দেশকে জাহান্নাম বানাচ্ছে এরা কারা
উবায়দুর রহমান খান নদভী: যে কোনো মাপকাঠিতে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিময়, সম্প্রীতিপূর্ণ দেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। এ দেশে দারিদ্র্য আছে, অভাব আছে, নানাক্ষেত্রে বেশ সমস্যাও আছে তবে সম্প্রীতি, মানবিকতা, ভাবসম্পদ, বিশ্বাস, ভালোবাসা ও মানবীয় উচ্চমূল্যবোধ এসবকে ছাপিয়ে এখানে অপূর্ব এক জীবনসুখ নির্মাণ করে রাখে যার তুলনা উন্নত দেশগুলোতেও পাওয়া যায় না। হাজার বছরের ধর্মীয় আবহ, নৈতিক বাতাবরণ ও আধ্যাত্মিক যত্নশীলতা এ দেশের মানুষকে করেছে অসংখ্য সৎ গুণ ও আচরণে সমৃদ্ধ। যা তাদের স্বাধীনচেতা, আত্মমর্যাদাশালী ও সংগ্রামী করেছে। ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা, অল্পেতুষ্টি ও পরার্থবাদ তাদের অস্থি-মজ্জায় মিশে গেছে। শত উস্কানি ও সহস্র চক্রান্তও তাদের অশান্ত, উচ্ছৃঙ্খল ও উগ্রবাদী করতে পারে না। এ দেশের মানুষ ভীষণ শান্তিপ্রিয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপ্রবণ, উদার ও অতিথিপরায়ণ।
গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক অচলাবস্থা, হানাহানি, বিশৃঙ্খলা, গণতন্ত্র-স্বৈরতন্ত্র লুকোচুরি খেলা, আন্দোলনের দীর্ঘ কর্মসূচি, ভয়াল নাগরিক আবহ, উদ্বেগ-ভীতি ও অনিশ্চয়তার অন্তহীন বাতাবরণ দেশের জনগণকে চরম অস্বস্তিতে ডুবিয়ে রেখেছে। মানুষ আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে শোষণের শেষসীমায় পৌঁছে গেছে। লুণ্ঠিত তাদের রাজনৈতিক অধিকার। মত প্রকাশ, অবাধ চলাচল, জীবিকা অর্জন, লেখাপড়া, ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, ইচ্ছেমতো ভোটাধিকার প্রয়োগ, নেতা ও শাসক নির্বাচন ইত্যাদি কিছুই আর স্বাভাবিক নিয়ম মতো হচ্ছে না।
স্বাধীনতার ৪৫ বছরে পা দিয়েছে বাংলাদেশ। সমান সময়ে যারা বহুদূর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল তারা আজ বহুদূর এগিয়ে। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর তো বটেই এমনকি আশপাশের ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপও উন্নত ও সভ্য পৃথিবীর অগ্রসর দেশের কাতারে। কিন্তু বাংলাদেশ তার অতুলনীয় নাগরিক মনস্তত্ত্ব, ঈর্ষণীয় জনমন, জাতীয় ইতিবাচক ভাবনা এবং গঠনমূলক জনশক্তি সত্ত্বেও ব্যর্থ রাজনীতি, অযোগ্য নেতৃত্ব আর ভুল নীতিমালার ফলে অনেকের চেয়ে পেছনে পড়ে আছে। দুর্নীতির দিক দিয়ে বিশ্বসেরা, পরিবেশ দূষণ ও বসবাসের অনুপযুক্ত হিসেবে প্রথম কাতারে আর অসুখী নাগরিকের শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশ যখন ঘুরে ফিরে আসে, যখন বছর ঘুরলেই কেবল মন্দ তালিকায় এ দেশের নাম আরো শীর্ষে উঠতে থাকে- তখন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশীরা কেবল লজ্জিত, হতাশ আর হীনম্মন্যই হয়ে থাকেন। রাজনৈতিক নেতৃবর্গ ও দায়িত্বশীলরা কখনো অনুতপ্ত হন না। তাদের মধ্যে অনুশোচনা নেই। ভুল স্বীকারের সংস্কৃতি নেই। দায় স্বীকারের ভদ্রতাটুকু নেই। আত্মবিশ্লেষণের যোগ্যতা নেই। আত্মসংশোধনের ইচ্ছা বা তাগিদ নেই। সিন্দাবাদের ভূতের মতো, জগদ্দল পাথরের মতো তারা দেশ ও জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছেন। স্বাধীন দেশটির মানুষ এখন নিজস্ব এ আপদের হাতে বন্দি। মন্দ নীতি, কূটকৌশল, অযোগ্য নেতা ও দুর্নীতিবাজ দায়িত্বশীলদের হাত থেকে এ জাতির হয়তো মুক্তি নেই, রেহাই নেই। ৪৫ বছরের রাজনীতি এ দেশকে কী দিয়েছে বা বর্তমান ও অনাগত দিনগুলোতে কী কী দেবে তা গবেষণার বিষয় বটে। তবে এ দেশের মানুষের মন প্রবণতা ও আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে দুটি কথা বলা দরকার। এ বিষয়গুলো না বুঝে, বুঝেও না বোঝার ভান করে কিংবা বুঝে-শুনেই এসবের প্রতি অবজ্ঞা করে কোনো অপশক্তি কি দেশটিকে জাহান্নাম বানাতে চাইছে কিনা সেটিও সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা প্রয়োজন।
