নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার ঘোষণায় ইরানে উল্লাস
ইরানের সাথে ছয় জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক সমঝোতা
ইরানের সঙ্গে ছয় জাতিগোষ্ঠীর চূড়ান্ত পরমাণু চুক্তির বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের লোজেন শহরে টানা আট দিনব্যাপী ম্যারাথন আলোচনার পর এই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তেহরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ইরানবিরোধী প্রস্তাব তুলে নিতে আহ্বান জানিয়েছে ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠী। ঐতিহাসিক সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য ছয় জাতিগোষ্ঠীর প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়ে ওবামা বলেন, এতে তিন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি করার পথ তৈরি হয়েছে। চুক্তির বিষয়ে যৌথ বিবৃতি পাঠ করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি। চুক্তিতে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া, এতে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি চক্রের শিল্পখাতে উৎপাদনও নিশ্চিত করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী- ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা সংক্রান্ত যৌথ কর্ম-পরিকল্পনা ১০ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে। এ সময়ে নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রে পাঁচ হাজার সেন্টিফিউজ ৩.৬৭ মাত্রায় ইউরেনিয়াম উৎপাদন অব্যাহত রাখবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকো মোগারনি জানিয়েছে ইরানের ‘পরমাণু ক্ষমতা এবং মজুদ হবে সীমিত।’ বিস্তৃত পারমাণবিক চুক্তি ৩০ জুনের মধ্যে স্বাক্ষরিত হবে বলেও জানান ফেডেরিকো।
ইরান পারমানবিক অস্ত্র নির্মাণের চেষ্টা করছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে পশ্চিমা বিশ্ব। তবে ইরান সে অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহার করতেই এই আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল।
পি-৫ তথা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সমঝোতা না হওয়ায় সময় বাড়ানো হয়। বাড়ানো সময়েই শেষ সমঝোতা হলো।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই সমঝোতা থেকে ফিরে এলে ইরানের উপর আবারও অবরোধ আরোপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। চুক্তিতে সম্মতি প্রকাশের পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, ‘নিষ্পত্তিমূলক পদক্ষেপ’ অর্জিত হয়েছে। তিনি একে উভয়পক্ষের জয় বলে উল্লেখ করেছেন।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার টুইটারে লিখেছেন, ‘চূড়ান্ত চুক্তি কাঠামোর জন্য সম্মতিতে পৌঁছেছি।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, ‘দারুণ দিন … চূড়ান্ত চুক্তির জন্য শীঘ্রই কাজে ফিরতে হবে’। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও। নিজের টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘যেকোনো চুক্তিই ইরানের পরমাণু ক্ষমতা, তার সন্ত্রাস ও আগ্রাসন বন্ধ করতে উল্লেখযোগ্যভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে।’
সুইজারল্যান্ডের লুজান শহরে আট দিন ধরে আলোচনার পর বৃহস্পতিবার ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে তেহরান ও ছয় বিশ্বশক্তি।
সমঝোতা অনুসারে, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হয়েছে। এর অংশ হিসেবে দেশটি সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা ১৯ হাজার থেকে কমিয়ে ছয় হাজারে নিয়ে আসবে। নিম্নমাত্রায় সমৃদ্ধ করা ইউরেনিয়ামের মজুত কমিয়ে আনবে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকেরা ইরানের সেন্ট্রিফিউজ ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অবকাঠামোগুলো পর্যবেক্ষণ করবে। স্থাপনাগুলো নিয়মিতভাবে পরিদর্শন করতে পারবে আইএইএ। ইরান মারকাজি প্রদেশের রাজধানী আরাকে ভারী পানির চুল্লির নকশার পরিবর্তন করবে, যাতে দেশটি আর অস্ত্র তৈরির পর্যায়ের প্লুটোনিয়াম তৈরি করতে না পারে। এদিকে কয়েক দশকের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার ঘোষণায় উল্লাসে মেতে উঠেছে ইরানিরা। সমঝোতায় পৌঁছানোর ঘোষণার পরই বহু ইরানি রাজপথে নেমে আসেন।