কোন পথে ফিলিস্তিনীদের ভবিষ্যৎ

palestineইসরাইলী নির্বাচনে আবার জিতলেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ফিলিস্তিনীরা ভাবছেন তাদের দাবির পক্ষে ইসরাইলের ওপর আরও কঠোর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির ফলে তাদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হলো। নেতানিয়াহু বরাবর পশ্চিমকে বলে এসেছেন মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের ফর্মুলায় তার সমর্থন রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারের শেষদিকে তাকে বলতে শোনা গেছে, চলতি পরিস্থিতিতে পৃথক ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র গঠন তিনি মানবেন না। এখন ফিলিস্তিনীরা কী করেন- সেটি দেখার অপেক্ষা। বিরোধী ইসরাইলী নেতা হারজগ হেরে গেছেন। ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র গঠনের জন্য সংলাপ তিনি আবার শুরু করতে চেয়েছিলেন। মাহমুদ আব্বাসেরও ঐটিই দাবি। আরব নিউজ/এপি।
নির্বাচনী প্রচারে নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, ১৯৬৭ সালে যুদ্ধে অধিকৃত ফিলিস্তিনী ভূখ- থেকে সরে এসে ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র গড়ার অনুকূলে সংলাপ শুরু করার দাবি তার মতে বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক। কারণ নতুন ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র গড়ে উঠলে সেখানে চরমপন্থী আরবদের আধিপত্য কায়েম হবে।
ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট আব্বাসের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহু অভিযোগ এনেছেন, আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ফিলিস্তিনীদের সমঝোতায় আসতে নেতানিয়াহুকে বাধ্য করতে চেয়েছেন। নেতানিয়াহু আরও অভিযোগ করেছেন, আব্বাস ইসরাইলের সঙ্গে সংলাপের পথে এগোতে চান না।
অন্যদিকে আব্বাস বারবার বলেছেন, ইউএস ইইউ-এর সামনে বহুবার ওয়াদা করলেও সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রিক মীমাংসার পথে ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে সংলাপে বসার প্রশ্নে কোনো সময়েই নেতানিয়াহু আন্তরিকতা দেখাননি। তাহলে ফিলিস্তিনীদের রণকৌশল এখন কী হবে?
ইউএস পরিচালিত সংলাপ দু’দশক ধরে ব্যর্থ হতে দেখে এসেছেন আব্বাস। ওয়াশিংটনকে মধ্যস্থ হিসেবে আব্বাস আর দেখতে চান না। আব্বাসের মতে, সমঝোতায় বসতে বাধ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় চাপ ইসরাইলের ওপর প্রয়োগ করতে এ পর্যন্ত ওয়াশিংটনকে দেখা যায়নি। এজন্যই আব্বাস মনে করেন, সমস্যা নিষ্পত্তির চেষ্টায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তিনি জড়িত দেখতে চেয়েছেন। এই পরিবর্তিত রণনীতির অংশ হিসেবে তিনি জাতিসংঘের দ্বারস্থ হন এবং ১৯৬৭ সালে ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুসালেম নিয়ে একটি ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র গড়ার পক্ষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২০১২ সালে স্বীকৃতি আদায় করেন।
চলতি বছরের শুরুতে আইসিসি (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে) যোগ দেয় ফিলিস্তিন। যুদ্ধাপরাধের ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে ফিলিস্তিন সেখানে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখবে আইসিসি।
