আইসিসি দলের ষ্টেডিয়াম পরিদর্শন : বিশ্বকাপের স্বপ্নপূরণের অপেক্ষায় সিলেটবাসী
সিলেটে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ভেন্যু নিয়ে স্বপ্ন পূরনের অপেক্ষায় রয়েছেন সিলেটবাসী। শংকা, আশংকা এবং আশা নিরাশার মাঝে সিলেটের বিভাগীয় ষ্টেডিয়াম পরিদর্শন করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) পর্যবেক্ষক দল। রোববার তারা মাঠ পরিদর্শনে আসেন। তবে সিদ্ধান্ত প্রদান ছাড়াই পর্যবেক্ষক দল ফিরে গেছে এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে আবারও ষ্টেডিয়াম পরিদর্শনে আসার কথা জানিয়েছের তারা। আর তখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
রোববার সকাল সাড়ে ১১ টায় আইসিসির ইভেন্ট ম্যানেজার ক্রিস টেটলির নেতৃত্বে ষ্টেডিয়াম পরিদর্শনে আসে আইসিসি পর্যবেক্ষক দল। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন টুর্ণামেন্ট ডিরেক্টর ধীরাজ মালহোত্রা, কনসালটেন্ট ভ্যান ভুরেন ইউজিন ও পিস বিশেষজ্ঞ কিয়েন সেংসহ বিসিবি ও এনএসসি কর্মকর্তারা। এসময় পর্যবেক্ষক দল প্রায় ৩ ঘন্টা ষ্টেডিয়ামের উন্নয়ন কাজের অবকাঠামো পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে ষ্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন নব নির্বাচিত সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, ষ্টেডিয়ামের কনসালটেন্ড এ. মাসুদ সহ সংশ্লিষ্টরা। পরিদর্শন শেষে পর্যবেক্ষক টিমের প্রধান ক্রিস টেটলি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শুধু পরিদর্শন করেছি। বিসিবি, এনএসসি ও ষ্টেডিয়াম সংশ্লিষ্টরা তাদের কাজ করছেন। এর বেশি তিনি কিছু বলতে চাননি।
এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, আজকের প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেছেন। তারা যে যে বিষয় জানতে চেয়েছেন তা অবহিত করেছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কাজ শেষ করতে পারব। সেপ্টেম্বরের আগে আইসিসি পর্যবেক্ষক দল মাঠ পরিদর্শনে আবার আসবে। তখন হয়তো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
উল্লেখ্য, আগামী মার্চে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ এককভাবে আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সফলভাবে আয়োজনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামকে ভেন্যু হিসেবে প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়। এনিয়ে সিলেটবাসীকে আন্দোলনও কম করতে হয়নি। রাজপথে নেমে আসার পাশাপাশি সভা সেমিনারেও সিলেটকে ভেন্যু করার জোর দাবী জানানো হয়। দীর্ঘ দাবীর প্রেক্ষিতে কয়েকবার আইসিসি প্রতিনিধি দলও সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম ঘুরে যায়। প্রতিটি সফরেই তারা সিলেটকে ‘চমৎকার গ্রাউন্ড’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
গত প্রায় তিন বছর ধরে সিলেটকে ভেন্যু করার বিষয়টি সর্বত্র আলোচনায় আসে। সিলেটবাসীর অভিভাবক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কাছেও নানাভাবে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। ভেন্যু করা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর জোরালো ভূমিকা কামনা করা হয়। নানা ভাবে দাবীর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন জনসভায় অর্থমন্ত্রী ভেন্যু করার নিশ্চয়তাও দেন। কিন্তু তার আশ্বাসে মাসের পর মাস চলে গেলেও বাস্তবে কাজ শুরু করা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। অবশেষে সংশয়, সন্দেহের পর গত ৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে বিভাগীয় স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। তাও মাত্র ছয় মাস হাতে রেখে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম হিসেবে দেখতে চায় আইসিসি। এনিয়ে বিসিবির কাছে নির্দেশনাও দিয়েছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। আইসিসির নির্দেশনা মতো তোড়জোড় করে প্রস্তুতি নেয় বিসিবি। গত ৭ জুন মূল কাজ শুরু হলেও রাস্তা জটিলতা আবারও ভাবিয়ে তুলে। পর্যাপ্ত ভূমি বরাদ্দ না পাওয়ায় রাস্তা নির্মাণ নিয়ে শংকা দেখা দেয়। সর্বশেষ গত ১৭ জুলাই ঢাকায় রুদ্ধধার বৈঠকে রাস্তা নির্মাণে ১ একর ২৪ শতক ভূমিও বরাদ্দ দেয়া হয়।
এদিকে, তাদের আশংকা আর শংকার সাথে বাস্তবতারও মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সিলেটকে ভেন্যু করা নিয়ে খোদ বিসিবি সভাপতিও যেন শংকায়। স¤প্রতি তিনি শংকা প্রকাশ করে বলেছেন, নির্ধারিত সময়ে সিলেট প্রস্তুত না হলে ফতুল্লাকেই বেছে নেয়া হবে। সিলেটের বিকল্প হিসেবে ফতুল্লা স্টেডিয়ামকে প্রস্তুতও করা হচ্ছে। বিসিবি সভাপতি’র এ আশংকা অমূলক নয় বলে দাবী করেছেন সিলেটের ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবী সিলেটের অভিভাবকদের ব্যর্থতার কারণেই দেরীতে শুরু হয়েছে কাজ। তারা বলেন, ফতুল্লাকে প্রস্তুত রাখার অর্থই হচ্ছে সিলেট ঝুলন্ত অবস্থায়।
তবে সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ সাধারণ সম্পাদক জুম্মা আব্বাস রাজু নির্ধারিত সময় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্টেডিয়াম প্রস্তুত হওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ আশাবাদী। তিনি জানান, দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে স্টেডিয়ামের প্রস্তুতির কাজ। ইতোমধ্যে ৫৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গ্রীণ গ্যালারীর কাজ ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। ইনডোর ৫০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ৪ তলা মূল ভবনের কাজ ৫০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ৪টি ফ্লাড লাইটের দুটির কাজ ৫০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। রাস্তা নির্মাণের কাজও চলছে সমানতালে।
সিলেট ক্রীড়া লেখক সমিতির সেক্রেটারী মান্না চৌধুরী নির্ধারিত সময়ে স্টেডিয়াম প্রস্তুতি নিয়ে শংকা ও হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ছয় মাস আগে কাজ শুরু হলে সিলেটবাসী এতবড় সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা থাকতো না। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে সিলেটের অভিভাবক থাকা সত্বেও এরকম হওয়ার কোন কারণ ছিলো না। বিশ্বকাপ আয়োজন থেকে সিলেট বঞ্চিত হলে তাদেরকেই দায়ী থাকতে হবে। তবুও তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে সুর মিলিয়ে বিশ্বকাপের স্বপ্নপূরণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।