মঙ্গল ও বুধবার সারাদেশে হরতাল
কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সোমবার সকালে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রিভিউয়ের এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য ৩ সদস্য হলেন- বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
রবিবার একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে কামারুজ্জামানের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনটি আদেশের জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ১ নম্বরে ছিল।
২০১৩ সালের ৯ মে একাত্তরে সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের দায়ে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে গত বছর ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।
গত ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল মামলার চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনটি দাখিল করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। মোট ৭০৫ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বাতিল ও তার খালাস চেয়েছেন আসামিপক্ষ।
এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে ৪ বিচারপতির একই বেঞ্চ কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেন।
এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ ৩ বিচারপতি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেন।
মঙ্গল ও বুধবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে জামায়াত: আগামীকাল মঙ্গল ও বুধবার দেশব্যাপী দুদিনের হরতাল ডেকেছে জামায়াত। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ এক বিবৃতিতে এই হরতালের ডাক দেন।
বিবৃতিতে তিনি জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হত্যার সরকারি ষড়যন্ত্রের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সরকার জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে।
মকবুল আহমাদ মিথ্যা, সাজানো বায়বীয় অভিযোগে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সরকার ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। দলীয় লোকদের দিয়ে স্বাক্ষ্য প্রদান করিয়ে সরকার মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হত্যা করার জন্য মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার ব্যবস্থা করে।
তিনি বলেন, দেশবাসী আশা করেছিল রিভিউ আবেদনে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন। আদালতের প্রদত্ত রায়ে দেশবাসী হতাশ হয়েছে। ১৯৭১ সালে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। এ বয়সের একজন তরুণের বিরুদ্ধে সরকারের আনীত অভিযোগ কতো গভীর ষড়যন্ত্রমূলক তা সকলের কাছে স্পষ্ট!
মকবুল আহমাদ বলেন, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। সরকার জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে নেতৃত্বশূন্য করে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার যে ষড়যন্ত্র করছে দেশের জনগণ তা কখনো বাস্তবায়ন হতে দেবে না।
তিনি এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উপায়ে সফল করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সকল শাখা এবং কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সুশীলসমাজ ও পেশাজীবীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ তথা দেশের আপামর জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়।