আমাদের নেতৃবৃন্দকে জানতে হবে, বুঝতে হবে কারা সোনার বাংলাকে জাহান্নামে পরিণত করতে চায়। নতুন প্রজন্মকে বুঝতে হবে কী করে একটি দেশের সহজাত প্রকৃতিকে দুমড়ে-মুচড়ে বিকৃত করা হচ্ছে। সভ্য জগতের সকল নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে কেমনভাবে একটি জাতির সমুদয় অধিকার ভূলুণ্ঠিত করা হচ্ছে। গত জানুয়ারির প্রথম দিকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক আন্দোলন, সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মতৎপরতা ইত্যাদি জনগণের জন্য ছিল নিঃসন্দেহে উদ্বেগের কারণ। এ লেখা তৈরি করার দিন পর্যন্ত বিরোধী দলের টানা অবরোধের ৮৯তম দিবস চলছিল। এত দীর্ঘ অবরোধ, অধিক হারে হরতাল, বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, মিটিং-মিছিল পৃথিবীর আর কোন দেশে কখন হয়েছিল তাও ভাববার বিষয়। যেমন খুঁজে দেখতে হবে রাজনীতির এমন অসংলগ্নতা। পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারার রহস্যময় ব্লেইমগেম। সাংবিধানিক উপায়ে গণতন্ত্রের এমন প্রাণ সংহার, নির্বাচন নামের প্রহসনে এমন প্রতিনিধিত্বহীন সরকার, রাষ্ট্রীয় শক্তির এত নগ্ন রাজনৈতিক ব্যবহার, ব্যাপকহারে খুন, গুম, ক্রসফায়ারে হত্যা, পঙ্গু-অথর্ব করে দেয়া, বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, বন্দী করে রাখা, মামলা দিয়ে দাবড়ে বেড়ানোর এমন মহোৎসব, দলীয়করণ ও ভিন্নমতাদর্শের প্রতি এতটা অসহিষ্ণুতা সম্ভবত: ইতিহাসে সন্ধান করেও পাওয়া দুষ্কর।
সে যাই হোক, সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে রাজনীতিকরা সম্ভব-অসম্ভব নির্বিশেষে সবকিছুই বাস্তবায়ন করে দেখাচ্ছেন। জনগণও অপেক্ষা করে আছেন, দেখছেন তারা কতদূর যান বা যেতে পারেন। কিন্তু এত বিশৃঙ্খলা, আন্দোলন ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও জনগণের ধর্মীয় কার্যক্রম এক মুহূর্তের জন্যও থেমে থাকেনি। আন্দোলনের ভীতি ও অনিশ্চয়তায় এ দেশে বড় বড় বিপণী কেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি পাইকারি মার্কেট, আড়ত ইত্যাদিতে চরম ক্রেতাশূন্যতা-মন্দা চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য নেই বললেই চলে। খেলাধুলা, সামাজিক উৎসবেও জনউৎসাহে ভাটার টান। কিন্তু হতাশা ও অস্থিরতার শিকার মানুষ ধর্মীয় কাজকর্মে মোটেও হতাশ বা পিছপা নয়। আন্দোলন ও প্রতিহতের কঠিন সময়ে এ দেশে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ভয়ভীতি-আশংকা-উত্তেজনা ঝেড়ে ফেলে শরিক হয়েছেন। নানাকারণে হেফাজত কোণঠাসা হলেও আল্লামা আহমদ শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর উপস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হয়েছে। দাওয়াতুল হকের ডাকে লাখো আলেম-জনতা ছুটে এসেছে। ছোট বড় মাহফিলে কোটি জনতা ধর্মীয় বার্তা পেতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ভারতের ফুরফুরা, মেদেনীপুরসহ বাংলাদেশের শর্ষীণা, চরমোনাই, মৌকারা, সোনাকান্দা, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহ, পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে এ ভয়ভীতি-আন্দোলনের এক কথায় রাজনৈতিক উত্তেজনাকর অস্থির সময়ে হাজার হাজার মাহফিলে কোটি কোটি মানুষ বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় অংশগ্রহণ করেছেন। রমজান সামনে, মসজিদ ও জুমার নামাজে নামবে তরুণ-সমাজের ঢল। নাস্তিক্যবাদের ঝড়ের ভেতরও দিনদিন বাড়ছে নামাজিদের ভিড়। মসজিদগুলো উপচে পড়ছে। নারীরা নামাজ তালীম ও দ্বীনি কাজে অতীতের চেয়ে বেশী ঝুঁকছে। এটিই আসল বাংলাদেশের চিত্র। আবহমান কালের সোনার বাংলার এটিই অকৃত্রিম সুন্দরতম রূপ। যারা ধর্মবিদ্বেষ লালন ও চর্চা করতে চান, যারা রহমত-বরকত ও মাগফেরাতের জাতীয় সংস্কৃতিকে নাস্তিক-মুরতাদ সংস্কৃতিতে পরিণত করতে চান, যারা ঈমান, ইসলাম, আমল, আখলাকের ভাবধারাকে ইবলিশি কালচার বা জাহান্নামি জীবনাচারে রূপান্তরিত করতে চান- তাদের বাস্তব থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। দোয়া করি, গযবে ধ্বংস করার আগেই আল্লাহ তাদের সুমতি দান করুন।