আব্বাসের সিনিয়র পরামর্শক এরেকাত বলেছেন, আরও বেশি আন্তর্জাতিক সমর্থন যোগাড়ের উদ্দেশ্যে আরও বহু বিশ্ব সংস্থার দ্বারস্থ হবে ফিলিস্তিন।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে বয়কট, প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞার মতো বেশকিছু নেতিবাচক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছে। ফিলিস্তিনী রণকৌশলের বিজয় বলতে হবে এই পদক্ষেপগুলোকে। সুইডেনের পথ ধরে ১৯৬৭ সালের সীমান্তভিত্তিক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে এগোবে আরও কিছু ইউরোপীয় দেশÑ মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। যদিও ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কেবল তখনই সম্ভব হবে যখন ইসরাইল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে মেনে নেবে। অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইতিমধ্যে বসতি গেড়ে বসেছে ছয় লাখের মতো ইসরাইলী। এই প্রক্রিয়া ইসরাইল অব্যাহত রাখলে ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হবে। অনেকের মতে, ফিলিস্তিনীদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গড়ার সময় ও সুযোগ ইতিমধ্যে প্রায় হাতছাড়া হয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও আব্বাস ও নেতানিয়াহু পরস্পরের স্বার্থেই পশ্চিম তীরে সহিংসতা এড়িয়ে চলতে চেয়েছেন বরাবর। আব্বাসের বাহিনী এবং ইসরাইলী সৈন্যরা নিজেদের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বরাবর বিনিময় করে এসেছেন। উভয়েই তাদের অভিন্ন শত্রু ভেবেছেন হামাসকে।
আব্বাসের হাত থেকে হামাস গাজা ছিনিয়ে নেয় ২০০৭ সালে। হামাসকে হুমকি মনে করা হচ্ছে পশ্চিম তীরের জন্যও। আব্বাস আইসিসি’র দ্বারস্থ হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনীদের পক্ষে রাজস্ব বাবদ তোলা এবং ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষকে প্রদেয় দশ কোটি ডলারের বেশি রাশিটি ইসরাইল ফিলিস্তিনে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে মুখথুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে পিএ। নেতানিয়াহুকে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বলেছে পশ্চিম তীর। অতীতে পশ্চিম তীরের আরও উন্নতি ঘটানোর উদ্যোগ নিতে চেয়েছিলেন নেতানিয়াহু। দ্বিরাষ্ট্রিক সমঝোতার জয়গান পশ্চিম তীরে অর্থনৈতিক স্বস্তি আনতে চেয়েছিলেন নেতানিয়াহু।
পশ্চিম তীরবাসীর প্রযোজ্য বহু বিধি-নিষেধ রীতিমতো শিথিলও করেছে ইদানিং ইসরাইলী সেনাবাহিনী। কাজের জন্য ইসরাইলে ফিলিস্তিনী তরুণদের প্রবেশের বয়সসীমাও তারা কমিয়ে দিয়েছে। ‘স্পেশাল পাস’ ছাড়াই বৃদ্ধ ফিলিস্তিনীদের ইসরাইলে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ইতিমধ্যে আব্বাসের ওপর পশ্চিম তীরে চাপ বাড়তে শুরু করেছে যে, ইসরাইলের সঙ্গে পশ্চিম তীরের এযাবৎ বহাল নিরাপত্তা সম্পর্ক আব্বাস যেন বাতিল করেন।
এই দাবিতে বিশেষ আলোচনার জন্য শীঘ্রই পিএলও’র একটি বৈঠকে বসার কথা। পিএলও’র এক মুখপাত্র এর মধ্যেই বলে দিয়েছেন, ইসরাইলের সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্ক অচিরেই ছিন্ন করা হবে। এই দাবি এর আগে আব্বাস মানেননি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবারও তিনিই নেবেন। পশ্চিম তীরে বর্তমানে চলছে এক ধরনের পঙ্গুত্ব ও নির্বিকারত্বের অবস্থা। ইতিমধ্যেই ক্ষমতায় ৫ বছর বেশি থেকে গেছেন আব্বাস। তার অভিযোগ, হামাস নতুন নির্বাচন হতে দিচ্ছে না। ফিলিস্তিনী জনমত জরিপ বলছে নিত্য-নতুন ইহুদি বসতি গড়ে ওঠার কারণে নিজেদের জন্য ফিলিস্তিনীদের কোনো পৃথক রাষ্ট্র গঠন আর সম্ভব হবে না। সামনে এমনও দেখা যেতে পারে যে, নেতানিয়াহুকে মোকাবিলার যোগ্য ফিলিস্তিনীরা আব্বাসকে আর মনে করছেন না।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button