জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড
ব্রিটেনে যৌন নির্যাতনে মন্ত্রী ও ভিআইপিরা জড়িত
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ: গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সূতিকাগার ব্রিটেনের শিশুদের যৌন নির্যাতন করার যাবতীয় তথ্য মেট্রোপলিটন পুলিশ, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড অবগত থাকা সত্যেও মন্ত্রী ও ভিআইপি এবং পুলিশের উচ্চ পদস্থ অফিসাররা এই অন্যায় ও অবৈধ কাজে জড়িত থাকায় পুলিশ কোন ভুমিকাই পালন করেনি। শিশুদের যৌন নির্যাতন কারীদের বিরুদ্ধে কোন কেস বা পদক্ষেপ না নেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে ব্রিটেনের বহুল প্রচারিত ফ্রি ইভনিং ষ্ট্যান্ডার্ড এবং ট্যাবলয়েড মিররের বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। পুলিশ ওয়াচ ডগ এই রিপোর্ট আজ প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সেই সব অপরাধ তথা শিশুদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগের যথার্থ প্রমাণ থাকা সত্যেও পুলিশ কোন একশন ও পরবর্তীতে ইনভেস্টিগেশনে যায়নি। কারণ পুলিশ অবগত ছিলো সেই সব অপরাধের সাথে উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, ভিআইপি, মন্ত্রী, এমপি জড়িত।
ওয়াচ ডগের রিপোর্টে জানা গেছে, ১৯৭০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সংগঠিত চাইল্ড সেক্স অফেন্স এর ১৪টি অভিযোগের তদন্ত চলছে যাতে মেট্রোপলিটন পুলিশ সেই করাপশনের সাথেও জড়িত। এই সকল অভিযোগ ওয়াচ ডগের কাছে মেট্রোপলিটন পুলিশের দ্বারা চাইল্ড সেক্স পেডোফাইলের সাথে সিনিয়র রাজনৈতিক ফিগার জড়িতদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে।
তদন্তের আওতায় আরো রয়েছে, ফোর্স কর্তৃক অভিযোগ চেপে যাওয়া, তদন্ত বন্ধ বা আটকে দেয়া, অপরাধসমূহ গোপণ রাখা, যেখানে মন্ত্রী, এমপি এবং পুলিশ অফিসার জড়িত- এই সকল বিষয়সমূহ এখন তদন্তের আওতায় নেয়া হয়েছে।
রিপোর্টে সুনির্দিষ্ট এমন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে যা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর। তাদের মধ্যে এমন এক ডকুম্যান্টস রয়েছে, যাতে যৌন নির্যাতনকারি হাউস অব পার্লামেন্টের ঠিকানায় এবং সেই সাথে খুবই উচ্চ পদস্থ পাবলিক ফিগার, সাংসদ এবং উচ্চ পদস্থ পুলিশ অফিসারদের নাম, ঠিকানা রয়েছে, অথচ পুলিশ সেই সবের কোন কিছুই বিনা তদন্তে আর কোন একশন না নিয়েই ফাইল বন্ধ করে দেয়।
এমনও আরো এক তথ্য, সেই সময় সার্ভেল্যান্স অপারেশন যাতে রাজনৈতিক নেতা, আর সাংসদদের জড়িত থাকার ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সন্নিবেশিত না করার বিষয়েও পুরোপরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো বলে রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে।
এ ছাড়াও ওয়াচ ডগের রিপোর্টে আরো প্রকাশিত হয়েছে যে
০১) উচ্চ পদস্থ রাজনীতিক, পুলিশ অফিসার, সাংসদদের দ্বারা শিশুদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সম্বলিত ডসিয়ার বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো স্পেশাল ব্রাঞ্চ অফিসারদের দ্বারা।
০২) এমনকি শিশু যৌন নির্যাতনের অভিযোগে সাবেক মেট্রোপলিটন সিনিয়র অফিসারদের বিরুদ্ধে কোন একশন নেয়া হবেনা, যাতে জাজ সহ উচ্চ পদস্থ কর্তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।
০৩) পিমলিকোর ডলফিন স্কোয়ারের একজন তরুণকে টার্গেট করা হয়েছিলো, যৌন হয়রানি করা হতো- সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এমপি, মন্ত্রী তাতে জড়িত থাকায় পুলিশ তদন্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পুলিশ কমপ্লেইন্টস কমিশন অবগত হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
আইপিসিসি এখন আরো দুটো অভিযোগের ব্যাপারে পূণরায় তদন্ত করার বিষয়ে ভাবছে বলে মেট্রোপলিটন পুলিশের বরাতে বলা হয়েছে।
ট্যাবলয়েড মিরর ঐ সময়ের শিশু যৌন নির্যাতনকারী হিসেবে লিবডেমের শেরিল স্মিথ, লিওন ব্রিটান ও ব্লেয়ারের একসময়ের মন্ত্রীর ছবিও নিউজের ক্যাপশনে উল্লেখ করেছে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট পুলিশ কমপ্লেইন্টস কমিশনের ডেপুটি চেয়ার ওম্যান সারাহ গ্রিন বলেন, এই অভিযোগ সমূহ ঐতিহাসিক, অতি উচু পর্যায়ের ও উচু লেভেলের করাপশন, আমরা এইগুলো কিছুতেই চোখের আড়াল বা এমনি এমনি চলে যেতে দিতে পারিনা, আমরা এর টার্মস অব কন্ডিশান পুরনের জন্য সেট করবো। তিনি জনগনকে সেজন্যে আশ্বস্থ করেছেন, পূর্ণ তদন্ত যথাযথভাবে চলবে।
এদিকে মেট্রোপলিটন পুলিশও এক ব্যখ্যায় তদন্ত চালু ও অব্যাহত থাকার ঘোষণা দিয়েছে।