিটিশ জনগনকে জানিয়েছেন।আর এই আলোচনা-সমালোচনা যখন চলছে, ঠিক তখনি আগামী ৭ই মে সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউকিপ পার্টির নাইজেল ফারাজ আবারও নতুন করে ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার আদলে কোয়ালিটি সম্পন্ন ইমিগ্রেন্টদের জন্য ব্রিটেনের দরজা উম্মুক্ত করে দেয়ার বিতর্ক উসকে দিয়েছেন।
নাইজেল ফারাজ বলছেন, আমাদের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন সিস্টেম থেকে শিক্ষা নেয়ার আছে। বিবিসির সাথে আলোচনায় ফারাজ বলেছেন, আমাদের ইমিগ্রেশন সিস্টেমে কোয়ালিটি ইমিগ্রেন্ট এবং যোগ্যতা সম্পন্ন দক্ষ ইমিগ্রেন্টদের জন্য ব্রিটেনের দরজা খুলে দেয়া উচিৎ।
তিনি বলেছেন, তার পার্টি চায় অস্ট্রেলিয়াতে যেভাবে দক্ষ ইমিগ্রেন্টদের জন্য পয়েন্ট-বেইজড সিস্টেম রয়েছে, আমাদেরকেও তাই করতে হবে। তার মতে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে এই কোয়ালিটি ইমিগ্রেন্টদের ব্রিটেনে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়েই এই সমস্যার বাস্তব সম্মত সমাধান সম্ভব। নাইজেল ফারাজের এমন প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে এখন, ব্রিটেনের কি তাহলে এই কোয়ালিটি সম্পন্ন ইমিগ্রেশনের দিকে ফোকাস দেয়া উচিৎ? বিবিসিতে নাইজেল ফারাজের এমন প্রস্তাবের পর পরই নিউহামের স্থানীয় নিউজ নিউহাম রেকর্ডার এব্যাপারে ব্যাপক ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। তারা তাদের লিড নিউজ করেই এব্যাপারে ফোকাস করছেনা, বরং সেই সাথে ইমেইল একাউন্ট, নিউহাম রেকর্ডার ইমেইল একাউন্ট এবং টেলিফোন নাম্বার দিয়ে জনগণকে এব্যাপারে তাদের মতামত, পরামর্শ ইত্যাদি দেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন। এতে সাড়াও মিলছে ব্যাপক। অনলাইনে ভোট পড়ছে পক্ষ ও বিপক্ষে ব্যাপকহারে। নিউ হাম রেকর্ডারের সাথে স্থানীয় দুজন জনপ্রতিনিধি হতে চান এমন দুই নেতা কথাও বলেছেন, তাদের মতামত প্রকাশ্যেই তারা দিয়েছেন। নিউহাম রেকর্ডারের সৌজন্যে সেই দুই নেতার বক্তব্য আংশিক সংকলিত আকারে পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো। আমাদের কমিউনিটির মধ্য থেকে এ ব্যাপারে এই ক্যাম্পেইনে কেউ মতামত শেয়ার করতে চাইলে লিখতে পারেন এই পাতায় অথবা সরাসরি letters@newhamrecorder.co.uk. (অথবা এই পত্রিকার নিউজ এডিটর ইমেইল বরাবরে লিখতে পারেন)।
ড্যানিয়েল অক্সলি- ইস্টহামের ইউকিপ প্রার্থী তিনি বলেছেন, ইমিগ্রেশন ব্রিটেনের জন্য খুবই ভালো দিক এবং ইমিগ্রেন্টদের দ্বারা ব্রিটেন কালচারালি এবং ইকোনমিক্যালি উপকৃত ও লাভবান হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে সৌদি আরবে চাকুরী নিয়ে তিনি যখন যান, তখন তার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেছেন, ইমিগ্রেশনের দ্বারা অন্যান্য দেশও লাভবান হয়ে থাকে। ড্যানিয়েল আরো বলেন, অনেকেই আছেন সৌদি আরবের মানবাধিকার ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে থাকেন। কিন্তু তার মতে কাজের জন্য সৌদি আরবে তিনি যখন আবেদন করেছিলেন, তখন তাদের চেকিং প্রসেস সহ গোটা প্রসেসিং সিস্টেম ছিলো আগ্রহের ও দৃষ্টান্তমূলক।
ড্যানিয়েল বলেছেন, সৌদি আরব আমার সকল পরীক্ষার মূল সার্টিফিকেট, মার্কসিট, ক্রিমিনাল রেকর্ড চেকিং, আদতেই কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে কিনা, মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স, আমার স্পন্সর এবং সৌদি আরবে থাকাকালীন সময়ে আমার বিহেভিয়ারের জন্য স্পন্সর দায়ী বা দায়বদ্ধ ইত্যাদি সহ গোটা ব্যবস্থা চেকিং করেন- যা প্রশংসনীয়।
