কামারুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন : কবরে শোকার্ত জনতার ঢল
শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফন রোববার ভোর ৫ টা ২০ মিনিটে সম্পন্ন হয়েছে। কামারুজ্জামানের প্রতিষ্ঠিত শেরপুর সদর উপজেলার কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পাশের জমিতে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়। এর আগে রোববার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে এতিমখানা মাঠে তাঁর নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কামারুজ্জামানের ৪ থেকে ৫ জন আত্মীয়সহ শতাধিক মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। এ সময় আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। দাফনস্থলে গণমাধ্যম কর্মীসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ছিল।
শনিবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে সরেজমিনে জেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কুমরী বাজিতখিলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। রোববার ভোর ৪ টা ১৬ মিনিটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কামারুজ্জামানের লাশ কুমরী বাজিতখিলা গ্রামে এসে পৌঁছে। এ সময় তাঁর বড় ভাই মো. কফিল উদ্দিন প্রশাসনের নিকট থেকে লাশ গ্রহণ করেন। পরে কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানা মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাযায় ইমামতি করেন বাজিতখিলা দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ও কামারুজ্জামানের ভাগ্নি জামাতা মাওলানা আব্দুল হামিদ।
রোববার ভোর ছয়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা শিথিল করলে কামারুজ্জামানের কবরস্থানে কয়েক হাজার নারী-পুরুষের ঢল নামে। তাঁরা কামারুজ্জামানের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করেন। এ সময় শোকে কাতর এলাকাবাসীর আহাজারিতে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এলাকাবাসীর মাতম দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যের চোখও অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।
বাজিতখিলা ইউনিয়নের মধ্যকুমরী গ্রামের মজিবর রহমান (৪০) ও আব্দুল কুদ্দুস বলেন, তাঁরা নামাজে জানাযায় অংশগ্রহণের জন্য অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনুমতি না দেওয়ায় জানাযায় অংশ নিতে পারেননি।
বাজিতখিলা গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, কামারুজ্জামানের নামাজে জানাযায় অংশগ্রহণের জন্য কয়েক হাজার মানুষ এতিমখানার আশপাশে সমবেত হয়েছিলেন কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁদের জানাযাস্থলে আসতে দেয়নি।
কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পরিচালক নূরুল আমিন বলেন, জানাযায় শতাধিক মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
কামারুজ্জামানের বড় ভাই আলমাছ আলী (৬৮) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার ভাই কামারুজ্জামান ছিলেন নিরপরাধ ও নির্দোষ। বিচারের নামে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য যারা দায়ী আল্লাহর কাছে তাঁদের বিচার চাই।’
কামারুজ্জামানের আরেক বড় ভাই মো. কফিল উদ্দিন বলেন, তাঁর (কামারুজ্জামানের) ভাইয়ের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মরদেহ কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পাশে দাফন করা হয়।
এদিকে রোববার ভোর থেকে এ রিপোর্ট (সকাল সাড়ে ৮টা) লিখা পর্যন্ত বাজিতখিলা ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে ৯টি গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এসব জানাযায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জতউল্লাহ, ড. ছামিউল হক ফারুকী, শেরপুর জেলা আমীর ডা. মোহাম্মদ শাহাদত হোসাইন, জেলা সেক্রেটারী মাওলানা মো. হাফিজুর রহমানসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন।
দাফনস্থলে কর্তব্যরত গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে শেরপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিরাপত্তাজনিত কারণে সাময়িকভাবে সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।