গত ৩০ মার্চ রাজধানীর মহাখালী গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে পবিত্র কোরআনের আলো-২০১৫ প্রতিযোগিতার জেলাভিত্তিক বাছাইপর্ব অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন যে কথাগুলো বলেছেন তা দেশবাসীর জন্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, দেশে আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষেরা এখন নিরাপদে চলাফেরা ও ধর্ম-কর্ম পালন করতে পারছেন না। পর্দানশীল নারীরাও চলতে-ফিরতে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। মুসলমানের এই দেশে হিজাব পরতেও তাদেরকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আমাদের দেশের পুলিশ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের লোকজন ধর্মপ্রাণ নাগরিক ও আলেমদের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে তাদের সন্দেহের চোখে দেখেন। একজন আলেম একা একা বা তার পরিবারকে সাথে নিয়ে পর্যন্ত বের হতে ভয় পান। তাকে নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তাকে আগে নিশ্চিত করতে হয় তিনি রাজনীতি করেন কিনা? কোন উগ্রবাদের সাথে আছেন কিনা? তা না হলে তাকে হয়রানি করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত একজন ছাত্রীকে হিজাব পরতে সংগ্রাম করতে হয়। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে এটা চলতে পারে না। আজকে আমেরিকা, ইউরোপে মুসলমানরা যেসকল সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে আমাদের মুসলমানের দেশে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এর চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে! ওইসব দেশে মার্কেট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সব জায়গায় মুসলমানরা নামাজ পড়ে। তাদের জন্য মসজিদ আছে, নামাজ ঘর আছে। বাংলাদেশের অনেক অফিস-আদালত এবং বিশ্ববিদ্যালয়েও সেই সুযোগ নেই। এসব নিয়ে মসজিদের ইমামরা কথা বলেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত ছাত্রীদের হিজাব পরতে দেয়া হয় না, মসজিদের ব্যবস্থা করা হয় না। আবার কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে মসজিদ থাকলেও শিক্ষার্থীরা নামাজ পড়তে যেতে ভয় পায়। মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে একজন ছাত্রীকে হিজাব পরার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। দৈনিক ইনকিলাব এটা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। এসকল প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার কোটি টাকা নাচ-গান থেকে শুরু করে যৌন শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ করে। কিন্তু দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী নামাজ ঘর নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে নামাজ ঘর থেকে ছাত্রীদের ধরে এনে পুলিশে দেয়া হয়।
ইনকিলাব সম্পাদক আরো বলেন, সারাবিশ্বে নানাবিধ সংঘাত-সংঘর্ষ ও সঙ্কট সমাধানের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এখনও প্রথমে ইমাম ও বড় বড় আলেমদের দ্বারস্থ হয়। কোনটা জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, ভালো-মন্দ এই বিষয়গুলোর তাদের কাছে পরামর্শ নেয়। বাংলাদেশে সাড়ে চার লাখ মসজিদে অন্তত: দশ লাখ ইমাম রয়েছেন। যাদের ইসলামের স্বার্থ ও মুসলমানদের স্বকীয়তা নিয়ে কথা বলার কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের কিছু ইমাম আল্লাহর চেয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি যারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অথবা থানার ওসিদের বেশি সমীহ করে কথা বলে। ইসলামের স্বার্থে, মুসলমানদের নিরাপত্তা ও আমাদের স্বকীয়তার জন্য যে কথা বলা দরকার ছিল সেটা আমাদের ইমাম সাহেবরা বলেন না। বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব থেকে শুরু করে বড় বড় আলেমেরও একই অবস্থা। এটা জাতির জন্য, মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এটা গভীরভাবে অবলোকন করছি। আগামী দিনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব অবশ্যই আলেমদের হাতে আসবে এবং এই দেশের দুর্নীতিবাজ, অস্ত্রবাজ, গুন্ডা চরিত্রের মানুষদের হাতে ক্ষমতা থাকবে না। আপনারা ভালো মানুষ তৈরি করছেন তাদের হাতেই ক্ষমতা আসবে। এজন্য কাজ করে যেতে হবে। আগামী দিনে সুনিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র হবে। কোন র্যাব-পুলিশ উগ্রবাদ দমনে ভূমিকা রাখছে না। উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ, নিরুৎসাহিত করছেন এদেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মপ্রাণ জনগণ। মানুষ মেরে যদি কোথাও নিয়ন্ত্রণ নেয়া যেতো তাহলে মধ্যপ্রাচ্য এখন পাশ্চাত্যের নিয়ন্ত্রণে থাকতো। সেখানে নানা অজুহাতে সম্প্রতি প্রায় ১৫ লাখ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। মানুষ হত্যা করলে নতুন নতুন ফিতনা ও সংঘাতের সৃষ্টি হবে, কিন্তু কোন সমাধান হবে না। বক্তব্যের এসব কথা ও বিষয় বাংলাদেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ নাগরিকের মনের ব্যথারই প্রতিধ্বনি। দেশের সব মত ও পথের লাখো আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ইসলামী নেতৃত্বের ভাবনার উচ্চারণ। ধর্মীয় ভাবধারার সাথে সমন্বয় আর ধার্মিকতার বহি:প্রকাশ এ দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নীতি। শাসক নেতৃবৃন্দও নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকারের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাহলে পদে পদে কেন মুসলমানদের ধর্মের অবমাননা করা হচ্ছে? কেন নানা কৌশলে চলছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার পাঁয়তারা? নতুন প্রজন্মের মাঝে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে কেন ছড়ানো হচ্ছে নাস্তিকতা, ধর্মবিদ্বেষ ও খোদাদ্রোহিতা। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে দুনিয়ার কোনো রাষ্ট্র কি রাষ্ট্রদ্রোহিতাকে মেনে নেবে? কোনো জাতি কি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে হীন কোনো কূটকৌশল ও চক্রান্তকে প্রশ্রয় দেবে? যদি না দেয়, তাহলে মুসলিম জাতি কেন তার বিশ্বাস ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে বাড়াবাড়ি, ধর্মবিদ্বেষ, খোদাদ্রোহিতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন মেনে নেবে? মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগে ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক, মুরতাদদের অপকর্মকে কোন্ যুক্তিতে প্রশ্রয় দেবে। ধর্মীয় অধিকার ও বিশ্বাসের পবিত্রতা রক্ষার স্বাধীনতা চেয়ে তারা কি পারে না রাষ্ট্রের কাছে আইনি এবং সামাজিক সহায়তা পাওয়ার দাবি তুলতে। রাষ্ট্র ও সরকারের নেতৃত্বে যারা যেখানেই আছেন তাদের অবশ্যই বাস্তবতা সম্পর্কে গভীর চিন্তা ও বিবেচনা করতে হবে। বুঝতে হবে তার জাতি ও জনগণ মূলত কী চায়। জনগণের মনস্তত্ত্ব ও আশা-আকাক্সক্ষা অনুধাবন করে খুব সতর্ক খেয়াল রাখতে হবে তাদের প্রতিও যারা শান্তির সমাজকে জাহান্নামে পরিণত করতে চায়। যারা ছোট্ট সুখের নিজস্ব এ জন্মভূমির বুকেও জ্বালাতে চায় বিশ্বজুড়ে লাগিয়ে দেয়া যুদ্ধ, হানাহানি ও অশান্তির অনিঃশেষ আগুন। দেশ, জাতি ও জনগণকে শান্তি-স্থিতি এবং সুখে রাখার ক্ষেত্রে শাসক-রাজনীতিক-দায়িত্বশীলদের ভূমিকা মোটেও কম নয়।