ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন
১০ ডাউনিং স্ট্রিটের লড়াই জমছে
নুরুল ইসলাম: লন্ডনের ডাউনিং স্ট্রিটের ১০ নম্বর বাড়িটির দখল নিয়ে জমে উঠেছে নতুন লড়াই। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানা এ বাড়ি। এখানে বসেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসন দেখভাল করেন তিনি। এ বাড়িতেই থাকেন পরিবার নিয়ে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের নির্বাচনে যে দল জয়লাভ করে, সে দলের নেতা টিকিট পেয়ে যান ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের। প্রতি পাঁচ বছর পর হয় এ নির্বাচন। আগামী ৭ মে ব্রিটেনে হতে যাচ্ছে ৫৬তম সাধারণ নির্বাচন। আর মাত্র ৩৮ দিন বাকি। ৭ মের ব্যালট-যুদ্ধে ঠিক হবে কনজারভেটিভ পার্টি বা রক্ষণশীল দলীয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন আরও পাঁচ বছরের জন্য ডাউনিং স্ট্রিটে থাকবেন, নাকি বাড়িটির নতুন বাসিন্দা হবেন প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা
এড মিলিব্যান্ড; নাকি কোয়ালিশনের নাটকীয়তায় ভাগ্য খুলে যায় বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (লিব-ডেম) নেতা নিক ক্লেগের।
সর্বশেষ ২০১০ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন লেবার পার্টিকে পরাজিত করে লিব-ডেমের সমর্থনে কোয়ালিশন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন রক্ষণশীল বা টোরি দলের ডেভিড ক্যামেরন। ৬৫০ আসনের হাউস অব কমন্সে তখন টোরি দল পায় ৩০২ আসন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ২৫৬ ও লিব-ডেম পায় ৫৬ আসন। অনেক দেনদরবার শেষে উদারনৈতিক লিব-ডেমের সঙ্গে গঠিত হয় রক্ষণশীলদের অস্বাভাবিক কোয়ালিশন সরকার। গত পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের অন্যতম বড় কৃতিত্ব সেই ‘অস্বাভাবিক’ কোয়ালিশনের একটি স্থিতিশীল সরকারকে মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত টেনে আনা।
অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রীয় ঋণ মোকাবেলা এবং সরকারের নানা পদক্ষেপে আসন্ন নির্বাচনে খুব বেশি স্বস্তির অবস্থানে নেই ক্যামেরনের টোরি দল। যদিও গত ২৬ মার্চ রাতে নির্বাচন-পূর্ববর্তী প্রথমবারের মতো টেলিভিশন পর্দায় লেবার পার্টি নেতা এড মিলিব্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি প্রশ্নোত্তরে অংশ নিয়ে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থান প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন ক্যামেরন। চ্যানেল ফোর ও স্কাই নিউজে সরাসরি সম্প্রচার হওয়া ‘ব্যাটল ফর নাম্বার টেন’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত উপস্থাপক জেরেমি প্যাক্সম্যানের কঠিন সব প্রশ্নের মুখোমুখি হন দু’জনই। অনুষ্ঠান শেষে গার্ডিয়ান/আইসিএসের তাৎক্ষণিক জনমত জরিপে দেখা যায়, ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাদের মতে এতে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের পারফরম্যান্স ছিল ভালো। বাকি ৪৬ শতাংশ উত্তরদাতা মত দেন, লেবার পার্টি নেতা এড মিলিব্যান্ডের পক্ষে। বিশ্লেষকদের মতে, এড মিলিব্যান্ডের দুর্বল নেতাসুলভ মনোভাবের কারণেই আপাতত উতরে গেলেন ডেভিড ক্যামেরন। আর এটা ছিল শুধু প্রশ্নোত্তর পর্ব। উপস্থাপক জেরেমি প্যাক্সম্যানের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন দুই নেতা। পরস্পরের সঙ্গে বিতর্কে জড়ানোর সুযোগ ছিল না এতে। আগামী ২ এপ্রিল ক্যামেরন, মিলিব্যান্ড ও লিব-ডেম নেতা নিক ক্লেগের মধ্যে হবে সরাসরি টেলিভিশন বিতর্ক অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে ছোট্ট দল ইউকিপ, গ্রিন, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ও প্লেইড সিমরুর নেতারাও থাকবেন। সবকিছু ছাপিয়ে ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনেও কোনো দলের নিরঙ্কুশ জয়ের সম্ভাবনা আপাতত নেই। তার মানে ২০১০ সালের মতো এবারও হতে যাচ্ছে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট ও কোয়ালিশন সরকার। সে জন্য আরেকটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে এরই মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন। ‘দ্য স্পেকটেটর’ নামে একটি ব্রিটিশ ম্যাগাজিনের খবর :ক্যামেরন সম্প্রতি এ বিষয়ে কমপক্ষে দু’দফা আলোচনা করেছেন সংশ্লিষ্ট শরিকদের সঙ্গে। কারণ, রক্ষণশীল দলের সংখ্যালঘু সরকার তিনি চান না। তা ছাড়া দ্বিতীয় মেয়াদে লিব-ডেমের সঙ্গে ‘অবাস্তব’ কোয়ালিশন সরকারও তার পছন্দ নয়। এরই মধ্যে বর্তমান কোয়ালিশন সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী লিব-ডেম নেতা নিক ক্লেগও বলেছেন, নির্বাচনে যে দল বেশি আসন পাবে, তাদের সঙ্গেই কোয়ালিশন চুক্তি করতে তিনি প্রস্তুত। যদিও এখনই কোয়ালিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন। তিনি বলেন, ৭ মের নির্বাচনে আমরা নিরঙ্কুশ জয়ই চাই। অন্যদিকে, ক্যামেরনের সঙ্গে সরাসরি টিভি প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ সেরে শুক্রবারই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা এড মিলিব্যান্ড। একটাই লক্ষ্য, রক্ষণশীল দলকে পরাজিত করে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ডেভিড ক্যামেরনের স্থলাভিষিক্ত হওয়া। পূর্ব লন্ডনের অলিম্পিক পার্কে প্রচারযাত্রার উদ্বোধন করে মিলিব্যান্ড স্বীকার করেন, ৭ মের নির্বাচন হবে ‘একটি প্রজন্মের সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সাধারণ নির্বাচন’। ক্ষমতায় গেলে মধ্য ও নিম্ন আয়ের ভোটারদের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, রক্ষণশীলদের শাসনামলে এ দুই শ্রেণী একেবারেই অবহেলিত। মিলিব্যান্ড জোর দিয়ে বলেন, ‘টোরিরা বলছে, তারা যে শাসন দিচ্ছে সেটা ভালো; কিন্তু আমরা বলছি, ব্রিটেন এরচেয়ে অনেক ভালো কিছু করতে পারে।’
তার ঠিক একদিন পর গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে হাড্ডাহাড্ডি হবে প্রধান প্রতিযোগী মিলিব্যান্ডের সঙ্গে সে বিষয়ে একমত পোষণ করেন ক্যামেরন। প্রতিশ্রুতি দেন, রাষ্ট্রায়ত্ত জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনএইচএস) আরও উন্নত করার। উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে রক্ষণশীল পার্টির বসন্তকালীন সম্মেলনে ক্যামেরন ছুটির দিনসহ সপ্তাহের সাত দিনই সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে সান্ধ্যকালীন স্বাস্থ্যসেবা সহজ করার কথাও বলেন তিনি।