কোনো দলই ভোটারদের মধ্যে সাড়া ফেলতে পারেনি
কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে অনিশ্চয়তাপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে ব্রিটেনে। আগামী ৭ মে ব্রিটিশ ভোটাররা যখন ভোট দিতে যাবেন তখনও তাদের মধ্যে থাকবে নানা রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বেশির ভাগ বিশ্লেষকই মনে করছেন, কোনো দলই এতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। ফলে আরেকটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পাবে ব্রিটিশরা। সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, প্রধান দুই দল শ্রমিক ও রক্ষণশীল দল প্রায় ৩৫ শতাংশ করে ভোট পাবে। তাদের মধ্যে পার্থক্য মাত্র ০.২ শতাংশ। তবে এই নির্বাচনে একমাত্র নিশ্চিত যে বিষয় তা হলো, রক্ষণশীল নেতা ডেভিড ক্যামেরন কিংবা তার শ্রমিক দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী এড মিলিব্যান্ডই হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। তবে তাদের কোয়ালিশনে কোন দল কী দামে যোগ দেবে তা নিছকই অনুমানের বিষয়। ব্রিটেনে কেন এমন অনিশ্চয়তাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো? বিশ্লেষকদের মতে, এর কারণ তিনটি।
প্রথম কারণ হলো, ১৯৭০-এর দশক থেকে শ্রমিক ও রক্ষণশীল উভয় দলের সমর্থনই ধীরে ধীরে কমেছে। ১৯৫০-এর দশকে এই দুই দল ৯০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেত। ১৯৭৯ সালে তাদের ভোট নেমে আসে ৮০ শতাংশের নিচে। আর ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে তা ছিল মাত্র ৬৫ ভাগ। এবার আরো কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নির্বাচনের বাকি আছে এক মাস। এই সময়ের মধ্যে কোনো দলই বিপুল ভোট টানতে পারবে, এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। প্রধান দুই দলের কেউই ভোটারদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলার মতো কিছু করতে পারেননি। ব্রিটেনে অতি সম্প্রতি অর্থনৈতিক যে গতিশীলতা দেখা দিয়েছে, তা থেকে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীলেরা তেমন সুবিধা আদায় করতে পারছে না। অথচ এটাকেই তারা নির্বাচনে জয়ের ভিত্তি হিসেবে ধরে নিয়েছিল। না পারার কারণ, ব্রিটেনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার থেকে গুটিকতেক ধনী লাভবান হচ্ছে। আর গত পাঁচ বছর রক্ষণশীলদের কৃচ্ছ্রনীতিতে যারা ক্ষিতগ্রস্ত হয়েছে, তারা কোনোই উপকার পাচ্ছে না। অন্য দিকে বিরোধী মিলিব্যান্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে, কিন্তু তারপরও তিনি ক্যামেরনের চেয়ে পিছিয়ে আছেন। গরিব ভোটারদের কাছে শ্রমিক দল এখনো অনেক আস্থাভাজন। তা ছাড়া অভিবাসী ভোটাররাও শ্রমিক দলের পেছনে আছে। এই দুই গ্রুপের ওপর ভর করে শ্রমিক দল ভালো কিছু করার আশা করতেই পারে। তবে ২০০৮ সালে তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনকার অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং এর ফলে সৃষ্ট ব্যাংক উদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। ওই সমস্যা এখনো তাদের ভোগাচ্ছে।
দ্বিতীয় আরেকটি কারণে প্রধান দুই দল ভোট কম পাচ্ছে। তা হলো, দেশটিতে ছোট ছোট দলের আবির্ভাব। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি), ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি (ইউকেআইপি) ও গ্রিনরা সম্মিলিতভাবে ২০ শতাংশ ভোট টানবে। অথচ ২০১০ সালের নির্বাচনে তারা মোট মাত্র ০৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। শ্রমিক ও রক্ষণশীল উভয় দলের কাছ থেকেই ভোট ছিনিয়ে নেবে ইউকেআইপি। স্বঘোষিত ইইউবিরোধী, প্রতিষ্ঠানবিরোধী জনগণের দল ইউকেআইপি যারা সাধারণত ভোট দেয় না, তাদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। ইউকেআইপি-আচ্ছন্ন মিডিয়ার সমর্থন নিয়ে দলটির নেতা নাইজেল ফারাগে নীরবে অভিবাসন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের সদস্যপদের বিষয়টিকেও নির্বাচনী ইস্যুতে পরিণত করছেন। এর ফলে ক্যামেরনের জন্য সমস্যা বাড়বে।
তৃতীয় কারণটি হলো, লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের জনপ্রিয়তা দুই-তৃতীয়াংশ কমে যাওয়া। ২০১০ সালের নির্বাচনের পর তারা ডেভিড ক্যামেরনের শিবিরে যোগ দেয়। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো ব্রিটেনে কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়।