সোয়া এক লাখ কোটি টাকা অবৈধভাবে বাইরে পাচার !
মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে হানা দেবে দুদক
মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে যেসব বাংলাদেশী অবৈধভাবে বিনিয়োগ করেছেন তাদের বিষয়ে যৌথ অনুসন্ধানের জন্য মালয়েশিয়া সরকারের সহায়তা নিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী জুনের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা চুক্তি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহকে সামনে রেখে বিভিন্ন সম্প্রচার মাধ্যমের মালিক ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে দুদক। এতে সংস্থার চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান, কমিশনার ড. নাসির উদ্দিনসহ প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এবং বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের শীর্ষ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনার সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় যারা সেকেন্ড হোম করেছেন তারা হাইপ্রোফাইল। এ বিষয়ে বেশকিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের এমওইউ (সমঝোতা চুক্তি) হলে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে।’
সাহাবুদ্দিন জানান, দুদক জাতিসংঘের দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা আনকাকসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য। এগুলোর সহায়তায় দুদক মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমাঝোতা চুক্তি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, সেকেন্ড হোমের নামে অর্থ পাচারের বিষয়টি গত বছর অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। উপপরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বিশেষ দল অভিযোগটির অনুসন্ধান করছেন। তাদের হাতে রয়েছে একটি বড় তালিকা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার উদ্দেশ্য নিয়েই বিদেশে সেকেন্ড হোম বা নাগরিকত্ব নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন প্রভাবশালীরা। আর এর নেপথ্যের প্রধান কারণটি অবৈধভাবে আয় করা কালো টাকা পাচার করা।
দুদক সূত্র জানায়, সেকেন্ড হোম প্রকল্পের অধীনে বিদেশে পাড়ি জমানোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে রাজনীতিবিদরা। সুবিধাভোগী শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও আমলারা রয়েছেন দ্বিতীয় নম্বরে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোট সরকারের গত মেয়াদে মেয়াদের শেষ দিকে বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য সেকেন্ড হোম প্রকল্পে আবেদন করেছিলেন ৬৪৮ জন বিশিষ্ট ব্যাক্তি। যার মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের ২৮৭ জন, বিএনপি-জামায়াতের ৯৬ জন এবং বাকি ২৬৫ জন সুবিধাভোগী শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও আমলা। আর এদের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরে মালয়েশিয়া। এর পরেই রয়েছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ পাচার নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি বা জিএফআইয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক হাজার ৬০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা প্রায় সোয়া এক লাখ কোটি টাকা অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে।