কখনো দেখেছেন এত বড় শিলা

Strom2কুষ্টিয়ায় রোববার রাতে ঝড় এবং শিলা পড়ে হাজার হাজার একর জমির ফসলাদি নষ্ট হয়েছে এবং, ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
রোববার রাত ৩টার দিকে এই কাল বৈশাখী ঝড় শুরু হয়। এক ঘন্টার বেশি স্থায়ী এ ঝড় এবং বৃষ্টি শেষে মেঘের ভয়াবহ গর্জনের সাথে শিলা পড়তে থাকে। তবে এখানে যে শিলাগুলো পড়ে সচরাচর আমরা যেসব শিলা দেখি তা থেকে আকারে বেশ বড়। একেকটির ওজন কমপক্ষে তিন কেজি। সকাল ৮টা পর্যন্ত এলাকার সর্বত্র শিলা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
সদর উপজেলার উজানগ্রাম, আব্দালপুর, আলামপুর, আইলচারা ও ঝাউদিয়া উনিয়নের ৩ টির বেশি গ্রাম, মিরপুর উপজেলার হালসা, আমবাড়িয়া, কুর্শা, ছাতিয়ান এবং কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ও পান্টি ইউনিয়ন এলাকার অধিকাংশ গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যায় এই কাল বৈশাখী। ঘন্টাব্যাপী এই কালবৈশাখী ঝড় ও ভারী শিলাবৃষ্টি হয়। এতে হাজার হাজার বাড়ী ঘর, গাছপালা ও মাঠের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় বিদ্যুৎতের খুটি উপড়ে পড়াসহ তার ছিড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু শোয়েব খান জানান, রোববার ভোর রাত সাড়ে ৩ টার দিকে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলে আইলচারা ইউনিয়নের বাঘডাঙ্গা গ্রামের সোহরাব ফকিরের স্ত্রী নেহেরুন নেছার (৫০) শরীরের উপর ঘরের টিনের চালা ভেঙ্গে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নেহেরুন নেছা এ সময় ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলেন। অপরদিকে ভোর চারটার দিকে আব্দালপুর ইউনিয়নের দর্গাপাড়া গ্রামের রাহেলা খাতুন (৭০) ঝড় শুরু হলে আতংকে মৃত্যু বরণ করেন। প্রচন্ড ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে কুষ্টিয় সদর উপজেলার আইলচারা, উজানগ্রাম, ঝাউদিয়া ছাড়া এ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। কয়েক শত কাচা ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। একই সাথে সহস্রাধিক হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও মিরপুর উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের পূর্ণবাসনসহ সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা যায়নি।
Stromসদর উপজেলার চাপাইগাছি গ্রামের লুৎফর রহমান জানান-ঝড়ে আমাদের এলাকার অধিকাংশ কাঁচা বাড়ি ভেঙ্গে গেছে আর টিনের ঘরবাড়ির অবস্থা একই রকমের আর জমির ধান, সবজী, ভুট্রো, গম, পিয়াজের অবস্থা একেবারেই শেষ। ঝড়ের শেষে অল্প বৃষ্টিতে মেঘের ভয়াবহ গর্জন সেই সাথে বড় বড় শিলা বর্ষনে মনে হয়েছে এক পক্ষের যুদ্ধ। এ সময় ঘর ভাংগা মানুষেরা খোলা আকাশে সামান্য সময়ের জন্য দাড়াতে পারেনি। কেউ গাছের আড়ালে আবার কেউ ভাঙ্গা ঘড়ের মাঝেই আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন আমার জীবনে এত বড় বড় শিল কখন দেখিনি। তিনি আরো জানান- সকালে এলাকাবাসী বাড়ির উঠান এবং রাস্তার শিলা কোদাল ও বেলচা দিয়ে সরিয়েছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় ঘরে দেখা গেছে-বড় বড় শিলার আঘাতে অনেক টিনের ঘর ফুটা হয়ে ঘরের টিভি, ফ্রিজসহ অন্যান্য আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়েছে।
ষাটোর্ধো জয়নাল আবেদিন জানান জীবনে এত বড় শিল কখন দেখিনি। যখন শিলা পড়ছিল আর মেঘের বিকট গর্জন তখন আমরা অসহায় হয়ে আল্লাহর সহযোগিতা কামনা করি। সদর উপজেলার হাতিয়া গ্রামের আনোয়ার বলেন এলাকার অধিকাংশ টিনের ঘরের চাল( টিন) ফুটা হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে বন্দুকের ছররার গুলি মারা হয়েছে। এছাড়া এখানকার মানুষের সবচেয়ে বড় অর্থকারী ফসল পানের বরজ একটিও দাঁড়িয়ে নেই। এদিকে বাঁশ ঝাড় ও বাগানের মধ্যে শত শত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি মারা গেছে বলে তিনি জানান।
এলাকাবাসী জানায়-জীবনে এত বড় বড় শিল কখন দেখিনি। যখন মেঘের বিকট গর্জন আর শিলা বর্ষন হচ্ছিল তখন মনে হচ্ছিল একপক্ষের যুদ্ধ হচ্ছে। আর আমরা ছিলাম সম্পুর্ন অসহায়। এদিকে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এলাকার কৃষকেরা একেবারে পথে বসতে শুরু করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্যের কথা বলা হলেও দুপুর পর্যন্ত কোন সহযোগিতা পৌছেনি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button