‘ইকোনমিক টাইমস’ পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার এককভাবে দখল করে নিচ্ছে ভারত
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। চীনের তৈরি পোশাকের উচ্চ মূল্য। এই দু’য়ের কারণে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের বাজারে একক নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে ভারত। আর এ কথা খোদ ভারতের পোশাক রফতানিকারকরাই স্বীকার করেছেন। ভারতের নিজেদের হিসেবেই গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের তৈরি পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৪ শতাংশ। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের পোশাক রফতানি ছিল ১৫৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা ছিল আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আর চীনের তৈরি পোশাক উৎপাদন ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতির কারণে এ দেশ দুটি থেকে বিশ্ব বাজারের মনোযোগ সরে আসছে। আর এতে সুবিধা পাচ্ছেন ভারতীয় পোশাক রফতানিকারকরা। বাংলাদেশ ও চীনের বাজার থেকে গার্মেন্টের বড় বড় সব অর্ডার চলে যাচ্ছে ভারতে।
সম্প্রতি ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এ পরিস্থিতিতে ভারতীয় পোশাক রফতানি সুবিধা পেতে যাচ্ছে। একটি সূত্র জানায়, গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের তৈরি পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৪ শতাংশ। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি (সিটি)-এর মহাসচিব ডি কে নায়ার ইকোনমিক টাইমসকে জানান, চলমান অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানিতে উৎসাহব্যঞ্জক ক্রমবৃদ্ধি দেখা গেছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘দেশটির রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি নিরাপত্তা ইস্যুগুলো সেখানকার পোশাক শিল্পের জন্য গুরুতর সমস্যা হয়ে আবির্ভূত হয়েছে।’ বাংলাদেশের কিছু বিদেশী ক্রেতা এখন ভারত থেকে পোশাক ক্রয়ের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের পোশাক রফতানি ছিল ১৫৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা ছিল আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
এদিকে দেশের গার্মেন্ট শিল্প খাতে নানাভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করে এই শিল্পকে পাটের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিজ্ঞমহল থেকে আশংকা প্রকাশ হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই গার্মেন্ট শিল্পের বিশৃঙ্খলা ও নানা ঘটনা প্রবাহে অস্থিরতা সৃষ্টি করে বিদেশী ক্রেতাদের বাংলাদেশের পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে একটি মহল থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সুযোগ সন্ধানী এই মহলটি বাংলাদেশ ও গার্মেন্ট বিষয়ে বিদেশী ক্রেতাদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে। তারা একই সাথে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার খবরটি ফলাও করে বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশও করছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে গার্মেন্ট খাত নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করে আমাদের এই শিল্পকে পাটের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ারও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, একটি মহলের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই একটি সুসমন্বিত ব্যবস্থায় বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প নিয়ে বিদেশে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করছে। তারা সংবাদের পাশাপাশি ভবন ধ্বস ও অগ্নিকান্ডের ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করে বিদেশী ক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের অবহিত করছে। এর মাধ্যমে এদেশের পোশাক শিল্প সর্ম্পকে বিদেশী ক্রেতারা আগ্রহ হারাচ্ছে। ঠিক এভাবেই এক সময় এদেশের চিংড়ী শিল্পকে নিয়েও ষড়যন্ত্র হয়েছে। পাট শিল্পকে এদেশ থেকে সরিয়ে দিতে স্বাধীনতা উত্তর সময়ে ঘন ঘন পাটের গুদামে আগুণ দেয়া হতো। পরে এই শিল্প এদেশে আর টিকতে পারেনি।
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত দেশের তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে চলছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। সাম্প্রতিক সময়ে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পরে এখানেও এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে ভবন মালিক সরকারের দলীয় লোক হওয়া সত্ত্বেও খোদ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রানাকে দলীয় লোক নয় বলে মিথ্যাচার করা হয়েছে। তাই সংশয় দেখা দিয়েছে এই নির্মম ঘটনারও হয়তো কোন তদন্ত হবে না, অপরাধীরাও একদিন পার পেয়ে যাবে। দেশের চলমান অবস্থায় গার্মেন্ট সেক্টরের এই অস্থিরতার পেছনে ইন্ধন দেয়ার জন্য সরকার মালিক বা শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও বরাবরই অস্বীকার করা হচ্ছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে দেশের উদীয়মান এই শিল্পকে ধ্বংস করতে অস্থিরতা তৈরি করে প্রকৃত অর্থেই ফায়দা লুটছে কারা?
সচেতন মহল এটাও মনে করছেন বর্তমান গার্মেন্ট শিল্পের মতো এ ধরনের অনেক ষড়যন্ত্র আমাদের নিকট অতীতে পাট শিল্পকে নিয়েও হয়েছে। আর একারণেই বাংলাদেশ এখন পাটের কোন শিল্প নেই অথচ এই পাট শিল্পটি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে আমাদেরই প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে বাংলাদেশের পাটের মাধ্যমেই অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। অথচ পাট উৎপাদন করেও আমরা এই শিল্প ধরে রাখতে পারি নাই।
সূত্র জানায়, আমাদের মোট রফতানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আয়ই সাভার, আশুলিয়া এবং কাঁচপুরের পাঁচ শতাধিক গার্মেন্ট কারাখানার উৎপাদিত পণ্য রফতানি করে অর্জিত হয়। আর টাকার অংকে এর পরিমাণ হবে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। আর এ কারণেই পাশ্ববর্তী ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশ আমাদের এই অঞ্চলের গার্মেন্ট শিল্পকে টার্গেট করেছে।