নতুন দিনের বার্তা নিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলা নববর্ষ
মঙ্গলবার পহেলা বৈশাখ। পঞ্জিকার শাসনে মাসের নামটি অপরিবর্তনীয় থাকলেও এসেছে বাংলা নববর্ষ। খোশ আমদেদ ১৪২২ বঙ্গাব্দ। পুরনো জীর্ণ, হতাশা-ব্যর্থতা, তথা ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের তাবৎ অমানিশা উতরে সহজাত সুন্দরের প্রয়াস সবার। নতুন দিন, নতুন বছরের সাথে নতুন স্বপ্ন-প্রত্যাশায় জাল বুনছে জাতি। রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে মঙ্গলের বার্তার প্রতীক্ষা সকলের। উদ্ভূত আঁধার কেটে যাক, আসুক আলো, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি টুটে যাক বৈশাখের উৎসব মুখরতায়। গণপ্রার্থনা পেয়েছে কাব্যরূপও- “মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা/অগ্নি ম্লানে শুচি হোক ধরা।” সত্য-সুন্দরের সম্ভাবনায় শুরু হোক নতুন বছর ,নতুন দিন। নতুন দিনের বার্তা নিয়ে, নতুন আশা, নতুন ভাষা, নতুন স্বপ্ন এবং উদ্দীপনা নিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। জাতীয় জীবনের সকল ব্যর্থতা, দৈন্যতা আর গ্লানি কাটিয়ে ওঠার প্রত্যয়ে আমরা সকলে মিলিত হতে চাই নতুন করে প্রাণের উৎসবে। জাতীয় কবি নজরুল যেমন বলেছেন-
“তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্-বোশেখীর ঝড়।।”
নজরুল স্বয়ং ছিলেন বৈশাখের প্রতীক । তিনি নিজেই কালবৈশাখীর মত আবির্ভুত হন বাংলা কবিতায় । স্বয়ং কবি নিজেই তার বিখ্যাত কবিতা “বিদ্রোহী”তে ঘোষণা করেছেন – “আমি ধূর্জটি , আমি এলোকেশে ঝড় অকালবৈশাখীর ”
কালবৈশাখী বলতে আমরা দুরন্ত ঝড়কেই বুঝি । কোন গতিশীল ধবংসাত্বক বিষয়ের উপমা দিতে তাই কবিরা উল্লেখ করেন কালবৈশাখীর । নজরুল এর ‘ভাষার গান’ এ দেখি-
“নাচে ঐ কালবৈশাখী
কাটাবি কাল বসে কি ?
দেরে দেখি
ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি ।”
বৈশাখ পুরাতনের বিদায় ও নবীন বরণ মাস । বৈশাখ আসে ঝড় নিয়ে, বিদায় হয় ধবংসের সহযাত্রী হয়ে। বৈশাখ সাহসী, ক্ষ্যাপা,বৈরী , অশান্ত, অসীম, মারমুখো, নির্দয়।কিন্তু তার সৃজনক্ষমতা শিল্পীর সুনিপুন সৌকর্যকে হার মানায়, তার নতুন করার পালা তার নবায়নী ধারা প্রকৃতির সকল পারক্ষমকে হার মানায়। কবিগুরু বৈশাখকে আহবান করেনঃ
“এসো হে বৈশাখ ! এসো এসো,
তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা
রসের আবেশ রাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।”
“এসো হে বৈশাখ ! এসো এসো,
তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা
রসের আবেশ রাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।”
প্রকৃতির সাথে জীবনের এক অদ্ভুত মেল বন্ধন দেখা যায়। ঝড়ের পূর্বে অস্বস্তিকর এক গুমোট আঁধার প্রকৃতিকে আচ্ছন্ন করে। এই গুমোট আঁধার কিন্তু ঝড়ের পূর্বাভাস। আমাদের জাতীয় জীবনেও মাঝে মাঝে এ ধরনের অস্বস্তিকর অন্ধকার ঘনিভূত হতে দেখা যায়। এক ধরনের চরম স্থবিরতা আর অস্বস্তি আমাদেরকে ঘিরে ধরে। কিন্তু এই গুমোট অবস্থা চিরস্থায়ী নয়। পরিবর্তন অনিবার্য। নতুন দিন ও পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে কালবৈশাখী ঝড় আসবেই।
এদিকে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিশ্বের সব বাংলাভাষী মানুষকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।