অমানবিক আচরণের শিকার আটক ইমিগ্রেন্টরা
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষার অগ্রদূত হয়ে কাজ করে ব্রিটেন। গণতন্ত্র আর আইনের শাসনের কারণে অন্যরকম খ্যাতি আছে দেশটির। কিন্তু যারা ভয়ঙ্কর মৃত্যুকুপ থেকে ব্রিটেনে এসে প্রাণে বাঁচার ঠাই খুঁজছেন কিংবা নতুন জীবন গড়তে কঠোর পরিশ্রম করে ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন, তাদের প্রতি আধুনিক ব্রিটেনের আচরণ কতটা মানবিক? সুবিশাল দেয়ালে ঘেরা ব্রিটেনের ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে থাকার অভিজ্ঞতা যাদের হয়েছে তারাই সম্ভবত সবচেয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারবেন ওই কৌতুহলের।
বেডফোর্ডশায়ারের আর্লস উড ডিটেনশন সেন্টারে স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে বন্দি আছেন বয়োজ্যেষ্ঠ এক বাংলাদেশি। তিনি জানান, তাদের যে অবস্থায় রাখা হয়েছে তা কারাগারের চাইতেও খারাপ। তাঁর মতে, আধুনিক ব্রিটেন ইমিগ্রেন্টদের প্রতি যে আচরণ করছে তা তৃতীয় বিশ্বের অত্যাচারী শাসকদের আচরণকেও হার মানায়।
তিনি বলেন, ডিটেনশন সেন্টারের পরিবেশ শুধু নয়, তাদের যে কূটকৌশল চালিয়ে আটক করা হয়েছে তাও রীতিমত অমানবিক শূধু নয়, যেকোনো বিবেচনায় এটা ব্রিটেনের বিদ্যমান আইনের চরম লঙ্ঘণ।
তিনি জানান, ব্যবসায়িক দ্বন্ধ আর রাজনৈতিক আদর্শের কারণে বাংলাদেশে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের জীবন হুমকিতে পড়ে। সে কারণে তারা ব্রিটেনে এসে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় চান। গত কয়েক বছর যাবত তাদের আবেদন হোম অফিসের পড়ে ছিলো। এই সময়ে তারা নিয়মিত হোম অফিসের কাছে হাজিরা দিতেন। তারা নিজেরা পরিশ্রম করে চলতেন, কিন্তু সরকারের কাছে কোনো ভাতা দাবি করেননি। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে হোম অফিসে হাজিরা দিতে গেলে তারা একটি রিফিউজাল লেটার ধরিয়ে দিয়ে বলে, গত জানুয়ারি মাসে নাকি তাদের আবেদন রিফিউজ করা হয়েছে। হোম অফিসের কর্মকর্তা আরো দাবি করে, পোর্স্ট মারফত তারা রিফিউজাল লেটার পাঠিয়েছে। বাস্তবতা হলো, হোম অফিস কোনো রিফিউজাল লেটার পাঠায়নি। কারণ হোম অফিস যখন রিফিউজাল লেটার পাঠিয়েছে বলে দাবি করছে তার পরও তারা হোম অফিসে গিয়ে হাজিরা দিয়ে এসেছেন। কিন্তু সে সময় তাদের কিছু বলা হয়নি। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে হাজিরা দিতে গেলে তারা সবাইকে একসঙ্গে আটক করে এবং একটি রিফিউজাল লেটার ধরিয়ে দেয়।
শুধু এই বয়োজ্যেষ্ঠ বাংলাদেশিই শুধু নন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরো একাধিক ব্যক্তি আর্লস উড ডিটেনশন সেন্টারে আটক আছেন যারা একই রকম অভিযোগ করেছেন। ওয়ার্ক পারমিটে থাকা এক ব্যক্তিতে হোম অফিস ডেকে নিয়ে আটক করেছে। অভিযোগ- তিনি স্টুডেন্ট ভিসায় থাকা অবস্থায় ইংরেজী সনদে জালিয়াতি করেছিলেন। সাক্ষাতকার নেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে তাকে আটক করা হয়। এরপর তার স্ত্রীকেও ডেকে নেয়া হয়। ইমিগ্রেন্টদের এভাবে আটকের প্রক্রিয়া কতটুকু যৌক্তিক? ইমিগ্রেন্টদের অধিকার নিয়ে কাজ করা জেসিডব্লিউআর-এর প্রধান নির্বাহী হাবিবুর রহমান বলেন, হোম অফিস আইনের উর্ধে নয়। তারা কীভাবে কাজ করবেন সে বিষয়ে সুর্নিষ্ট আইন রয়েছে। কিন্তু এসব ব্যক্তির অভিযোগ শুনে মনে হচ্ছে হোম অফিস আইনের কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করে ইমিগ্রেন্টদের আটক করছে। ডিটেনশন সেন্টারের পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ডিটেনশন সেন্টারের পরিবেশ নিয়ে তারা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। বিশেষ করে শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের আটক রাখা এবং অনির্দিষ্ট সময় বন্দি করে রাখার বিষয় নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রতিটি ইমিগ্রেন্টকে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করর সুযোগ দেয়া উচিৎ। এটা তাদের মানবিক অধিকার। হাবিবুর রহমান আরো বলেন, শখ করে কেউ অন্যের দেশে আশ্রয় চায় না। বিশ্বের দেশে দেশে যে নিরাপত্তাহীন সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে প্রাণে বাঁচতে মানুষ আশ্রয় প্রার্থণা করে। কিন্তু কোনো প্রকারের আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ইমিগ্রেন্টদের বন্দি করে রাখা চরম অন্যায়।
বয়োজ্যেষ্ঠ ওই বাংলাদেশি বলেন, রিমুভাল সেন্টারগুলোর প্রধান পরিদর্শক একটি দল নিয়ে আর্লস উড সেন্টার পরিদর্শন করেন। তিনি আটক ব্যক্তিদের কথাবার্তা শুনেন। তিনি আরো জানান, সম্প্রতি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বক্তব্য দিয়ে ডিটেনশন সেন্টারের পরিস্থিতি তুলে ধরার কারণে দুইজনকে জোর পূর্বক দেশে প্রেরণ করা হয়েছে।
ডিটেনশন সেন্টারের পরিবেশ এবং বন্দিদের প্রতি আচরণ নিয়ে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন। ওই তদন্ত আদৌ শুরু হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানা যায়নি।
আটক বাংলাদেশিরা বলেন, তারা আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ চান। যেহেতু তারা নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছিলেন, তাদেরকে রিমুভাল সেন্টারে আটক রাখার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।