তার মতে, ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন এমন হওয়া দেশের জন্য ভালো বলে মন্তব্যও করেছেন। তিনি বলেন, ব্রিটেনে যারা আসেন, তারাও কাজের ক্ষেত্রে বা আবেদনের সময় এমন সব ব্যবস্থা চেকিং থাকা বাঞ্ছনীয়। তার মতে ইউকিপ অস্ট্রেলিয়ার মতো কোয়ালিটি তথা পয়েন্ট-বেইজড ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার কথা বলেছে।
ড্যানিয়েলের মতে, এভাবে হলে, ব্রিটেন ইউরোপ থেকে বের হলে, এবং একজন প্রার্থীর ধর্ম, বর্ণ, গোত্র প্রাধান্য না দিয়ে কেবলমাত্র কোয়ালিটির চেকিং ব্যবস্থা থাকলে আমাদের ইমিগ্রেশন ম্যাস হতোনা।এতে দক্ষ প্রফেশনাল লোকগুলো আসতেন, আমাদের সোসাইটি, অর্থনীতি, মানব সম্পদ সবই উপকৃত হতো। কারণ আমাদের বর্তমান সিস্টেমে ইউরোপ থেকে যে কেউ যখন তখন আসতে পারেন বিনা বাধায় বিনা পটেনশিয়াল চেকিং ছাড়াই।
ড্যানিয়েলের মতে, যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হতে পারেন ফিলিপাইন থেকে কিংবা ব্রিলিয়ান্ট একজন সাইন্টিস্ট হতে পারেন নিউজিল্যান্ড থেকে তার জন্য ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা সহজ থাকা এবং স্বাগত জানানো উচিৎ। তার মতে আমাদের প্রয়োজন এমন ফেয়ার সিস্টেম যাতে ভালো দক্ষ লোকদের আমরা পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকেই ব্রিটেনে আসার পথ উম্মুক্ত রাখতে পারি।
ডেভিড থর্প- ইষ্টহামের লিবারেল ডেমোক্রেট প্রার্থী তার মতে, রাষ্ট্র কিংবা সমষ্টির পরিবর্তে ইন্ডিভিজ্যুয়ালকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি বলেছেন, জনগন এবং জাতিসমূহ এবং কালচারকে স্বাগত জানাই এবং এর মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধন হয়- সেটা যুগের পর যুগ চলে আসছে। কিন্তু লিবারেল ডেমোক্রেটস হিসেবে তিনি মনে করেন, জনগনের স্বাধীন ইচ্ছা থাকা উচিৎ তার চয়েস নির্ধারনে যদি না সেটা অন্যের জন্য বা অন্যকে হার্ম করে থাকে। লিবারেলরা বিশ্বাস করে অন্যদের কষ্টের কারণ না হয়েও জনগনের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন করা যায়।
তবে তার মতে, নিউহামের সাম্প্রতিক ক্রিমিনাল রেকর্ড নিয়ে উদ্বেগের সাথে তিনি বলেন, সেজন্যেই আমাদের প্রয়োজন ইন্টেলিজেন্স ইমিগ্রেশন পলিসি। তিনি বলেন, আমি রমফোর্ডে থাকি- এই কমিউনিটিতে মাল্টিকালচারাল জনগন- যা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এসে বসবাস করছেন। কিন্তু আমাদের কমিউনিটির দু:খজনক দিক হলো নিউহামের অধিক পরিশ্রমী জনগন অন্যান্য সকলের কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে থাকছেন। তার মতে টোরি এবং লেবার পার্টি ইমিগ্রেশন নিয়ে কেবল প্রি-ওকোপাই বা পজেসন আছে এমন এক ইমেজ দাড় করিয়েছেন, বাস্তবতার ফ্যাক্টস এর সাথে সম্পর্কহীন বা ইস্যুবিহীন ইমেজ নিয়ে দুদল কাজ করছে। ডেভিড থর্পের মতে কনজারভেটিভ নেট মাইগ্রেশন নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ রাখতে কাজ করছে, আর লেবার নিজেদের সময়ে পুরো ব্যবস্থাকে কাউন্টলেস করেছে শুধুমাত্র ভোট হারানোর ভয়ে। সত্যিকার অর্থে ঐ সময়ে কি পরিমাণ ইমিগ্রেন্ট এসেছেন তার কোন হিসাব ছিলোনা। তার মতে, লিবারেল চায় যারা বের হয়ে যাচ্ছেন এবং আসতেছেন তাদের মনিটর করতে এবং সেজন্য এই পদ্ধতি পূণরায় চালু করার পক্ষে।