ব্রিটেনের রাজনীতিতেও চলছে টাকার খেলা !
রাজনীতিতে টাকার খেলা চলে, এটা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অতি পরিচিত ঘটনা। তাই বলে ব্রিটেন? অবাস্তব মনে হলেও সময়ের সঙ্গে ব্রিটেনের রাজনীতিতে এই টাকা বেশ শক্ত অবস্থানই নিয়েছে। সামনে দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচন। আর নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে টাকার খেলা। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ব্রিটেনের রাজনীতি এবং ব্যবসা একই বৃন্তে দুটি ফুল হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
ব্রিটেনে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনইচএস), সম্পত্তি বণ্টন আইন, অভিবাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যুগুলোতেই আলোচনার টেবিল গরম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এসব ইস্যুর সঙ্গে এবার টাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে। কারণ, টাকা বেশি থাকলেই নাকি আগামী নির্বাচনে দল ভালো অবস্থানে থাকবে। এজন্যই সরকারি-বিরোধীসহ মোটামুটি সব দলই দাতাগোষ্ঠীকে বেশ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনই হোন বা বিরোধীদলীয় নেতা এড মিলিব্যান্ড, সবাই এখন দলের নেতাকর্মীদের চেয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সিইওদের সঙ্গে বৈঠক করতেই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বৈঠকে বসা ছাড়াও সিইওদের সঙ্গে নিয়মিত বিরতিতে ডিনার বা লাঞ্চের টেবিলেও বসছেন রাজনীতিকরা। এ কারণে বিভিন্ন অঙ্কের ডোনেশনের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উপঢৌকনও পাচ্ছেন দেশটির সরকারি এবং বিরোধীদলীয় নেতারা।
তবে কোনো কারণ ছাড়াই রাজনীতিকরা এসব সহায়তা পাচ্ছেন, তা কিন্তু নয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতার কাছে এসে নিজেদের বিশেষ ভাবমূর্তিও তৈরি করছেন ব্রিটেনের নামকরা ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া বড় ধরনের বিভিন্ন অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী। বিভিন্ন ব্যাংক রাষ্ট্রের প্রতি তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে, বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে ধস নামছে এবং সুইস ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় প্রতারণামূলক কাজ সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, এসব ব্যাংক ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলোকে বড় অঙ্কের ডলার ডোনেশন দিচ্ছে। এ কারণেই তারা স্থায়ী নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। ফলশ্রুতিতে লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে আর্থিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম। এর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তদন্তসহ বিভিন্ন ধরনের অনুসন্ধান চালানো হলেও নির্দিষ্ট সময় পর এসব কার্যক্রম থমকে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী নেতাদের মন যোগাতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতিও পরিবর্তিত হচ্ছে। কারণ, ওই বিশেষ নিয়মনীতি বহাল থাকলে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর লোকসান হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা না করেই গোষ্ঠীগত লাভের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েই বিভিন্ন ধরনের আইন-কানুন পরিবর্তন-পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে টাকার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা-সংস্কৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও সময়ের সঙ্গে কম গুরুত্ব পাচ্ছে।
রাজনীতির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের এই মেলবন্ধনের ফলে আরো দুটি কাজ অহরহই ঘটছে। যেমন, অনেক নামকরা ব্যবসায়ী এখন বিভিন্ন দলের হয়ে রাজনীতিতে নাম লেখাচ্ছেন। রাজনীতি করার মতো যোগ্যতার অভাব থাকার পরও স্বনামধন্য দলের টিকিট নিয়ে ব্যবসায়ীরা পুরোদস্তুর রাজনীতিক বনে যাচ্ছেন। অপরদিকে, রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার পর ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবে অনেক রাজনীতিক আবার ব্যবসার দিকেই মনোনিবেশ করছেন। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক সময় ওই রাজনীতিকের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পেয়েছিল, তারাই তার জন্য ব্যবসার পথ উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে এককালের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী হঠাৎ করেই যেমন রাজনীতিক বনে যাচ্ছেন, ঠিক তেমনি রাজনীতিক ব্যক্তিত্বও সময়ের প্রয়োজনে ব্যবসায়ীতে পরিণত হচ্ছেন।
রাজনীতিবিদদের কাছে টাকাটা ক্রমশ মুখ্য হয়ে ওঠার কারণেই এমনটা ঘটছে বলে অনেকের অভিমত। টাকাটা মুখ্য হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে যারা তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতি করে আসছেন, তাদের কপালে মন্ত্রিত্ব না জুটে শিকা ছিঁড়ছে ব্যবসায়ীদের। অনেকের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে এক সময় ব্রিটেনের পুরো রাজনীতিকেই দখল করে নেবে ব্যবসায়ী সমাজ। সেক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনের চেয়ে ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়াদের ইচ্ছার প্রতিফলনই হবে সবচেয়ে বেশি। -গাল্ফ নিউজ